সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যার প্রধান অভিযুক্ত বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া গ্রেফতারের ১০ দিন পর ডোনা সীমান্ত থেকে উদ্ধার মোবাইল, সিমকার্ড ও কাপড় তার বলেই প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছে পিবিআই। অধিকতর নিশ্চিত হতে তার জিনিসপত্র ফরেনসিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উদ্ধার জিনিসপত্র আকবরের বলেই প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান।
তিনি বলেন, যেসব জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছিল সেগুলো আকবর হোসেনের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অধিকতর নিশ্চিত ও তথ্য উদ্ধারের জন্য এগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা হবে। এসআই আকবরের উদ্ধার মোবাইল ও সিমকার্ড রায়হান হত্যায় কিংবা পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল কি-না তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষা সহায়ক হবে বলে মনে করছেন তিনি।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, রায়হান আহমদ হত্যার ঘটনায় পলাতক ছিলেন এসআই আকবর হোসেন। ঘটনার ২৯ দিন পর ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এরপর ১৯ নভেম্বর রাতে ওই একই এলাকা থেকে আকবরের দুটি মুঠোফোন, তিনটি সিমকার্ড, শার্ট-প্যান্ট ও গেঞ্জি, ২০ টাকার একটি নোট, তার দুটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং এক নারীর দুটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি উদ্ধার করা হয়।
কানাইঘাট থানা পুলিশের ওসি মো. শামসুদ্দোহা ও জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আবদুন নাসের এসব জিনিসপত্র উদ্ধারে নেতৃত্ব দেন। সেখানে একটি পাহাড়চূড়ায় কালো ব্যাগের মধ্যে এসব জিনিসপত্র রাখা ছিল।
উদ্ধারকৃত জিনিসপত্র রায়হান হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে সিলেট জেলা পুলিশ। পরে এসব জিনিসপত্র আকবরের কি-না তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় পিবিআই।
১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়। রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার বিডিআরের হাবিলদার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে চাকরি করতেন।
এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
১৪ অক্টোবর মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সবশেষ মরদেহ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।
নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাত লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।