ব্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ বাস্তবায়নের পর যুক্তরাজ্যে অ-ইউরোপীয় দেশ থেকে কম দক্ষ জনশক্তি আসার পথ উন্মুক্ত হচ্ছে।
ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর যুক্তরাজ্যের জন্য নতুন এক অভিবাসন পরিকল্পনা সম্প্রতি অনুমোদন করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এই অনুমোদন এর ফলে বাংলাদেশীরাও সুযোগ পাবেন।
এতে করে আশার আলো দেখছেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত কারী ব্যবসায়ীরা। ব্রিটেনে বাংলাদেশী কারী ইন্ডাষ্ট্রির প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ) থেরেসা মে র এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির বৈঠকে নতুন ইমিগ্রেশন নীতির প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, কম দক্ষ জনশক্তি ব্রিটেনে আনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও রুট থাকা কাঙ্ক্ষিত নয়।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, নতুন পরিকল্পনার আওতায় কৃষি, স্যোশাল কেয়ার ও রেস্টুরেন্টসহ কিছু সুনির্দিষ্ট খাতে কম দক্ষ জনশক্তি আনার রূপরেখা চূড়ান্ত হবে।
হোম অফিসের একটি সূত্র জানায়, টিয়ার-২ টাইপ ভিসার ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ ও পরিধি বাড়াবার পরিকল্পনাও রয়েছে ব্রিটিশ সরকারের।
ব্রিটেনে কারী শিল্পের দীর্ঘ দিনের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন বিসিএ বিগত কয়েক বছর থেকে কারী শিল্পের প্রধানতম সমস্যা স্টাফ সংকট নিয়ে কাজ করছে। বিশেষ করে বিসিএ‘র ধারাবাহিক কার্যক্রমে ব্রিটিশ সরকারের সাথে লবিং এর উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো- বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ ষ্টাফ এনে কারী ইন্ড্রাষ্টির স্টাফ সংকট মোকাবেলা করা। পয়েন্ট ভিত্তিক সিষ্টেমে ইউরোপীয় অঞ্চলের বাইরে থেকে দক্ষ সেফ আনার সুযোগ দেয়া।
বিসিএ ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাষ্টির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষে সরকারের বিভিন্ন ফোরামে দাবী দাওয়া তুলে আসছে। ২০১৮ সালের ১০ জুলাই হাউস অব কমন্স এর সামনে কারী শিল্পের স্টাফ সংকট ও অন্যান্য সমস্যা গুলোর চিহ্নিত করে সরকারের কাছে সুনিদৃষ্ট দাবী সম্বলিত বিক্ষোভ সমাবেশ এবং তারপর থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে কাজ করে যাওয়ায় কারী ইন্ড্রাষ্টির নায্য দাবী- দাওয়াগুলো তাদের কাছে সঠিক ও সময়মতো পৌছাতে সক্ষম হয়েছে।
বিসিএ‘র সভাপতি মোস্তফা কামাল ইয়াকুব সরকারের এই সিদ্বান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন- যে কোন কাজ বাস্তবতাকে সামনে রেখে তথ্য উপাত্তভিত্তিক ধারাবাহিক ভাবে নীতিনির্ধারকের কাছে উপস্থাপন করতে পারলে সফল হওয়া যায়। বিসিএ ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাষ্টির প্রকৃত সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করে লন্ডনের ট্রাফালগাল স্কয়ারে যে ঐতিহাসিক ডেমোষ্টেশন করে দাবী আদায়ে উচ্চকণ্ঠ হয়ে কাজ করছিল, প্রধান মন্ত্রী তেরেসা মে র ঘোষণা তারই ধারাবাহিকতার ফসল।
বিসিএ র সাধারণ সম্পাদক অলি খাঁন বর্তমান কারী শিল্পের ষ্টাফ সংকট সমাধানে বিভিন্ন ফোরাম ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে নায্য দাবীগুলো বিসিএ প্রতিনিধিত্বশীল ভাবে পৌছাতে পেরেছে এবং তাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে বিধায় সরকার টিয়ার ৩ এ কম দক্ষ শ্রমিক পূণবিবেচনা করছে বলে বিসিএ সংগঠন মনে করে। যা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাষ্টির জন্য হবে অত্যন্ত কল্যাণকর।
বিশেষ করে ২০১৮ সালে বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাষ্ট্রির ষ্টাফ সংকট সমস্যা এবং এ থেকে উত্তরণের উপায়গুলোকে সুনিদৃষ্টভাবে উপস্থান করে ব্রিটেনের কারী ব্যবসায়ী, ষ্টাফ সহ সংষ্টিদের নিয়ে ট্রাফালগার স্কয়ারে বিশাল গণসমাবেশ এর মাধ্যমে বিসিএ‘র দায়িত্বশীল কাজটি মূলত এই সংকট সমাধানে সরকারের সুদৃষ্টি আনতে সক্ষম হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটেনে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন( বিসিএ) বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শেফসহ কারী ইন্ডাষ্টিতে বাংলাদেশী ক্যাটারার্স ও ষ্টাফদের বিভিন্ন সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিষ্টার পর থেকে ধারাবাহিক কাজ করে আসছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর যুক্তরাজ্যের জন্য যে নতুন অভিবাসন পরিকল্পনা সম্প্রতি অনুমোদন করেছেন
সেখানে অ-ইউরোপীয়ানদের সাথে বাংলাদেশও সুবিধা পাবে; বিষয়টি বাংলাদেশী কারী শিল্পে জড়িতদের সাথে গোটা কমিউনিটির জন্য একটি সুসংবাদ হিসাবেও দেখছে বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন( বিসিএ)।