টাওয়ার হ্যামলেটসকে পুনর্গঠন এবং কাংখিত ভবিষ্যত নির্মাণের প্রত্যয় নিয়ে প্রকাশিত হলো মেয়র প্রার্থী লুৎফুর রহমানের ম্যানুফেস্টো। ৮ টি পয়েন্টে প্রায় ১২০টি প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইস্ট লন্ডনে টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের জন্য ২৬ পৃষ্ঠার এই প্রতিশ্রুতি ডকুম্যান্ট প্রকাশ করে লুৎফর রহমান বলেছেন, এটি তাঁর উচ্চ আকাংখা আর আত্মবিশ্বাসের দলিল।
তিনি বলেন, আমরা যে উন্নতি ও পরিবর্তনের ধারা শুরু করেছিলাম, তা কিভাবে বন্ধ হয়েছে, আপনারা ভালো জানেন। আর তাই আগামী ৫ মে আপনারা চুড়ান্ত বিচার করবেন। আপনারাই ঘর মার্কায় আসাপায়ার পার্টির পক্ষে সঠিক রায় দিয়ে সেই উন্নয়ন কর্মসূচী আবারো ফিরিয়ে আনতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের ম্যানুফেস্টোতে পরিস্কার ভাবে সব বয়সী ও সকল বর্ণের মানুষের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা জানিয়েছি। আমরা যেমন শিশুদের ফ্রি স্কুল মিল, জিসিএসই তে বুস্টার ক্লাস-এর ব্যবস্থা করতে চাই, ঠিক তেমনি তরুণদের জন্য ইয়ুথ ক্লাব সুবিধা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই, আবারো চালু করতে চাই ফ্রি হোম কেয়ার। বছরে ৪ হাজারের বেশী ঘর আমরা নিশ্চিত করতে চাই, পুলিশের সংখ্যা আগের মতো বাড়াতে চাই। এছাড়াও তার অগ্রাধিকারে রয়েছে, কমিউনিটি লেংগুয়েজ সার্ভিস চালু করা। নারীদের আলাদা সুবিধা, বাংলাদেশী নারীদের জন্য কমিউনিট সেন্টার করা। কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ করা। মেয়র সার্জারি নিয়মিত করার মাধ্যমে আবারো জনতার মেয়র হিসেবে বিবেচিত হওয়া। লাইব্রেরি সার্ভিস, পার্কিং সুবিধা, ওয়ানস্টপ সার্ভিস, চাকুরী ও ট্রেনিং সুবিধাসহ নানা ক্ষেত্রে তার রয়েছে অনন্য প্রতিশ্রুতি।
লুৎফর বলেন, বর্তমান মেয়র ৬শ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে বেশী অর্থ রিজার্ভে রেখে সব জরুরী সার্ভিসে এতো আঁটসাঁট করেছেন যেনো বাসিন্দাদের তিনি শাস্তি দিচ্ছেন। গত ৭ বছরে লেবার মেয়রের তৈরি করা হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা এবং নব উদ্যোমে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে এসেছি আমরা। তিনি বলেন, আমাদের ৫ বছরের সফল ও জনবান্ধব প্রজেক্টগুলো ফিরিয়ে আনা এবং নতুন নতুন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বাস্তবায়নই হবে আমার প্রধান কাজ।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে লুৎফর রহমানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন লন্ডনের প্রথম মেয়র কেন লিভিংস্টন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক লেবার ডিপুটি লিডার ব্যারোনেস পলা উদ্দিন, বিশ্বখ্যাত সোসাল জাস্টিস নেতা জেসি জেকসন ও টাওয়ার হ্যামলেটসের সিনিয়র একটিভিস্ট জন আলিসন। এছাড়া অতি সম্প্রতি টাওয়ার হ্যামলেটসে বসবাসকারী এমনিস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক চেয়ার লিন্ডা উইকিনসনও তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তারা প্রায় সকলেই বলেছেন, লুৎফুর তার কাজের মাধ্যমে জনতার মেয়র হয়েছেন। তাকে নির্বাচিত করে জনবান্ধব ও জরুরী সার্ভিসগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। টাওয়ার হ্যামলেটসবাসীকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে হবে।
ইতিমধ্যে তাঁর ওয়েবসাইট ও সোসাল মিডিয়ায় পুরো ম্যানিফেস্টো প্রকাশিত হয়েছে। তিনি প্রধানতম ৩০ অগ্রাধিকারের কথাও জানিয়েছেন:
সেরা ৩০ টি প্রতিশ্রুতি:
কস্ট অব লিভিং ক্রাইসেস:
১) কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ করা,
লুৎফুরের সময়ে কাউন্সিলে ট্যাক্স বৃদ্ধি না করে ফ্রিজ ছিলো ৫ বছর, বর্তমান মেয়র প্রায় ২৫ ভাগ বৃদ্ধি করেছেন।
২) ইয়াং পিপুল সাপোর্ট ফান্ড:
১৬ বছরের বেশী বয়সী স্টুডেন্টদের পড়াশোনায় ধরে রাখতে এই ফান্ড। স্কুল হলিডে থাকাকালেও থাকবে ফ্রি স্কুল মিল সুবিধা (যাদের জন্য প্রযোজ্য)।
৩) হোমলেসনেস ফান্ড:
এভিকশন পরিস্থিতি থেকে রক্ষার জন্য এই ফান্ড।
হোমস ফর ফিউচার:
৪) নূন্যতম ৪ হাজার ঘর, অগ্রধিকারে থাকবে তিন-চার বেডরুম। এর আগে লুৎফুর রহমানের সময়ে পাইপ লাইনে থাকা ৩ হাজারসহ ৮৫৯০টি ঘর তৈরি করা হয়। দু’বার সারা বৃটেনের সেরা হিসেবে সরকারি বোনাস মিলেছিলো।
৫) ১০০০ কার পার্কিং তৈরি এবং কার ফ্রি জোন পলিসি রিভিউ করা।
৬) কাউন্সিল মালিকানাধীন হাউজিং এর তত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান টাওয়ার হ্যামলেটস হোমসকে কাউন্সিলে ফিরিয়ে আনার জন্য কনসালটেশন করা।
৭) ক্লাডিং সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোর জন্য জরুরি তহবিল।
এডুক্যাশন:
৮) জিসিএসই তে সাফল্যের জন্য বুসটার ক্লাস।
৯) সিক্সথ ফর্ম ও কলেজগুলোর উপর রিভিউ করা, যাতে আরো বেশী স্টুডেন্ট অক্স-ব্রিজসহ সেরা ভার্সিটিতে যেতে পারে।
১০) এডুক্যাশন মেইনটেনেন্স এলাউন্স ( ইএম এ) , ফ্রি স্কুল মিল ও ইউনির্ভাসিটি গ্রান্ট আবারো ফিরিয়ে আনা। সেকেন্ডারি স্কুলের জন্য ফ্রি স্কুল মিল বিবেচনা করা।
১১) কমিউনিটি লেংগুয়েজ সার্ভিস আবারো ফিরিয়ে আনা।
কালচার, বিজনেস, জব এন্ড লেজার:
১২) বারা ভিত্তিক মেয়র কাপ টুর্নামেন্ট করা।
১৩) বারার হোয়াইটচ্যাপেল, ওয়াটনি ও ক্রিস্পস্ট্রিট সহ ঐতিহ্যবাহী মার্কেটগুলো রক্ষা করা।
১৪) চাকুরী, ট্রেনিং এপ্রেনটিশিপ-এর সুযোগ বৃদ্ধি করা।
ইনভেস্ট ইন পাবলিক সার্ভিস:
১৫) কাউন্সিল সার্ভিস সুবিধার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসগুলো আবারো চালু করা।
১৬) বারার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও বিন কালেকশন বৃদ্ধি করা।
১৭) বারার লাইব্রেরিগুলো আরো সমৃদ্ধ করা।
১৮) ফ্রি হোম কেয়ার সার্ভিস আবারো ফিরিয়ে আনা। কেয়ার সেক্টরে আরো বিনিয়োগ করা এবং কেয়ার ওয়ার্কারের সুবিধাও বিবেচনায় রাখা।
১৯) জেনারেল হেলথ এওয়ার্নেস বাড়ানো এবং বিএএমই কমিউনিটিতে কভিড ইমপেক্ট বিবেচনায় নিয়ে কাজ করা।
২০) জিপি সার্জারি বৃদ্ধি করা।
এমপাওয়ার কমিউনিটি
এন্ড ফাইট ক্রাইম:
২১) এন্টি সোস্যাল বিহেভিয়ার ও হেইট ক্রাইম কমানো
২২) নারীদের প্রভাব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা। বাংলাদেশী নারীদের জন্য নিবেদিত একটি সেন্টার করা এবং সোমালী কমিউনিটির জন্য একটি সেন্টার করা।
ক্রাইম এন্ড সেইফটি:
২৩) পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ।
২৪) ডকল্যান্ডে বন্ধ হওয়া একমাত্র পুলিশ স্টেশন আবারো শুরু করার জন্য পুলিশকে সুবিধা দেয়া।
২৫) ড্রাগ সমস্যা সমাধানে কাজ করা। ড্রাগ ডিলার গ্রেফতার ছাড়াও ড্রাগ ট্রিটম্যান্টে বিশেষ সুবিধা তৈরি করা।
ক্লিন এন্ড গ্রিন ফিউচার:
২৬) ক্লাইমেট চেন্জ নিয়ে কাজ করার জন্য মেয়রের এডভাইজারি কমিটি করা।
২৭) বৃক্ষরোপন বৃদ্ধি করা
এ কাউন্সিল দ্যাট লিসেন টু ইউ:
২৮) বারায় নিয়মিত মেয়র সার্জারি সুবিধা রাখা। আগের সেই সক্রিয়তা পূণরায় ফিরিয়ে আনা।
২৯) রাস্তাগুলোকে খোলা রাখার ব্যবস্থা করা, যাতে কোনো জরুরি যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়।
৩০) ওয়ার্কফোর্স রিফলেক্ট দ্য কমিউনিটি-পলিসি আবারো সক্রিয় করা। যাতে চাকুরী ক্ষেত্রে সমতা আনা যায়।