আদর্শ শিক্ষক টি আলী স্যার এর ১০৬তম জন্মবার্ষিকীতে ৫জন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটির আয়োজক টি আলী জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ। গুনী এই শিক্ষক দীর্ঘ ৩১ বছর একই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষক তজম্মুল আলী তার শিক্ষার্থীদের কাছে ‘টি আলী স্যার’ নামেই পরিচিত। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির।
২মে বৃহস্পতিবার সকালে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আদর্শ শিক্ষক টি আলী স্যারের ১০৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা, আদর্শ শিক্ষক সম্মাননা ও টি আলী স্যার স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আদর্শ শিক্ষক টি আলী স্যারের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক টেনে শিক্ষকদের প্রদর্শিত আদর্শিক দিকগুলো বাস্তবে সমাজ বিনির্মাণে প্রয়োগের জন্য প্রতি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।এমপি জহির টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন এর আদর্শ শিক্ষক সম্মাননার প্রসঙ্গে বলেন- শিক্ষকদেও সম্মানীত করা সমাজে শ্রেষ্ঠতম কাজের একটি। এই ধারা অব্যাহত রাখতে ফাউন্ডেশনের সকলের প্রতি আহবান করেন।
অনুষ্ঠানে এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন- নয়া ওই ভবনে সংযুক্ত করা হবে লিফট। ছাত্ররা ভবনের উপরতলায় লিফটে উঠানামা করবে। সেই সাথে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে কলেজে উন্নীত করা হবে। বিদ্যালয় দুটি কলেজে উন্নীত হলে হবিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার দ্বার আরো সম্প্রসারিত হবে।
সভায় বিশেষ অতিথি সিলেটের দৈনিক মিরর এর উপদেষ্টা সম্পাদক ও দ্যা অ্যাপারেল নিউজ এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ বলেন- এমপি আবু জাহিরের প্রতিশ্রুত টি আলী স্যার সড়ক নামকরণের ফাইল বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর জবাবে এমপি আবু জাহির টি আলী স্যার সড়ক নামকরণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন।
হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি ও টি আলী স্যার জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং নাহিদা খান সুর্মির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ৫ জন শিক্ষককে ‘টি আলী স্যার আদর্শ শিক্ষক সম্মাননা’ প্রদান করা হয়।
যাদেরকে আদর্শ শিক্ষক সম্মাননা দেয়া হয়েছে তারা হলেন- বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বেগম আমিনা খাতুন, হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিসেস নাজমুন নাহার খাতুন, হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মজিদ, বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি প্রধান শিক্ষক মিসেস ফাতেমা বেগম ও হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারি শিক্ষক হীরেন্দ্র চন্দ্র রায়।
তাদের প্রত্যেককে নগদ ৫ হাজার টাকা ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এমপি আবু জাহির তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ টাকাসহ টি আলী স্যার স্মারকগ্রন্থ তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী তোফায়েল আহমদ সম্পাদিত ‘শিক্ষাব্রতী মহানপুরুষ টি আলী স্যার’ শিরোনামে প্রকাশিত দ্বিতীয় বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এমপি আবু জাহির। প্রথম বইটি সম্পাদনা করেছিলেন দৈনিক প্রতিদিনের বাণী সম্পাদক মোহাম্মদ শাবান মিয়া। অনুষ্ঠানে উভয় সাংবাদিককে আদর্শ সাংবাদিক সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন এমপি আবু জাহির।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত শিক্ষক ও সাংবাদিক ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আলফাজ উদ্দিন, বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার কর্মকার, হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ এর যুগ্ম আহবায়ক বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহ তাজুল ইসলাম রুমেল।
শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা গোলাম মোস্তফা ও গীতা পাঠ করেন হবিগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা শিউলী রানী দাশ। এর আগে টি আলী স্যারের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রদের একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে।
প্রায় ৩০ বছর শিক্ষকতা করেন। তম্মধ্যে স্কুলের মুসলিম হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন ২ যুগেরও বেশি। ছাত্রদের তিনি ভালবাসতেন নিজের ছেলের মতোই। এজন্য তাকে হারাতে হয়েছে অনেক। ৬ সন্তানের মৃত্যু হয়েছে প্রায় চিকিৎসা ছাড়াই। তাদের কয়েকজনের দাফনেও উপস্থিত থাকতে পারেননি স্বার্থত্যাগী এই শিক্ষাগুরু। সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এএমএস কিবরিয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও জননন্দিত কন্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীসহ অনেক গুণীজনই টি আলী স্যারের ছাত্র।গুনী এই শিক্ষকের বাড়ী সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপ গ্রামে।