লেবাননে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে মৃত্যু বেড়েই চলেছে । হতাশাগ্রস্ত লেবানন প্রবাসীদের চোখে মুখে এখন আতংকের ছাপ। প্রবাসীরা একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ভাবে নিঃস্ব অপর দিকে বর্তমানে লেবাননের করোনা মহামারী তাদের সর্বদিক থেকে কোন ঠাসা করে রেখেছে। ফলে বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪ বাংলাদেশীর মৃত্যু প্রবাসীদের মাঝে অনেকটাই ভীতি সঞ্চার করেছে।
২৭ জানুয়ারী বুধবার বৈদ্যুতিক লিফট দূর্ঘটনায় শরীফুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। লেবাননের বালবাক জেলার এই ঘটনা থেকে
জানা যায়,জীবিকার তাগিদে কুমিল্লা জেলার ফুলতলি গ্রামের আব্দুর রহিম এর একমাত্র সন্তান শরীফুল ইসলাম দীর্ঘ ১৩ বছর আগে গ্রীন ওয়ার্ল্ড নামে একটি খাবার পক্রিয়াজাতকরন কোম্পানীর ভিসায় লেবানন আসেন।
বুধবার স্থানীয় সময় সকালে কোম্পানীর ভিতরে কর্মরত অবস্থায় মালামাল নিয়ে লিফট দিয়ে উপরে উঠার সময় যান্ত্রিক গলযোগের কারনে দূর্ঘটনা ঘটলে সাথে সাথেই তিনি মারা যান।পরে স্থানীয় পুলিশ এসে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়।
অপরদিকে ২৮ শে জানুয়ারী বৃহষ্পতিবার করোনা আক্রান্ত হয়ে রিনা বেগম নামে এক বাংলাদেশী নারী কর্মীর মৃত্যু ঘটে। লেবাননের জুনি জেলার বুয়ার সরকারী হাসপাতালে স্থানীয় সময় রাত ১১ টায় তার মৃত্যু হয়।
রিনা বেগমের মেয়ে লেবানন প্রবাসী লাবনী আক্তার জানায়, তার মা দীর্ঘ ১০ বছর আগে গৃহকর্মীর ভিসায় লেবাননে আসেন। থাকতেন জুনি জেলার আধুনিস এলাকায়। গত ১ সপ্তাহ ধরে তিনি প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করলে সেখানে তার রেজাল্ট পজিটিভ আসে। বৃহস্পতিবার রাতে অবস্থার আরো অবনতি হলে সহকর্মীরা তাকে দ্রুত বুয়ার সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার রিনা বেগমকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
রিনা বেগমের বাড়ি বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার রিকিবাজার গ্রামে।
গত ২২শে জানুয়ারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাবিয়া বেগম নামে আরো এক বাংলাদেশী নারী কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় বৈরুতের রফিক হারিরি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
তিনি ২ সপ্তাহ আগে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়।পরে অবস্থার আরো অবনতি হলে তার মেয়ে শুক্রবার সকালে তাকে রফিক হারিরি হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করার কয়েক ঘন্টা পরেই দুপুরে রাবিয়া বেগমের মৃত্যু হয়।
রাবিয়া বেগমের বাড়ি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাতপুকুরিয়া গ্রামে। বাবার নাম হারুনুর রশীদ।
লেবাননে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশীদের করোনা আক্রান্তের সঠিক হিসাব না থাকলেও মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ১০ জনে। তাই বরাবরেই দূতাবাস বাংলাদেশী প্রবাসীদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়ে আসছে। এবং সেই সাথে বাংলাদেশী কর্মীদের করোনা সংক্রান্ত তথ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য হেল্প লাইন চালু করেছে।