বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সাংবাদিক ইসহাক কাজল আর নেই। ১০ ফেব্রুয়ারী সোমবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সাড়ে ৫টায় লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।
আশির দশকের এই সাংবাদিক ও লেখক এর প্রকাশিত বই ১৬টি। ২০১৩ সালে প্রবাসে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান যুক্তরাজ্যবাসী লেখক ও সাংবাদিক ইসহাক কাজল। যুক্তরাজ্যের প্রাচীনতম সাপ্তাহিক জনমতের পলিটিকাল এডিটর হিসাবে তিনি দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন।
অসম্ভব ভালো মনের বিশিষ্ট মানুষটির জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের ব্রাহ্মণঊষার গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ আমজদ উল্লাহ ও মা সায়রা বিবি। ইসহাক কাজল চার সন্তান ( তিন মেয়ে ও এক ছেলে) এর জনক।
তিনি ব্যক্তিগত জীবনে খুব বিনয়ী এবং বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চিন্তায় খুব স্বচ্ছ এবং স্পষ্টবাদি ছিলেন। ইস্ট লন্ডনের সামাজিক সাংস্কৃতিক সভা সেমিনার উৎসবে তার স্বপ্রাণ উপস্থিতি সকলকে প্রাণীত করতো।
ছবি: ৫২বাংলা লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড ২০১৯ অনুষ্ঠানে লেখক, সাংবাদিকদের সাথে ইসহাক কাজল
ইসহাক কাজল সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন ১৯৭৮ সাল থেকে। তিনি শ্রীমঙ্গলের দৈনিক খোলা চিঠির’র বার্তা সম্পাদক, দৈনিক মৌলভীবাজার বার্তা’র নির্বাহী সম্পাদক, সিলেট ডাইজেস্টর নামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সাময়িকী সম্পাদনা করেন। বাংলাবাজার পত্রিকার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ থানার প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৭-৯৯ সালে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি শ্রীমঙ্গল ইউনিটের সভাপতি, ১৯৯৯ সালে সিলেট প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তারপর একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে, সাপ্তাহিক সিলেট কণ্ঠ, জালালাবাদ, যুগভেরী সহ উল্লেখযোগ্য প্রায় সব কয়টিতে সুনামে সাংবাদিকতা করেছেন। দৈনিক বাংলাবাজার সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি এবং ২০০০ সাল থেকে লন্ডন প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাবাজার পত্রিকা-কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় বছরের সেরা প্রতিনিধি হবার গৌরব অর্জন করেন।
ছবি :লন্ডনের সাপ্তাহিক জনমতে কাজে নিমগ্ন সাংবাদিক ইসহাক কাজল
রাজপথের সংগ্রামী মানুষটি ২০০০ সালে স্থায়িভাবে বসবাসের জন্য বিলাত চলে আসেন। ২০০০ সালের ২ মে থেকে বিলাতের প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র সাপ্তাহিক জনমতে’র সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন এবং দীর্ঘদিন পলিটিক্যাল এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিলাত থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা তৃতীয় ধারা’র তিনি প্রধান সম্পাদক ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন ইসহাক কাজল। ১৯৮৫-৮৬ সালে সিলেট প্রেসক্লাবের কার্যকরী পরিষদের সদস্য। লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির তিন মেয়াদে নির্বাচিত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং একবার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
ইসহাক কাজল সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করে গেছেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি, জেলা সংবাদপত্র হকার ইউনিয়ন ও সমবায় সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
ছবি: সংহতি গ্রন্থমেলা লন্ডন এ বিশেষ অতিথি লেখক গবেষক ইসহাক কাজল
বাংলাদেশের তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন ইসহাক কাজল। তিনি সিলেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, সিমিটারা-বিরোধী আন্দোলন, মধুবন-বিরোধী আন্দোলন, সিলেট বিভাগ আন্দোলন, মাগুরছড় গ্যাস বিস্ফোরণের ক্ষতিপূর্রণ আদায়ের আন্দোলন-সহ জাতীয়সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
ছবি: অতিথিদের কাছ থেকে ৫২ বাংলা লাইফ টাইম এ্যাচিভমেন্ট এওয়ার্ড গ্রহণ মূহুর্ত
গুণী এই লেখক প্রবাসে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৩ সালে ‘বাংলা একাডেমি প্রবাসী লেখক পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৯ সালে ব্রিটেন থেকে প্রচারিত অনলাইনটিভি ৫২বাংলা বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক কাজল কে ৫২ বাংলা লাইফ টাইম এ্যাচিভমেন্ট এওয়ার্ড প্রদান করে।
এছাড়াও বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি তাদের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিলেতে সাংবাদিকতা পেশায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ইসহাক কাজল কে – বিশেষ সম্মাননা এওয়ার্ড প্রদান করে।
ইসকাক কাজলের প্রকাশিত গ্রন্থ বাংলা: ১৬টি ।সুরমা উপত্যকার চা-শ্রমিক আন্দোলন : অতীত ও বর্তমান ( ২০০৬), বাঙালি ও বাংলাদেশ ( ২০১০),জনক তুমি বাংলাদেশ ( ২০১০), সিলেটের শিল্পী সাধক সংগ্রামী (২০১২), টি ওয়াকার্স মুভমেন্ট ইন দ্য সুরমা ভেলি (২০১২), বাংলাদেশের তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ : বিদেশি আগ্রাসন প্রকাশকাল (২০১৬) উল্লেখযোগ্য। সম্পাদনা গ্রন্থ ৬টি। এছাড়াও প্রায় ডজন খানেক সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা করেছেন গুনী এই লেখক।