রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
বাংলাদেশে ভ্রমণে সতর্কর্তা যুক্তরাষ্ট্রের, পার্বত্য অঞ্চলে নিষেধাজ্ঞা  » «   যুক্তরাজ্যে বিরল চিকিৎসা কীর্তি, ২বার ভূমিষ্ঠ হলো একই শিশু  » «   সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইটের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু ২৭ এপ্রিল  » «   যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি, কমেছে আমিরাত থেকে  » «   পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবকে কী বললো ঢাকা?  » «   বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকের উদ্যোগে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত  » «   নির্বাচনের জন্য জামায়াত আমিরের ৩ শর্ত, ফেব্রুয়ারি ২৬-এর সময়সীমা কঠিন নয়  » «   ইইউর ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ : কঠিন হবে রাজনৈতিক আশ্রয়  » «   লন্ডনে খালেদা-তারেকের সাথে জামায়াত আমিরের বৈঠক, দুই দল কী বলছে?  » «   উজানে ‘মেগা ড্যামের’ ধাক্কা সামলাতে দিল্লি-ঢাকা-থিম্পুকে জোট বাঁধার ডাক  » «   রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিলো, বিশ্বাস করেন সাকিব  » «   নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক, ‘একেবারেই সন্তুষ্ট নয়’ বিএনপি  » «   গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়ালো ৫১ হাজার  » «   দেশের সব মসজিদে দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশনা  » «   ট্রাম্প ও শির যুদ্ধ প্রস্তুতি কী বার্তা দিচ্ছে বিশ্বকে  » «  

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ‘ইতিবাচক’, মোংলায় আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চায় চীন



প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছেন, চীন তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ‘ইতিবাচক’ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে আগামী ৫০ বছরের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে রোবার দুপুরে ঢাকার ফের সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা চীনের সঙ্গে পানিসম্পদ নিয়ে দীর্ঘ, বিস্তৃত ও গভীর আলাপ করেছেন। বাংলাদেশের রিভার সিস্টেমকে আমরা কীভাবে সংরক্ষণ করতে পারি, ব্যবহার করতে পারি, এসব বিষয়ে চীন আমাদের জন্য একটা অত্যন্ত বড় দৃষ্টান্ত।
“তারা এসব বিষয়ে পৃথিবীতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। আপনারা তাদের বিভিন্ন বিশাল বিশাল প্রজেক্টগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সহায়তা চেয়েছেন, তারাও সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে বুধবার চীনে যান। চারদিনের সফর শেষ করে তিনি শনিবার দেশে ফিরেছেন।
জলবিদ্যুৎ, বন্যা মোকাবিলা ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন এবং পানিসম্পদ উন্নয়নের মত বিষয়ে পারষ্পরিক সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও চীন ‘একমত হওয়ার’ বিষয়টি যৌথ বিবৃতিতে এসেছে।
শুক্রবার উভয় পক্ষ ইয়ারলুং জাংবো-যমুনা নদীর জলবিদ্যুৎ তথ্য বিনিময়সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমনওইউ) বাস্তবায়নের ব্যাপারেও ইতিবাচক আলোচনা করে বলে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতির বরাতে বাসসের খবরে বলা হয়, তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃসংস্কার প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে ঢাকা স্বাগত জানিয়েছে।
এছাড়া শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর মুহাম্মদ ইউনূস প্রেসিডেন্সিয়াল বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি ‘ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগে’ অংশ নেন।
ইউনূসের এ সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ চীন সরকার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২১০ কোটি ডলারের ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।
চীনের পানিসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতের বিষয়টি তুলে ধরে তার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, “সে সাক্ষাতের সময় চীনের প্রথিতযশা পানি বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তারা সকলেই উপস্থিত ছিলেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের পানির যে চাহিদা সে চাহিদা পূরণে কী কী উপায় হতে পারে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। আর চীনা পক্ষ আমাদের সব ধরণের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এর ভেতরে রয়েছে নদীর পানি সংরক্ষণ, বন্যা পূর্বাভাস, বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়।”
তিস্তা প্রকল্প আগেই হয়েছিল তুলে ধরে তিনি বলেন, “এতে আমরা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহ ব্যক্ত করেছি, তারাও এ বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আপনারা এর প্রতিফলন দেখতে পারবেন জয়েন্ট স্টেটমেন্টে।”
এক প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, “আমি তিস্তার কথাটি বলেছি আগামী ৫০ বছরে আমাদের পানিসম্পদ ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনার প্রেক্ষিতে। চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের অলরেডি একটা প্রজেক্ট আছে। প্রশ্নটি ছিল এ প্রজেক্টটি নিয়ে আমরা কিভাবে এগিয়ে যাবো। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা একটি কথা সবসময় বলেন, ‘কোথায় চাবি খুলতে হবে সেটি আমাকে বলে দেন, আমি চাবি খুলে দেব’। এ সফরে আমরা চাবিটা খুলে দিয়েছি।
“তিনি চাবি দিয়ে তালাটা খুললেন, তিনি চীনের রাষ্ট্রপতি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে সরাসরি এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করার কথা বলেছেন। প্রাথমিকভাবে আমরা চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে রাজি হয়েছি। আপাতত এ টুকু।”
সংবাদ সম্মেলনে উপপিস্থত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিড) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

