করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে পাব, বার ও রেস্তোরাঁ খোলা রাখার বিষয়ে নতুন বিধি-নিষেধ আরোপ করছে ব্রিটেন। একই সঙ্গে পরিস্থিতি বিবেচনায় যেখানে সম্ভব ঘরে থেকে কাজ করার নিয়ম চালু করার জন্য আবারও জোর দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আজ তাঁর পার্লামেন্টের বক্তৃতায় ।
পার্লামেন্টে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ১২.৩০ মিনিটের সময় তাঁর দেয়া এক বক্তৃতায় তিনি বর্তমান করোনাকালীন সময়ে নতুন নির্দেশনা দিলেন। এতে বরিস জনসন গত মার্চে আরোপিত লকডাউনের ব্যাপারেও আলোচনা করেন।
এতে বরিস জনসন বলছেন, আমরা জানি এটা সহজ হবে না। কিন্তু ভাইরাসের পুনরুত্থান নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা রক্ষার জন্য আমাদের আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এর আগে সোমবার ব্রিটেনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দেশটিতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় ভাইরাসের প্রকোপ ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করে দেন।
গত এক সপ্তাহের তথ্য বলছে, প্রায় প্রত্যেকদিন ব্রিটেনে ৬ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালে রোগী ভর্তির পরিমাণ প্রত্যেক ৮দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। করোনা পরীক্ষা ব্যবস্থার ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়েছে।
কর্মস্থলে ফেরার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে না এমন কর্মক্ষেত্রের লোকজনকে জনসন আবারও ঘরে থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রাত ১০টার পর ইংল্যান্ডের সব পাব, বার, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য আতিথেয়তা স্থাপনা বন্ধ রাখার নিয়ম কার্যকর করলেন তিনি তাঁর বক্তৃতায়।যদিও একসাথে ৬ জন মিলিত হবার বিধান কার্যকর রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বারে বা পাবে সময় শেষ হয়ে গেলে বন্ধু বান্ধবদের বাসায় গিয়ে একসাথে আবারও পান করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে পানাসক্ত মানুষ।
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষ করোনার নতুন বিধি-নিষেধের কবলে এসেছেন। তবে পার্লামেন্টে ভাষণে গত মার্চের মতো পুরোমাত্রার লকডাউন কার্যকর হবে না বলে উল্লেখ করেছেন বরিস জনসন।
বরিস জনসনের নতুন এ পদক্ষেপে আতিথেয়তা খাত অর্থাৎ বিশেষত পাব-বার-রেষ্টুরেন্টগুলোর কর্মচারী-কর্মকর্তারা কিছুটা ক্ষোব্ধ । কারন পাব কিংবা রেষ্টুরেন্টগুলো সরকারেরর বেধে দেয়া নির্দেশনা মেনে তাদের কাষ্টমার আপ্যায়নের ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করেই রেষ্টরেন্টগুলো খোলেছে।
সোমবার ব্রিটেনের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্যাট্রিক ভ্যাল্যান্স এবং প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তা ক্রিস হুইটি সতর্ক করে বলেন, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ব্রিটেন করোনার ক্রমবর্ধমান মৃত্যুহারের মুখোমুখি হবে।
এমনকি অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করে দেন প্যাট্রিক ভ্যালান্স। নভেম্বরে করোনায় দৈনিক মৃত্যু প্রায় ২০০ জনে পৌছাতে পারে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাসে যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজারের বেশি এবং মারা গেছেন ৪৬ হাজার ৭০৬ জন।