শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে এখন আমরা কী নির্মাণ করছি?  » «   ডলার খোলাবাজারে : দাম অস্বাভাবিক বাড়লে কী হবে?  » «   নির্বাচন নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ কেন?  » «   আওয়ামী লীগ নিয়ে খবর প্রকাশ বা সোশাল মিডিয়ায় লেখাও কি নিষেধ?  » «   জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছে, জেনোসাইড হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর  » «   ভুয়া ‘জুলাই যোদ্ধা’র হাতে সরকারি অনুদানের চেক  » «   কে জিতল—ভারত, না পাকিস্তান?  » «   আওয়ামী লীগের ‘কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা’র মানে কী?  » «   বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের আমদানি বাড়বে, কমবে শুল্ক  » «   আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞার ফল কী? জামায়াতের বিচার নিয়ে প্রশ্ন  » «   পা দিয়ে লিখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় মানিক  » «   এখন লড়াই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে: ফরহাদ মজহার  » «   ইতালিতে ‘জিহাদি উসকানি’র অভিযোগে দুই বাংলাদেশি যুবক আটক  » «   ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামলো কীভাবে, টিকবে কতদিন  » «   আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত, ৭১-এর পর দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ হলো  » «  

ঈদের সামাজিক গুরুত্ব ও বিলাতে ঈদের ছুটি 
বদরুজ্জামান বাবুল



ঈদ হলো মুসলমানদের ধর্মীয় রীতি নীতির অনুসরণে এক পবিত্র বিনোদন।যেখানে হাসি খুশী, আনন্দ উপভোগ সবই আছে, তবে সবকিছুর মধ্যেই একটি ধর্মীয় পবিত্র ভাব আচ্ছে, যার আনুষ্ঠানিক শুরুটাই হচ্ছে পবিত্র ঈদের নামাজ দিয়ে।

আমরা সবাই জানি, ঈদ মানে আনন্দ; ঈদ মানে খুশি। ঈদের সামাজিক অর্থ উৎসব আর আভিধানিক অর্থ পুনরাগমন বা বারবার ফিরে আসা যাকে আমরা বলি ঈদ-উল-ফিতর বা রোজার ঈদ, আর অন্যটি আত্মত্যাগের কুরবানীর ঈদ বা ঈদ-উল-আযহা।

ঈদ একটি ইবাদাত। আনন্দ ও ফূর্তি করার মাধ্যমেও যে ইবাদাত পালন করা যায়, ঈদ তার অন্যতম উদাহরণ। শরীয়তসম্মতভাবে আনন্দ প্রকাশ করার বিষয়ে কুরআনে এসেছে, ‘বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত; সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।’ (সুরা ইউনুস-১০ আয়াত : ৫৮)

ভাবগাম্ভির্যপূর্ণ, সুনসান নীরব পরিবেশ ভেঙ্গে, মাঝে মধ্যে বিনোদন ও কোলাহলের দিকে ছুটে চলা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত। কেমন যেন সৃষ্টিকর্তা মানুষের ভেতর এ রকম একটা ভাব দিয়ে রেখেছেন। এ জন্য পৃথিবীর সকল মানব গোষ্ঠির উৎসব রয়েছে। এমন কোনো জাতি গোষ্ঠি পাওয়া যাবে না, যাদের চিত্তবিনোদনের জন্য উৎসব নেই; ধর্মীয় ইবাদত-বন্দেগীই যাদের কাজ। হাদিস থেকেও এর প্রমাণ মেলে। নবী করীম (সা.) বলেন, প্রত্যেক জাতির চিত্তবিনোদনের জন্য ঈদ বা উৎসব রয়েছে। আমাদের (চিত্তবিনোদনের) জন্য রয়েছে এই ঈদ। ( শরহে সহীহ বুখারী)।

নির্মল চিত্তবিনোদনের আয়োজন:

ঈদের দিনটাকে নীরবে পার না করে, কিছু চিত্তবিনোদনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা চাই। কারণ ঈদের দিনে এ রকম আয়োজনের বর্ণনা হাদিসেও এসেছে। কোনো এক ঈদে দুজন বালিকা হজরত আয়শা (রা.) এর ঘরে এসে গান গাচ্ছিলো। রাসূল (সা.) শুয়ে শুয়ে তাদের দৃশ্য দেখছিলেন। ইতোমধ্যে হজরত আবু বকর (রা.) ঘরে প্রবেশ করেন। মেয়ে হজরত আয়শা (রা.)-কে আবু বকর ধমকালেন যে, রাসূলের ঘরে শয়তানের বাদ্য? তখন নবী করীম (সা.) উঠে এসে হজরত আবু বকর (রা.)-কে বললেন, তাদেরকে সুযোগ দাও। তাছাড়া ঈদের দিনে হাবশিদের বর্শা নিয়ে খেলা দেখানো ও যুদ্ধের বিভিন্ন কলাকৌশল দেখানোর আয়োজনও থাকতো। রাসূল (সা.) আয়শা (রা.)-কে নিয়ে তা দেখায় অংশগ্রহণ করতেন। এ সকল হাদিস প্রমাণ করে ইদের দিনে চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন আয়োজন থাকতে পারে। যেখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অংশগ্রহণ করা যায়।

আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ:

পূর্বে হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে যে, হজরত আবু বকর (রা.) ঈদের দিন হজরত আয়শা (রা.) এর ঘরে প্রবেশ করে দুজন বাচ্চা মেয়েকে গান গাওয়ার কারণে ধমক দিয়েছিলেন। হজরত আবু বকর (রা.) মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ঈদের বেড়ানোর জন্য। তাছাড়া হাদিসে এসেছে নবী করীম (সা.) ঈদের নামাজে এক রাস্তা দিয়ে যেতেন আর ফিরে আসতেন অন্য পথে। হাদিস বিশারদগণের দাবী হচ্ছে, রাসূল (সা.) এ কাজ করতেন ওই পথের আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও খোজ খবর নেয়ার জন্য। তবে এই ব্যাখ্যা দ্বারা একটি প্রশ্ন হতে পারে যে, তাহলে আমাদের যাদের অন্য পথে আত্মীয় নেই আমরা কী ওই কাজ করবো না? আসলে এখানে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় হওয়া জরুরি নয় বরং প্রতিবেশী হিসেবেও কারো খোজ খবর নেয়া আমাদের দায়িত্ব।

ঈদের দিন কবর জিয়ারত:

কারণ উৎসবের আমেজ যেন আমাদের আখেরাতের ব্যাপারে বেখবর করে না দেয়। বহু হাদিসে কবর জিয়ারতের কথা এসেছে। মুসলিম শরীফের এক হাদিসে এসেছে নবী করীম (সা.) বলেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমাদেরকে কবর জিয়ারতের অনুমতি দিচ্ছি। কারণ, কবর জিয়ারত আখেরাতের কথাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে কোনো কোনো ফকিহ এটাকে অপছন্দ করেছেন। তাই জরুরি বা রসম হয়ে গেলে না করা উচিত।

ঈদের দিন আপনজনের কবর জিয়ারত যেহেতু জরুরি নয়, তা না হয় বাদই দেয়া হলো, কিন্তু আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ তো একটি বড়ো সুন্নত এবং  ঈদেরই অংশ!  যা স্বয়ং হযরত আবু বকর (রাঃ) দেখিয়ে দিয়েছেন। আর পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ -খুশি  ছাড়া তো ঈদই কল্পনা করা যায় না।

তাই আমাদের বাঙালী বা বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান তথা কারী ইণ্ডাষ্ট্রিতে  যারা কাজ করেন ( ৬০% -৭০%) এবং অন্যান্য কিছু  প্রতিষ্ঠানেও  তাদের জন্য ঈদ  হয়ে যায় আনন্দের পরিবর্তে বেদনা!

তাই আহবান জানাই যারা মালিক পক্ষ  আছেন তারা যেন  এই সুযোগটি করে দেন তাদেরই কর্মচারী ভাই, যারা তাদেরই ব্যবসা কে পরিশ্রম দিয়ে সার্ভিস দিয়ে ধরে রেখেছেন। একদিন ছুটির ব্যবস্থা করলে বা ব্যাবসা বন্ধ রাখলে তেমন ক্ষতি হবে না বরং কর্মচারী আরো উৎসাহ-উদ্দিপনা নিয়ে কাজ করবে, এতে শুধু একদিনের ক্ষতিই  পোষবে না বরং ব্যবসার  আরোও উন্নতি হবে।

আর কাষ্টমার একদিনের কারণে চলে যাবে না বরং তারা যখন দেখবে বা শুনবে এটি একটি ধর্মীয় ব্যাপার এতে তারাও সম্মান জানাবে।

আর মহান আল্লাহ পাক যদি রাজি- খুশী হয়ে যান তবে চাহে তো তার অফুরন্ত নিয়ামতের ভান্ডার থেকে বিভিন্নভাবে দিয়ে দিবেন, ইনশাল্লাহ।

বদরুজ্জামান বাবুল : সাংবাদিক ও সংগঠক, লন্ডন।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন