বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
ধর্মীয় উগ্রবাদ ঠেকাতে না পারলে ফের গণতন্ত্রের কবর হবে: তারেক রহমান  » «   জাতীয় পার্টির ইফতারে হামলা: দেশ ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে, এই সরকার দ্রুত বিদায় নিলেই মঙ্গল: জি এম কাদের  » «   আবার ‘জিয়া উদ্যান’ হলো ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’  » «   বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিসৌধে বাবার নাম ‘চান না’ সিলেটের আতাউর  » «   মহাসড়কে প্রবাসী গাড়ি টার্গেট করে ডাকাতি : নজরদারি বাড়ানের দাবি, অতিরিক্ত ৭০০ পুলিশ মোতায়েন  » «   রাজধানীতেই আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়! অনুমোদন পেল ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’  » «   আরসা প্রধান জুনুনিকে গ্রেপ্তারের দাবি র‌্যাবের  » «   হিন্দুদের ওপর আক্রমণ ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক: মার্কিন সিনেটরকে প্রধান উপদেষ্টা  » «   দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলসেতুর উদ্বোধন  » «   বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন: তুলসী গ্যাবার্ড  » «   রেমিটেন্সের নামে এক ব্যক্তি এনেছেন ৭৩০ কোটি টাকা!  » «   সিলেটে ভালোবাসায় সিক্ত হামজা চৌধুরী, বললেন, ‘ইনশাল্লাহ আমরা উইন খরমু’  » «   এমসি কলেজে ধর্ষণের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেই  » «   জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এক ঢিলে তিন পাখি  » «   অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের আরেকটি দল আসছে, নেতৃত্বে শিবিরের সাবেকরা  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

ব্রিটেনে ঈদের ছুটি  প্রসঙ্গে



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

 যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে ঈদের জন্য ছুটি নির্ধারিত আছে । শিক্ষার্থীরা দুটো দিন অনুমোদিত ছুটি নিতে পারে, কিন্তু স্কুল খোলা থাকে । আমেরীকায় নিউইয়র্কের স্কুলগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে (অফিসিয়ালি) ঈদের দিনে ছুটি দেয়া হয় । আর সেজন্য আমরা যদি নিজেরা এই ছুটির সাথে একাত্ন হতে না পারি, তাহলে স্থানীয়ভাবে অর্থাৎ সরকারের কাছে এ দাবী উত্থাপনের কোন সুযোগ সৃষ্ঠি হবে না ।

ঈদ মুসলিম জনগুষ্ঠির জন্য একটা আনন্দঘন দিন। প্রতিটি মুসলমান পবিত্র এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে প্রতিবছর । সন্তান-পরিবার-স্বজন-সজ্জনদের সাথে সময় কাটানোর আকাংখা থাকে এ দিনটাতে মানুষের। ঈদের দিনগুলো একটা বৈচিত্র নিয়ে আসে পোষাকে কিংবা খাবারে। দল বেঁধে নেইবার কিংবা প্রতিবেশীদের সাথে কোলাকোলি কিংবা কোশল বিনিময়ের চিরচেনা চিত্রটি নিয়ে আসে ধর্মীয় মূল্যবোধের এক চিরন্তন বার্তা এই অভিবাসেও। দিন উজ্জল হলে খোলা মাঠে (পার্কে) ঈদের নামাজের আয়োজন হয় লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরে । তাছাড়া প্রতিটি মসজিদেই থাকে অন্তত তিনবার নামাজ পড়ার নির্ধারিত সময় । বৈচিত্রময় পোষাক পরে এখানে বেড় উঠা শিশু কিশোর-কিশোরীসহ প্রায় সবাই । আনন্দে উদ্বেল থাকে মানুষ । ঈদের দুটো দিনের এই উৎসবকে এদেশে বেড়ে উঠা প্রজন্ম ধর্মীয় উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেও এটা তাদের জীবনের অপরিহার্য সংস্কৃতি হিসেবে ধারন করে ফেলেছে ।

কিন্তু এই চিরন্তন চিত্রটির মাঝেও আছে চাপা এক চিরচেনা মুখ বেজার করা চিত্র এই ব্রিটেনে। দেশটিতে বাস করা অর্ধমিলিয়ন’র চেয়ে বেশী বাংলাদেশী বংশদ্ভোত মানুষের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষের মাঝেই থাকে এক চাপা কান্না কিংবা মুখ ভার করে থাকা দির্ঘশ্বাস । এই দীর্ঘশ্বাসটাও মূলত আমাদের কমিউনিটির ব্যবসায়িদের ঘিরেই । এখানে যদি একটু ব্যাখ্যা করা যায়, তাহলে বেরিয়ে আসবে আমাদের কতিপয় মানুষগুলোর লোভ কিংবা ধর্মীয় মূল্যবোধহীনতার চিত্র ।  বারো হাজারেরও  অধিক রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা আছে এই ব্রিটেন বাংলাদেশী মালিকানাধীন । এই রেষ্টুরেন্টগুলোর সবগুলোই যে খুব ভাল ব্যবসা করে তা নয়, আর সেকারনে অধিকাংশ রেষ্টুরেন্টেই মালিকরা নিজে ফুলটাইম কাজ করেন। অর্থাৎ রেষ্টুরেন্টের পরিচালক-মালিক মিলে এতে কাজ করেন কম হলেও ৭০ হাজারের মত মানুষ । ৭০ হাজার মানুষের পরিবারে আছে কম করে হলেও ৩ লাখ মানুষ। এবং আরেকটা সত্য কথা হল এই মানুষগুলোর মাঝে ৯৫ শতাংশ মুসলিম জনগুষ্ঠির। কিন্তু বাংলাদেশী এবং মুসলিম জনগুষ্ঠির ‘গাভনার'(পরিচালক-মালিক) হয়েও তারা নিজেদেরকে বঞ্চিত রাখেন তাদের নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতির উৎসবের আমেজ থেকে ।  অর্থাৎ অর্ধ মিলিয়ন বাংলাদেশীরা তাঁদের সবচেয়ে প্রিয় এবং আনন্দের দিনে  তাঁর স্ত্রী-সন্তান কিংবা আত্নীয়দের সাথে সময় দিতে পারেন না । রেষ্টুরেন্টরে মালিক বলেন কিংবা কর্মী বলেন রুদ্ধশ্বাসে দৌড়োতে হয় দিনটির বিকেল বেলায়, কাজের জায়গায় । স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ করা বিষন্ন মুখ নিয়ে সেদিন সার্ভিস পেতে হয় রেষ্টুরেন্ট গ্রাহকদের ।

