বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত জননেতা কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ এর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ১জুন শনিবার সকাল ১০ টায় পার্টি অফিসে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর শোক র্যালী বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকাল ১১ টায় সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেয়া হবে।
এর পর দুপুর ২ টায় মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
সবাইকে উক্ত কর্মসূচীতে উপস্থিত থেকে প্রয়াত কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আহ্বান করা হচ্ছে।
গত ২৯মে বুধবার সকাল ১০টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের মরদেহ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনে রাখা হয়। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, ব্যক্তিবর্গ প্রয়াত নেতার মরদেহে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় সমবেত আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সৈয়দ আবু জাফর আহমেদকে তাঁর প্রিয় পার্টি অফিস থেকে শেষ বিদায় জানানো হয়। পরে শবযাত্রার গাড়ীবহর তার জন্মভূমি মৌলভীবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঢাকা থেকে প্রয়াত নেতার অন্তিমযাত্রার সঙ্গী হয়েছেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে সিপিবি’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, প্রয়াত কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ অত্যন্ত বিনয়ী ও সজ্জন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু আদর্শ ও নীতির প্রশ্নে ছিলেন বর্জ্য কঠোর মনোভাবাপন্ন। তিনি আরো বলেন, বিলোপপন্থীদের পার্টি ধ্বংসের চেষ্টা মোকাবেলা থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতিতে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি বলয় গড়ে তোলার কাজে সিপিবির শীর্ষ নেতা হিসেবে কমরেড আবু জাফর আমৃত্যু বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার কারণে পার্টির নীতি ও আদর্শ এবং রাজনৈতিক লাইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনি আপসহীন ও ধারাবাহিক ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়েছেন। কমরেড সেলিম আরও বলেন, সিপিবি প্রয়াত নেতা সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের লড়াইয়ের রক্ত পতাকাকে উর্ধ্বে তুলে রাখবে এবং তার শোষণমুক্তি অভিমুখী সংগ্রামকে অগ্রসর করে নেবে।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম। উপস্থিত ছিলেন, সিপিবি’র প্রাক্তন সভাপতি কমরেড মনজুরুল আহসান খান, কমরেড শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কমরেড হায়দার আকবর খান রনো, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফয়জুল হাকিম লালা, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবায়ক হামিদুল হক, বাংলদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, সাম্যবাদী দল (এমএল)’র সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স।
কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় কমিটি, কমরেড আবু জাফরের পরিবারবর্গ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণসংহতি আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল (এমএল), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, ঐক্য ন্যাপ, ন্যাপ, জাতীয় গণফ্রন্ট, বামঐক্য ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্ট শ্রমিক টিইউসি, কৃষক সমিতি, ক্ষেতমজুর সমিতি, কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট, যুব ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হকার্স ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, সাপ্তাহিক একতা, সিপিবি নারী সেল, সিপিবি’র বিভিন্ন জেলা ও থানা কমিটিসমূহ, মণি সিংহ ফরহাদ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ।
সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ গত ২৮ মে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। সর্বশেষ নিউমোনিয়া ও বিরল স্টিভেন্স-জনসন সিনড্রমে আক্রান্ত হন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে তাঁর চিকিতসা চলমান ছিল। বিশেষ ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনে সেখানকার চিকিতসকদের পরামর্শে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। গতকাল তাঁর অবস্থা ক্রমশ উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাতে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে তিনি মারা যান।
প্রবাসে অবস্থানরত স্বজনদের দেশে ফেরার অপেক্ষায় আগামী ১ জুন ২০১৯, শনিবার পর্যন্ত কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের মরদেহ মৌলভীবাজারে স্থানীয় হাসাপাতালের হিমাগারে রাখা হবে। ঐদিন মৌলভীবাজার শহরে স্থানীয় জনসাধারণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁর দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আগামী ১ জুন কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের মৃত্যুতে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। ঐদিন সারাদেশে সকল দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, কালোব্যাজ ধারণ, শোকসভা, প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণসহ নানাবিধ কর্মসূচি পালিত হবে।