 

মোংলায় আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চায় চীন

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে ৭৫০ মিলিয়নের মতো আমরা ঋণের কথা বলছি। এর মধ্যে অর্ধেক চট্টগ্রামের চীনা শিল্পাঞ্চল উন্নয়নের জন্য। অন্যদিকে মোংলা বন্দরে আমাদের একটি আধুনিকীকরণের প্রকল্প চলছে। যেহেতু চীন মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণের কাজ করছে, এটার পাশপাশি ওখানেও একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করার চিন্তাভাবনা করছে। তারা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছেন, আমরা রাজি থাকলে সেখানে দ্বিতীয় ইকোনমিক জোন নিয়ে তারা কাজ করবেন এবং ওখানে বিনিয়োগ করবেন।
রবিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘চীনের ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রতিশ্রুতির কথা আমরা বলছি। এই অর্থ আগের সব বড় বড় অংকের থেকে একটি বড় কারণে ভিন্ন। কারণ আগে যে বড় অংকের অর্থ নিশ্চিত করে আসা হয়েছে সেগুলো ছিল ঋণ। ঋণের একটা ইতিবাচক দিক হলো, নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা চলে আসে, নেতিবাচক হলো, এই টাকা আমাদের ফেরত দিতে হয়। সুতরাং আমাদের অর্থনীতিতে এই টাকা ঢোকে এবং সুদসহ বের হয়ে যায়। সেই জায়গায় যদি বিনিয়োগ আসে, সেটি আমাদের অর্থনীতিতে প্রবেশ করে যায়। এই টাকা কখনও এই দেশ থেকে যাবে না। এই বিনিয়োগের ফলে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হবে সেটা ঋণ থেকে কখনই হয় না।’
তিনি বলেন, ‘এবার এই ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৩০টি চীনা কোম্পানি। এটি মূলত চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে চীনা শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে। প্রায় ৮০০ একর জমির ওপর এই শিল্পাঞ্চল তৈরির কাজ চলছে। এই জোনের কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছিল কিন্তু ২০২২ সালের পর এটা নিয়ে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি। গত তিন মাসে আমরা এখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি এবং অনেকগুলো বড় বড় সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। তাদের সঙ্গে একটা নেগসিয়েশনে এসেছে, যে কারণে বিনিয়গকারিরা এখন খুবই কনফিডেন্ট অনুভব করছেন যে এই বছরের কোনও এক সময় আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করবো। জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, এখন আমরা নির্মাণকাজে যাবো। সেটার ওপর নির্ভর করেই কিন্তু চীনা কোম্পানি আমাদের এখানে আসার চিন্তা করছে।’
এবারের চীন সফরে স্বাস্থ্য সেবা একটা বড় বিষয় ছিল উল্লেখ করে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘১২ শতাংশের মতো এসেছে অনুদান, যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো। এর মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন ডলার কারিগরি সহায়তার জন্য এবং ১০০ মিলিয়ন হাসপাতাল তৈরির জন্য। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে অত্যাধুনিক হাসপাতাল তৈরি করা এবং বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য যে যাত্রা ভারত-থাইল্যান্ডের দিকে হয়, আমরা চেষ্টা করছি, যাতে চীন থেকে সেই সাপোর্ট পাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়টি কিন্তু আমাদের জন্য বড় প্রভাব রেখেছে। আমরা অনেকদিন ধরে চীনের বিনিয়োগের কথা বলছি। চীনা বিনিয়োগের যে গুরুত্ব সেটা আমরা আবারও গিয়ে অনুধাবন করেছি। আমরা এই সুযোগ আসলে খুব কম গ্রহণ করেছি। চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা এখনও আছে কিন্তু খুব স্বল্প পরিসরে আছে। আমাদের আরও বেশি হারে চীনে যেতে হবে। চীন এমন একটি মহাদেশ, যেখান থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসা সম্ভব। লাস্ট আগস্ট থেকে এই মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি চীনা কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ-বেপজাতে। এখানে আর্থিক প্রতিশ্রুতি প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলারের মতো।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন