বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনের সমর্থনে এক সমাবেশ করেছে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিয়ানীবাজার উপজেলাবাসী।
৪ মার্চ সোমবার পূর্ব লণ্ডনের স্টিফোর্ড কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই সমর্থক সমাবেশে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলাবাসী অংশ নেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে জাকির হোসেনকে নির্বাচিত করার জন্য লন্ডনের সমাবেশ থেকে উপজেলাবাসীর প্রতি জোর আহবান জানানো হয়। জাকির হোসেন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা জাকির হোসেন পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে যুক্ত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের নির্বাহী সদস্য ছিলেন। একই সাথে ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। বর্তমানে তিনি বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত অনুসারী শহীদ সন্তান জাকির হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন পরীক্ষিত সৈনিক হিসেবে পরিচিত।
সমাবেশে বিয়ানীবাজারের যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেতৃবৃন্দ বলেন, আসন্ন নির্বাচনে জাকির হোসেন-ই একমাত্র যোগ্য ও জনবান্ধব নেতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সুফল বিয়ানীবাজারবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে জাকির হোসেনকে সবচেয়ে উপযুক্ত নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন বক্তারা।
লন্ডনের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব নুরুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন সাবেক ছাত্রনেতা লুতফুর রহমান। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সর্ব ইউরোপিয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ডা: ফয়জুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমাণ্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম খান, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব এনায়েত সারওয়ার, আলতাফ হোসেন, ফয়জুল হক, শাহাব উদ্দিন, ডা. আবদুল কাদির, আশিক আহমদ, খলিলুর রহমান, পাখি আলম, আবদুল হক, বদরুল হক, নুর মোহাম্মদ ভূঁইয়া, নুরুল হক, রহিম উদ্দিন ও সাবেক ছাত্রনেতা আলাউদ্দিন প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ লালন করার কারণে জাকির হোসেনের পরিবারের ত্যাগের কথা স্মরণ করেন অনেক বক্তা। তাঁরা বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জাকির হোসেনের বড় ভাই আলতাফ হোসেন রণাঙ্গণে পাকিস্তানী হায়নাদের সম্মুখ লড়াইয়ে মোকাবেলা করেন। তাঁর বাবা তাহির আলী ও মেঝ ভাই আবুল হোসেন নিজাম স্থানীয় রাজকারদের ইন্ধণে পাকবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরও এই পরিবারের ওপর চরম নির্যাতন নেমে আসে। তখন তাঁর বাবা ও ভাইকে হত্যাকারী স্থানীয় রাজাকার, আল-বদর গোষ্ঠী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও এই পরিবারের ওপর হামলে পড়ে। জাকির হোসেনের বড় ভাই আলতাফ হোসেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ মণির অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন। পাকিস্তানের দোসররা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে আলতাফ হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙ্গিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নানা সুবিধা নিয়ে ফুলে- ফেঁপে উঠছে। অথচ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার হওয়া সত্ত্বেও এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত ত্যাগী পরিবার হওয়া সত্ত্বেও জাকির হোসেন কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ কখনো এসবের নাম ভাঙ্গিয়ে কোনো সুবিধা নেয়ার অভিপ্রায় দেখাননি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থেকে এলাকায় নিজেকে জনদরদী ও সমাজসেক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা শহীদ সন্তান জাকির হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। এ নিয়ে তাঁরা রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বক্তারা বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর বিরোধী ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল তারা আজকে বড় আওয়ামী লীগার হয়ে গেছে। আর যারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সামিল হয়ে দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, নানা ত্যাগ শিকার করেছে এবং নির্যাতিত হয়েছে তারা আজ অবহেলিত। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা।
বক্তারা বলেন, কোনো কোনো প্রার্থী নিশ্চিত পরাজয় জেনে আগামী ১৮ মার্চের নির্বাচনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভোট জালিয়াতির নানা পায়তারা করছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। জনগণ যাতে অবাধে এবং নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান তাঁরা।
প্রায় চার ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সমর্থক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতাউর রহমান, সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আবদুল মুকিত খান, লন্ডন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মইনুল হক, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহিম শামীম, নিউহাম আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আবদুল কাদের মুরাদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান, মাহমুদুল হাসান ও মোয়াজ্জেম হোসেন, বিয়ানীবাজার থানা জনকল্যাণ সমিতির যুক্তরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহমদ, বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি যুক্তরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, যুক্তরাজ্য যুবলীগের সহ সভাপতি মাহবুব আহমদ, যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহবাব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল ইসলাম বাচ্চু, কমিউনিটি নেতা রুহুল এ রহমান, জামাল উদ্দিন, আহমদ শরিফ, নজরুল ইসলাম, প্রজন্মম্ব৭১ লন্ডন মহানগরের সহ সভাপতি সাইদুর রহমান, সাংবাদিক ফয়সল মাহমুদ ও শামসুর রহমান সুমেল, যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগ নেতা ফখরুল ইসলাম জামাল, জাবির আহমদ ও জাবেদ হোসেন প্রমুখ।