বিশ্বময় মানুষের কল্যাণ কামনায় ব্রিটেনের দুই মিলিয়ন’র মত মুসলমানও এই দুটো দিনে সুখ-সমৃদ্ধি আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে নিজেদের একীভূত করতে চান। কিন্তু কাজের যাঁতাকলে বিকেল হবার আগেই এ আনন্দ কেটে যায় ।  সকালে ঈদের নামায শেষে অনেককেই যেতে হয় নিত্যদিনের গন্তব্যে ।

অথচ বাংলাদেশী মালিকানাধীন প্রতিষ্টানগুলোতে কাজ করা ৭০ হাজার বাংলাদেশীদের ঐ প্রতিষ্ঠানে মানুষগুলো চাইলেই বছরে এ দুটো দিন ছুটি দিতে পারেন । শুধুমাত্র সদিচ্ছা, সামাজিক কিংবা ধর্মীয় মূল্যবোধের দায় থেকে তাঁরা এ কাজটি করতেই পারেন । এমনকি যদি মালিকপক্ষের  কেউ যদি মনে করেন, এ দুটো ছুটিতে বাড়তি একদিনের অর্থ তাদের বহন করতে হবে । তখন এ ছুটিকে তাঁরা তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনের অন্তর্ভূক্ত করে নিতে পারেন।

‘যুক্তরাজ্যে ঈদে ছুটি চাই’ শ্লোগোনে ব্রিটেনের দুটো গণমাধ্যম যৌথভাবে একটা সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছে। ৫২বাংলাটিভি এবং সাপ্তাহিক পত্রিকার উদ্যোগে ইতিমধ্যে আলতাব আলী পার্কে সমাবেশ হয়েছে, চলছে গণসংযোগ পাঁচ শতাধিক মানুষ এ আন্দোলনে শরীক হয়ে সারা দেশটিতে ছড়িয়ে দিয়েছে এ সচেতনতার বার্তাটি ।  এতে সংযুক্ত হয়েছেন জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে এমনকি ক্যাটারিং এর সাথে সংযুক্ত বড় বড় ব্যবসায়িরাও । একটা ব্যাপক সাড়া আছে এ আন্দোলনে । একটা কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে ঈদের জন্য ছুটি নির্ধারিত আছে । শিক্ষার্থীরা দুটো দিন অনুমোদিত ছুটি নিতে পারে, কিন্তু স্কুল খোলা থাকে । আমেরীকায় নিউইয়র্কের স্কুলগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে (অফিসিয়ালি) ঈদের দিনে ছুটি দেয়া হয় । আর সেজন্য আমরা যদি নিজেরা এই ছুটির সাথে একাত্ন হতে না পারি, তাহলে স্থানীয়ভাবে অর্থাৎ সরকারের কাছে এ দাবী উত্থাপনের কোন সুযোগ সৃষ্ঠি হবে না ।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ব্রিটেনের ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস দিনে কিংবা তার পরের দিন বক্সিং ডে তে সকল রেষ্টুরেন্টে সমান ব্যবসা হয় না। কোন কোন রেষ্টুরেন্ট ক্রিসমাস ডে তে দিনের বেলায় খোলা হয়, শুধুমাত্র পূর্বনির্ধারিত (বুকিং) ক্রেতাদের আপ্যায়ন করতে । এবং বলতে গেলে বক্সিং ডে তে থাকে রেষ্টুন্টেগুলো একদম শূন্য । বাস্তবতার বিবেচনায়ই সেদিন অনেকেই রেষ্টুরেন্ট বন্ধ রাখেন ।

 জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে এই অভিবাসে আমাদের চ্যালেন্জ আছে হয়ত, কিন্তু এদেশের বাস্তবতায় বছরে দুটো দিনের ছুটিতে যে কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কিংবা কর্মীরা কোন ঝুঁকিতেই পড়বেন না বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তাই ঈদের দুটো দিনে ছুটি দিতে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এগিয়ে আসবেন,  এই আশাটুকু করা যায় । বলা যায়, বাংলাদেশী তথা মুসলিম জনগুষ্ঠির ব্যবসায়ীরা যদি এ কাজে এগিয়ে আসেন, তাহলে জাতিয়ভাবেও এ দাবী উত্থাপনের যৌক্তিকতা পাওয়া যাবে ।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক, প্রধান সম্পাদক; ৫২বাংলাটিভি ডটকম

আরও পড়ুন-

মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবাদ এবং সাধারণ জনগণ

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক