এক যুগের সফল ধারাবাহিকতায় এবার আরো ব্যাপক পরিসরে ১৩তম লণ্ডন বাংলা বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিলেতের বাংলা ভাষাভাষি লেখক-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকসহ বইপ্রেমীদের প্রাণের এই মেলা তথা উৎসব হবে তিন দিনব্যাপী। তবে তিন দিনের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ অক্টোবর মেলা বসবে পূর্ব লণ্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে এবং ১৭ অক্টোবর হবে বিপুলসংখ্যক বাঙালি অধ্যুষিত বৃটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি বার্মিংহামে। পুরো বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে সফল ও উৎসবমূখর করে তুলতে সবার স্বতঃস্ফূূর্ত উপস্থিত কামনা করা হয়েছে।
বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে সর্বাত্মক সফল করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজক সংস্থা লণ্ডন বাংলা বইমেলা উদযাপন পর্ষদের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং লণ্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতা অনুষ্ঠিতব্য এবারের বইমেলা ও সাংস্কৃতি উৎসবে অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ও বৃটেনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকার পাশাপাশি অনেকগুলো বাংলাদেশী প্রকাশনা সংস্থা তাদের প্রকাশিত বিপুলসংখ্যক বই নিয়ে মেলায় অংশ নেবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সাংস্কৃতিক উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তুলতে কবিতা আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা পাঠ, গান এবং শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন রাখা হয়েছে বলেও জানানো হয়। বিশেষ করে উৎসব মাতিয়ে রাখতে আমন্ত্রিত হয়ে আসছেন সঙ্গীত ভূবনের অন্যতম প্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত কণ্ঠ মৌসুমী ভৌমিক এবং বিশিষ্ট আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ। আর অতিথিদের তালিকায় আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গহর রিজভী, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এম খালিদ এমপি, সাবেক মূখ্যসচিব কবি কামাল চৌধুরী, লণ্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দা মুনা তাসনিম, বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।
গত ১১ অক্টোবর, মঙ্গলবার পূর্ব লণ্ডনের মাইক্রো—বিজনেস সেন্টারে আয়োজি এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের বিস্তারিত কর্মসূচী তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লণ্ডন বাংলা বইমেলা উদযাপন পর্ষদের সদস্যসচিব, ছড়াকার দিলু নাসের। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মেলা উদযাপন পর্ষদের প্রধান সমন্বয়ক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম মোস্তফা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মেলা উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক যথাক্রমে কবি মাশূক ইবনে আনিস, সঙ্গীতশিল্পী হিমাংশু গোস্বামী, কবি শামীম শাহান ও কবি হাফসা নূর। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মেলা কমিটির উপদেষ্টা এডভোকেট কবি মুজিবুল হক মনি, মেলা কমিটির সমন্বয়ক যথাক্রমে সাংবাদিক মিসবাহ জামাল, কবি ফয়জুর রহমান ফয়েজ, সঙ্গীতশিল্পী ফজলুর রহমান বাবু, কমিউনিটি একভিস্ট জামাল খানসহ অনেকে।
বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে আলোকিত করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করে বক্তারা বলেন, এধরনের বইমেলা ও উৎসব নিজেদের সাংস্কৃতিক বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে। এধরনের অনেকগুলো মেলা ও উৎসবে কোনো অসুবিধা নেই মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, আমাদের সাহিত্য—সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়াই আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য এবং আমরা চাইÑ এসবের মাধ্যমে দেশপ্রেম জাগ্রত হোক। তৃতীয় বাংলা খ্যাত বিলেতে এখন আর বাংলা বইয়ের দোকান নেই উল্লেখ করে তারা বলেন, বেশী বেশী বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের মাধ্যমেই বইপ্রেমীদের কাক্সিক্ষত বইটি পাওয়ার সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে এবারের বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব সফলে ইতোমধ্যে গঠন করা উপদেষ্টা কমিটি, সমন্বয় কমিটিসহ বিভিন্ন উপকমিটিতে থাকা ব্যক্তিবর্গের দীর্ঘ নামের তালিকা পড়ে শোনান মেলা কমিটির সদস্যসচিব ছড়াকার দিলু নাসের। তাতে দেখা গেছে যে, ওইসব কমিটিতে বিলেতের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে প্রধান সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা বলেন, বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে ২০১০ সালে লণ্ডন বাংলা বই মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু হয়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন, কবি-সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিককর্মীসহ নানা পেশার বাঙালিরা এসব উৎসবের আয়োজক ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সাল থেকে লণ্ডন বাংলা বইমেলা নামে নতুন রূপে এর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এবার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০টি প্রকাশনা সংস্থা মেলায় অংশ নেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেলার সার্বিক সহযোগিতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতি, বাংলাদেশ হাইকমিশন লণ্ডন।
দুই দিনের বিস্তারিত কর্মসূচী এবং সময়-ক্ষণ তুলে ধরে বলা হয়, প্রথম দিন ১৫ অক্টোবর, শনিবার মেলা শুরু হবে দুপুর ২টায় এবং এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে বিকেল সাড়ে টায়। উদ্বোধনী সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নেবেন প্রখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী মৌসুমী ভৌমিকসহ বিলেতের খ্যাতনামা শিল্পীরা। বিকেল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের রয়েছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। দ্বিতীয় দিন ১৬ অক্টোবর, রোববার মেলা শুরু হবে দুপুর ১২টায় এবং উন্মোক্ত থাকবে রাত ৯টা পর্যন্ত। ওইদিন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় থাকবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, তাল-তরঙ্গ এবং অংশ নেবেন স্থানীয় বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীবৃন্দ। সাহিত্য সংগঠন গ্রন্থী, শিকড় এবং আবৃত্তি সংগঠন বর্ণনের পরিবেশনায় থাকবে বিশেষ অনুষ্ঠান। এছাড়া রোববার দিনব্যাপী আলোচনাসহ স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনা থাকবে।