যথাযথ মর্যাদা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় সৌদি আরবের রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এ সময় দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
দূতাবাসে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী। জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন ছিল । আলোচনার শুরুতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। এসময় শোক দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার ড. আবুল হাসান, শ্রম কাউন্সেলর মেহেদী হাসান, কাউন্সেলর হুমায়ূন কবির ও পাসপোর্ট ও ভিসা উইং এর প্রথম সচিব কাজী নুরুল ইসলাম।
আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক শব্দ, বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। জাতির পিতা ছিলেন বাঙ্গালি জাতির মুক্তির মহানায়ক। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতার রূপকার। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন।
জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, আদর্শ ও দেশপ্রেম পৌঁছে দিতে হবে। এ লক্ষ্যে দূতাবাস ও সৌদি আরবের বাংলাদেশ কমিউনিটির সকল স্কুলগুলোকে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
জাতির পিতার পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায়ের পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সমূহ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
দূতাবাসের চার্জ দ্যা এ্যাফেয়ার্স এস এম আনিসুল হক বঙ্গবন্ধুর জীবন, রাজনীতি ও দেশপ্রেম এর বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন। দূতাবাসের ডিফেন্স এ্যাটাসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ সিদ্দিকী তাঁর বক্তব্যে সরকারি চাকুরীজীবীদের ভালো ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জনগণের সেবা প্রদানের বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা তুলে ধরেন। দূতাবাসের কার্যালয় প্রধান মিনিস্টার ড. ফরিদ উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীসহ শাহাদাৎ বরণকারী সকল সদস্যদের আত্মার শান্তি ও দেশ, জাতির সুখ সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা হয়।
এরপর দূতাবাসের অডিটোরিয়ামে জাতির পিতার জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র “বঙ্গবন্ধু- বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি” প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া নির্মলেন্দু গুনের কবিতা “সেই রাতের কল্পকাহিনী” আবৃত্তি করেন দূতাবাসের প্রেস উইং এর প্রথম সচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
এদিকে জেদ্দাস্হ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল যথাযথ মর্যাদা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় দিবসটি পালন করে। কনসাল জেনারেল ফয়সাল আহমেদ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতের পর কনস্যুলেটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, পুলিশের সাবেক আইজি জাবেদ পাটোয়ারী সৌদি আরবে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হিসাবে ১৪ আগষ্ট রাতে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সস্ত্রীক রিয়াদে এসে পৌঁছান। এসময় রিয়াদ কিং খালেদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। পরে তিনি ১৫ আগষ্ট সকালে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সৌদির নিয়মানুযায়ী চৌদ্দদিন হোম কোয়ারান্টাইন শেষে তিনি কাজে যোগদান করবেন বলে দূতাবাস সূূত্র নিশ্চিত করেছে।