গ্রেটার বড়লেখা এসোসিয়েশন ইউকের নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পপলার এবং লাইমহাউস সংসদীয় আসনের ব্রিটিশ- বাংলাদেশী এমপি আফসানা বেগম।
বিশেষ ছিলেন যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এর প্রতিনিধি কনস্যুলার দেওয়ান মাহমুদুল হক, সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ ও অভিনেতা স্বাধীন খসরু।
২৭ মার্চ রবিবার পূর্ব লন্ডনের একটি অভিজাত হলে গ্রেটার বড়লেখা এসোসিয়েশন ইউকের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ এর পরিচালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি লিয়াকত খান।
শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম দুদু। পরে সমবেত কন্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথি আফসানা বেগম এমপি বলেন, আমাদের বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেক অর্জন আছে যেগুলো মেইনস্ট্রিমে ব্রিটেনকে গর্বিত করে। বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক বন্ধনকে মাল্টিকালচারাল লন্ডনে তুলে ধরতে এবং অটুট রাখতে সবচেয়ে বেশী কাজ করেছেন আমাদের অগ্রজরা। মূলত তাদের কারণে ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটি আজকের এই অবস্থায় আসতে পেরেছে। তিনি প্রবীনদেরকে ‘বাংলাদেশী কমিউনিটির ব্যাকবউন‘ উল্লেখ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশী এমপিদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী এমপি আফসানা বেগম বলেন, এবছরের ফেব্রুয়ারীতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের মহান একুশে ফেব্রুয়ারীতে বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্নত্যাগ, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে অর্জন এবং ব্রিটেনে বাংলা ভাষা চর্চার প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এই প্রথম ব্রিটেনের হাউজ অব কমন্সে বাংলা ভাষা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি এই উদ্যোগটি নিতে পেরে ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হিসাবে গর্বিত। অনেক পার্লামেন্টেরিয়ান ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, এর আগে বাংলাদেশীদের ভাষার জন্য এই মহান আত্নত্যাগের কথা তারা জানতেন না।
তিনি আরও যুক্ত করে বলেন-‘আমি আমার পূর্বসূরীদের কথা শ্রদ্ধায় মনে রেখে আবেদন করেছি যে- ‘আমার ভূমিকা বক্তৃতায় আমি সিলেটীভাষায় কয়েকটি বাক্য বলতে চাই।যা পরে আমি ইরেজীতে বলবো। হাউজ অব কমন্স কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন দিয়েছেন। এবং আমি সিলেটী ভাষায় কথা বলেছি। যা ব্রিটেনে বাংলা ভাষীদের জন্য ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে বলে বিশ্বাস করি।’
বিশেষ অতিথি যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এর প্রতিনিধি কনস্যুলার দেওয়ান মাহমুদুল হক মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতায় স্বরণ করে বলেন, প্রবাসী সংগঠনগুলো ব্রিটেনে আলোকিত কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পজিটিভভাবে তুলে ধরছে। এবং বাংলাদেশের
ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মদের কাছে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।বিশেষ করে সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক সংঠগনগুলো অতীতের ধারাবাহিকতায় কমিউনিটির মধ্যে একটি শক্ত বন্ধন তৈরী করেছে।
বিশেষ অতিথি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ প্রবাসী সংগঠনগুলোর বাংলাদেশে শিক্ষা ও সংস্কৃতির নানা শাখায় সেবামূলক কাজে সহযোগিতার প্রতি গুরুত্ব আলোপ করে বলেন, একটি লাইব্রেরী একটি সমাজকে মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবিক করতে বহুলাংশে ভূমিকা রাখতে পারে। প্রবাসী সংগঠনগুলোর দেশের উন্নয়নে এইসব কাজে মনোনিবেশ করা বর্তমান সময়ে খুব জরুরী উল্লেখ করে গ্রেটার বড়লেখা এসোসিয়েশন ইউকে এইসব উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করেন।
বিশিষ্ট অভিনেতা স্বাধীন খসরু মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রবাসীদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মদের বাংলাদেশে নিয়ে গেলে সকলের উচিত মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সাথে ঘনিষ্টভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া। তিনি তার গ্রামের পৈতৃকবাড়িটি ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের একটি সংগ্রহশালা করার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে সকলের সহযোগিতার অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ৫২বাংলার সম্পাদক ও কবি আনোয়ারুল ইসলাম- মহান মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন- আমাদের প্রবীনদের দেখানো পথে আমাদের প্রজন্মরাও ব্রিটেনে বাংলাদেশকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরছেন। তিনি ফেব্রুয়ারী মাসে হাউস অব কমন্সে ব্রিটিশ-বাংলাদেশী বংশদ্ভদ আফসানা বেগম এমপির বাংলাভাষা নিয়ে বক্তব্য এবং এর উদ্যোগে গ্রহন করায় সকলের পক্ষ থেকে তাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। এবং আফসানা বেগম এমপির সিলেটী ভাষাকে হাউস অব কমন্সে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ ও প্রচার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন হয়ে থাকবে -অভিমত প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ আর্থ মানবতার সেবায় কাজ করা গ্রেটার বড়লেখা এসোসিয়েশন ইউকের নতুন কমিটির সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে আগামীতে নতুন প্রজন্মদের সম্পৃক্ত করে অনুষ্ঠান করার প্রতিও গুরুত্ব আলোপ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, কাউন্সিলার ফারুক চৌধুরী,উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সংগঠনের উপদেষ্টা আহমেদ যুবায়ের লিটন,বড়লেখার সাবেক ব্যবসায়ী ও ফুটবলার আহমদ হোসেন, জুড়ী টি এন খানম কলেজের সাবেক অধ্যাপক কমিউনিটি কর্মী সফিকুল হক স্বপন,বড়লেখা ফুটবল ক্লাব ইউকে এর সভাপতি সাহাব উদ্দিন,উপদেষ্টা আব্দুস শুকুর, বড়লেখা ফাউন্ডেশন ইউকে এর সাধারণ সম্পাদক আবু রহমান।
সংগঠনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেন, কার্যকরি কমিটির সদস্য সিরাজ উদ্দিন ও সালাউদ্দিন এনাম।
সভায় অন্যানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গ্রেটার বড়লেখা এসোসিয়েশন ইউকের উপদেষ্টা যথাক্রমে আব্দুর রহিম, নজরুল ইসলাম,আব্দুস শুকুর। সংগঠনের সহ সভাপতি যথাক্রমে খলিলুর রহমান, মাহবুব রশীদ মুসা, মোস্তাক আহমেদ,নাঈম শহীদ আসুক ও হাফিজ উদ্দিন।
ট্রেজারার বদরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক পংকি খান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক তুহিন খান আলম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ফয়সল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আলীম উদ্দিন, সাহিত্য সম্পাদক কাজল সরকার,আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল হামিদ, সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহিন আহমদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আলী আহমদ এবং সংগঠনের কার্যকরি সদস্য সিরাজ উদ্দিন,রুহুল আমীন ও শিব্বির আহমদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গাণ পরিবেশন করেন ক্লোজ আপ ওয়ান এর তারকা শিল্পী রানা খান এবং সহশিল্পী হাসান আহমেদ ও তানিম আহমেদ। দেশাত্নবোধক ও আবহমান বাংলার গাণ পরিবেশন করে অনুষ্ঠানকে মুগ্ধতায় মাতিয়ে রাখেন শিল্পীরা।
সভাপতি লিয়াকত খানের ধন্যবাদ বক্তব্যের পর রাতের খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।