সোমবার (২১ ডিসেম্বর) লেবানন বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গনে আবারও বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে অবৈধ কাগজপত্র বিহীন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে( ডলার নয়,লেবানিজ মূদ্রায়) টিকেটের মূল্য নির্ধারণের দাবীতে তারা এই কর্মসূচী পালন করে। সে সময় বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশ অতর্কির লাঠিচার্জ চালালে ছয়জন প্রবাসী আহত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বৈরুত রফিক হারিরি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়।
গত ১৪ ডিসেম্বর দূতাবাস প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে অবৈধ কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীরা।লেবাননের বিভিন্ন অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং বাংলাদেশের অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত নিউজ পরিপ্রেক্ষিতে এবং গত শুক্রবার (১৮ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস -২০২০ উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ জানিয়েছিলেন, লেবাননসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়া প্রবাসীদের সম্পুর্ন সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে নিবেন।
মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এর এমন ঘোষণার পরদিনই বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেইজে জরুরী বিজ্ঞপ্তিতে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে নাম নিবন্ধনের ঘোষণা প্রকাশ পায়। সেই ঘোষণা বা বিজ্ঞপ্তিতে ফিস/ জরিমানা বাবদ একলক্ষ চল্লিশ হাজার লেবানিজ লিরা এবং টিকেট বাবদ চারশত আমেরিকান ডলার জমা দিয়ে যারা দেশে ফিরতে ইচ্ছুক তাদেরকে নাম নিবন্ধন করতে বলা হয়।
লেবাননে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে অনাহারে অর্ধাহারে, কর্মহারা অনেকে বাংলাদেশ থেকে টাকা এনে জীবন রক্ষা করা অবস্থায় এই মূহুর্তে ডলার সংগ্রহ করা খুবই কঠিন হবে তাই ডলারের পরিবর্তে লেবানিজ মূদ্রায় টিকেটের মূল্য নির্ধারণে দূতাবাসের নিকট দাবী জানায় তারা। তাছাড়া ২৫ থেকে ২৮ ডিসেম্বর যেই নিদিষ্ট সময়ে বেধে দেয়া হয় এই সময়সীমা বাড়ানোর দাবীও জানায় তারা।
লেবাননে ডলার সংকট কারণে প্রত্যেক জিনিসপত্রে দ্রব্যমূল্য হাতের নাগালের বাহিরে। বর্তমানে লেবাননে ডলার নামটা যেন,”সোনার হরিণ “!কোথাও ডলার পাওয়া যাচ্ছেনা। একশত ডলার যাহা আগে ছিল এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার লেবানিজ লিরা বর্তমানে তাহা ব্লেক মার্কেট থেকে ক্রয় করতে লাগে আট লক্ষ পঞ্চাশ হাজার লেবানিজ লিরা।
সে সময় প্রবাসীরা জানায়,চৌদ্দ থেকে পনের লক্ষ লেবানিজ লিরায় বৈধ প্রবাসীরা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে দেশে ফিরতে পারলেও আমাদের নিজেস্ব বাংলাদেশ বিমান কেন এই মূল্য নিবেন না। সরকার এবং বাংলাদেশ বিমান যদি আমাদের এই অসহায় পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের পাশে এসে সহযোগিতা না করেন তাহলে আমরা যারা অবৈধ কাগজপত্র বিহীন আছি তাদের জন্য দূতাবাস আউট পাসের ব্যবস্থা যেন করেন। আমরা নিজেরাই নিজেদের টিকেট করে দেশে ফেরত যাবো।
অন্যদিকে লেবানন প্রবাসীরা কেমন আছেন এই নিয়ে বিভিন্ন ভার্চুয়াল আলোচনা এবং মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় কমিউনিটির নেতারা দূতাবাসের এমন ঘোষণা এবং পুলিশের লাঠিচার্জ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,দায়িত্বরত ব্যক্তিবর্গের কথা ও কাজের কোন মিল নেই।
যেখানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন সম্পুর্ন সরকারি খরচে লেবানন প্রবাসীদের দেশে ফিরে নেয়ার ব্যবস্থা করবে আর সেখানে দূতাবাস থেকে এমন বিজ্ঞপ্তি দেখে আমরা হতভাগ।তারাও দাবী তুলে বলেন, ফিস/ জরিমানা বাবদ যেই এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লেবানিজ লিরা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা বাতিল করে এবং টিকেট বাবদ যেই চারশত ডলারের পরিশোধ করার কথা বলা হয় সেটিও লেবানিজ লিরায় পনের লক্ষ নির্ধারণে অনুরোধ জানায় বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস বরাবর।
অন্যদিকে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনকারী প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে দূতাবাসের প্রথম সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,পূর্বে অবৈধ কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীদেরকে যেভাবে প্রেরণ করা হয়েছে সেই নিয়মে দূতাবাস এবারও একই পদ্ধতি অনুসরন করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও বলেন, বাংলাদেশ সরকার থেকে বিনা খরছে নেয়ার ব্যাপারে যদি দূতাবাস দিকনির্দেশনা পায় তাতে আমাদের বা দূতাবাসের কোন আপত্তি নেই।