প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও রায়ের তথ্য জানানো হয়েছে। আদালত আসামিপক্ষকে আপিলের জন্য এক মাস সময় দিয়েছেন।
সন্তান না হওয়ায় ২০ বছর আগে স্বামী তাড়িয়ে দিলে আবিরন বাবার বাড়িতে ফেরত এসেছিলেন। বিদেশ গিয়েছিলেন বোনদের পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ জোগাতে। ছয় বোনের মধ্যে আবিরন ছিলেন মেজ।
মানবাধিকারকর্মী ও নারী অভিবাসন নিয়ে কর্মরত ব্যক্তিরা বলছেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমিক নির্যাতন বা হত্যার শিকার হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু ও রায় হওয়ার নজির কম। সৌদি আরবে আবিরন হত্যা মামলায় গত ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনার আবিরন বেগম সরকারিভাবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবের রিয়াদে গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। দুই বছর তিন মাস পর ২০১৯ সালে আবিরন লাশ হয়ে দেশে ফেরেন। লাশের সঙ্গে থাকা আবিরনের মৃত্যুসনদে মৃত্যুর কারণের জায়গায় লেখা ছিল মার্ডার (হত্যা)।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের রিয়াদের ক্রিমিনাল কোর্টে বহুল আলোচিত আবিরন বেগমের হত্যাকাণ্ডের রায়ে মামলার প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ও সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর দায়ে আদালত ‘কেসাস’–এর (জানের বদলে জান) রায় দিয়েছেন। গৃহকর্তা বাসেম সালেমের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের আলামত ধ্বংস, গৃহকর্মীকে নিজ বাসার বাইরে অবৈধভাবে কাজে পাঠানো এবং গৃহকর্মীর চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার অভিযোগে আদালত জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগের আদেশ দিয়েছেন। রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইং এই বিচারকার্য ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে প্রবাসী কর্মীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সরকার বিশেষ করে এই মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ভোরে কফিনে মুড়ে আবিরনের লাশ দেশে আসে। গণমাধ্যমে এর প্রতিক্রিয়ার পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) হয়ে আমলে নিয়ে এক সদস্যবিশিষ্ট একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে এবং কমিশনের অবৈতনিক সদস্য নমিতা হালদারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নমিতা হালদার তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে রিয়াদ দূতাবাসের মাধ্যমে আবিরনের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়, অভিযুক্ত নির্যাতনকারীদের আদালতের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন।
মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪০ বছরের বেশি বয়সী আবিরনকে পিটিয়ে, গরম পানিতে ঝলসে, অর্থাৎ বিভিন্ন নির্যাতন করে সৌদি আরবে খুন করা হয়। সাত মাস সেখানকার এক মর্গে ছিল আবিরনের লাশ।