­
­
শুক্রবার, ২ মে ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
মানবিক করিডর আসলে কী, বিশ্বের আর কোথায় আছে, কতটা কার্যকর?  » «   বিএনপি না জামায়াত কোন দিকে ঝুঁকছে ইসলামপন্থি দলগুলো?  » «   সুইডেনে অতর্কিত বন্দুক হামলায় নিহত ৩  » «   ইতালিতে বর্ণাঢ্য বৈশাখী উৎসব বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের  » «   ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানিতে চমক: চীনের ঘাটতি পূরণ করছে বাংলাদেশ  » «   কানাডায় লিবারেলদের জয়, কী কারণ  » «   রাখাইনের জন্য করিডর বাংলাদেশের জন্য কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?  » «   ইউরোপ ৪ দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন!  » «   ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি  » «   বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার  » «   নতুন এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ  » «   ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে উড়ল প্রথম কার্গো ফ্লাইট  » «   রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার  » «   শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানান মোদি  » «   ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ কবিতার কবি দাউদ হায়দার আর নেই  » «  

যোদ্ধা-বীরাঙ্গনা দুলু বেগম



যে যুদ্ধ করে আর যে যুদ্ধের বয়ান তৈরি করে- এই দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরের প্রজন্ম, তারা তৈরি করা বয়ান দিয়েই তো যুদ্ধ, যোদ্ধা, ইতিহাসকে চিনেছি। তাহলে এই ফারাকটা ভরাটের পথ কী?

ঠিক এই জায়গাটা থেকেই একসময় ভাবি, যোদ্ধার প্রকৃত বয়ানটাই বোধহয় সেই ফারাকটা ভরাট করে দিতে পারে। একসময় যোদ্ধার বয়ান শোনা শুরু করি। সত্যিকার অর্থেই তখন অন্য এক যুদ্ধকে প্রত্যক্ষ করি যোদ্ধার চোখে। সেই ঘোর আজও কাটেনি।

কিন্তু যোদ্ধাও তো মানুষ, সময়ের ব্যবধানে সেও নিজেকে যে পাল্টে ফেলেনি- তাই বা কে বলবে! তবু আজও মুক্তিযোদ্ধার, বীরাঙ্গণার, শরণার্থীর গল্প শুনি ঠাকুরমার ঝুলির রূপকথার মতো সরলতা, মুগ্ধতা আর শিহরণ নিয়েই।

সেই অচেনা, অজানা, অখ্যাত যোদ্ধা, যারা মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে রূপ দিয়েছিল, তাদের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা এই উত্তাল মার্চের দিনগুলোতে শুনাতে চাই ৫২বাংলায়।

যুদ্ধ সম্পর্কে দুলু বেগমের কোনো ধারণা নেই, বা বাস্তবিক অর্থে তাঁর কোনো ভূমিকাও নেই। অথচ সেই যুদ্ধই তাঁর স্বাভাবিক জীবনকে পাল্টে দিল। যুদ্ধ পরবর্তী সময়টা তাঁর কাছে একটা ঘোরের মতো।

পাকিস্তানি হানাদারদের ক্যাম্প থেকে ফেরার পর স্বামী আর ঘরে তুলেনি। দুদিন আগের পরিচিত পৃথিবীটা এক নিমিষেই অপরিচিত হয়ে উঠল দুলুর কাছে। কুড়িগ্রাম রেলস্টেশনে ঠাঁই হয় দুলুর। পেটের দায়ে পুরুষের সঙ্গে কুলির কাজও করেছেন।

অথচ যে দুলুকে কেউ ঘরে তুলেনি, সেই দুলুই ঘরে তুলেন রেললাইনে কুড়িয়ে পাওয়া একটি মেয়েকে। অনাথ শিশুটিকে মায়ের স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছেন। অভাবের কারণে পেটের ছেলেকে পড়াশোনা করাতে না পারলেও মেয়ে জবাকে তিনি পড়িয়েছেন, বিয়ে দিয়েছেন।

আচ্ছা, এটা কি এই প্রচলিত সমাজের প্রতি দুলুর কোনো গর্বিত-প্রতিশোধ? খুব সাবধানে প্রশ্ন করেছিলাম দুলুকে। দুলু কোনো উত্তর দেননি। সেদিন কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ভাঙা কোয়ার্টারে দুলুর পাশে জবাও ছিলেন। তিনিও কোনো উত্তর দেননি।

বরং জবা বললেন, তাঁর মাকে এখনও অনেক কথা শুনতে হয়। জবার মুখ থেকে কথা টেনে নিয়ে দুলু বলতে লাগলেন, ‘মানুষ মেলা কইছে। সবাইরে দেখা আছে। আগে আমি এসব কথায় কষ্ট পাইতাম। এখন গা-সওয়া হয়ে গেছে। আমি তো আর সাধে পাকিস্তানি ক্যাম্পে যাই নাই। আমার দোষ কী? আপনি কইতে থাকেন। আমার তো বাঁচতে হইবো।’

(২০১৩ সালের জুনে কুড়িগ্রামে দুলু বেগমের সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। ছবি: নিজস্ব)

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন