আধুনিক ও নান্দনিক স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম সেরা স্থানগুলোর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাত অন্যদেশগুলোকে পেছনে ফেলে এগুচ্ছে -তা এখন পুরনো খবর। পর্যটকদের ,বিশেষ করে ইউরোপীয়দের আকৃষ্ট করতে তাদের উদ্ধাবনী চিন্তা ও চেষ্টার কমতি নেই।
দুই হাজার আঠারো সালে তাদের নতুন সংযোজন- দ্যা ইয়ার্ড। যদিও বলা হচ্ছে- এটা দুবাই‘র ল্যোকাল কমিউনিটির জন্য একটা সামাজিক আনন্দ ও অবকাশ যাপনের চিন্তায় করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, সেখানে পর্যটকদের সংখ্যাই বেশী চোখে পড়ে। এবং রোমান্টিক ক্যাপলদেরই চোখে পড়ে সবচেয়ে বেশী।
দুবাই এর Al Khawaneej -এ suburban hideaway Last Exit D89 এ নান্দনিক স্থাপত্যশিল্পের দ্যা ইয়্যার্ড এর অবস্থান। প্রকল্পটির প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ হয় দুই হাজার সতের সালে। তবে সর্বমোট ৩,৫০,০০০ স্কয়ার ফুট বর্ধিত করে আকর্ষণীয় আরও অনেক কিছু যোগ সহ খুঁটিনাটি কাজগুলো শেষ করে দর্শনার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়েছে দুই হাজার আঠারো সালের পঁচিশ জানুয়ারী । বর্তমানে যার সর্বমোট আয়তন হলো ২.৮ মিলিয়ন স্কয়ার ফুট।
দ্যা ইয়্যার্ডে’ আছে Last Exit D89 চব্বিশ ঘন্টা খোলা ফ্রি কারপার্ক, কাউট্রি সাইড কোর্টইয়্যার্ড, প্রাকৃতিক পরিবেশের সর্বোচ্চ ব্যবহারে তৈরী মনোরম লেক। চম্ৎকার লেক এর মাঝখানে আছে দুটি হাটা ও চলাচলের জন্য ব্রিজ। যেখানে দাড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করা যায় মনভরে।
হেটে উপভোগ করবার অপূর্ব সুন্দর প্রসস্থ রাস্তা, পিকনিক এরিয়া, আছে দুই রকম; এয়ারকন্ডিশন ও খোলা আকাশের রেস্তুরা এবং কিছু নিদৃষ্ট দোকান।
আছে একটি ছোট খামার ও অরর্গানিক মার্কেট, চারদিকের দেয়ালগুলোতে আছে অনেকগুলো স্থিরচিত্র।
দ্যা ইয়ার্ডের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে- ‘প্রমিস ব্রিজ‘। যেখানে ভালোবাসার চিহ্ন রাখতে নানা বয়েসি যুগলরা এসে থাকেন। প্রিয় মানুষটির সাথে ভালোবাসার বাঁধনটি চিরঅটুট রাখতে হয়তো-বা রোমান্টিক ক্যাপলরা ‘তালা –চাবি‘র প্রতীকী উপলক্ষটা ব্যবহার করেন। অর্থাৎ মনের প্রিয় অনুভূতিগুলো ইউশ করে, নিদৃষ্ট জায়গায় তালামেরে হেসে আনন্দে চাবিটি ফেলে দেন লেকের পানিতে। ইয়ার্ডের এখানটায় তরুন ও যুবা বয়েসীদের ভীড়ই বেশী চোখে পড়ে।
লেকে চোখে পড়ে ব্যাঙ-হাঁস-পাখিদের। সবগুলোই কৃক্রিমভাবে সাজিয়ে রাখা হলেও খুব কাছে গিয়ে ভালোকরে না দেখলে বুঝাই যাবেনা এগুলো – চায়নার বিখ্যাত কোম্পানীর ডিজাইন করা স্থাপত্যশিল্প।
পানিতে লাগানো হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। লাল-সাদা –মেরুন সব রঙের ফুল পুরো লেকের দৃশ্যকে করেছে বাড়তি আকর্ষণীয়।
ইয়ার্ডের লেকের ধারেই ওয়ালে আকাঁ চ্রিত্রকর্মে আছে দুবাই এর বিভিন্ন ঐতিহ্যিক বিষয়ের প্রতীকী ছবিসহ নানা বৈচিত্রের কিছু অসাধারণ দেয়ালচিত্র ও বিশিষ্টজনের পোর্ট্রেট। দেয়ালচিত্রের পাশেই লাগানো গাছগুলোতে আছে নানা রকমের পাখির বাসস্থান। এখানে স্থায়ীভাবে পাখির বাসস্থান তৈরী করে দেওয়াতে পাখিদের কলকাকলীতে ভরে রাখে আগত দর্শনার্থীদের মন।
এছাড়াও আছে ফুল দিয়ে সাজানো পুরনো গাড়ি। অদ্ভুদ সুন্দর পুরনো জিজাইনের সাইকেল। গ্রামীন খামারের দৃশ্য; যেখানে আছে –হাঁস- মোরগসহ গৃহস্থলীর নিত্যকার দৃশ্যসমূহ। দেখলে আপনাকে দাড়াতেই হবে। এইসময়ে নিশ্চিত ঘুরে আসবেন স্মৃতির মেঠোপথ ও সময়গুলো। আরও আছে, আগের দিনে নির্মাণশ্রমিক ও সেই সময়ের যান্ত্রিক যানগুলোর ক্রিয়েটিভদৃশ্য সহ নানা সামাজিক-প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী। দূর থেকে দৃশ্যপটগুলো বাস্তব মনে হলেও এগুলো কৃত্রিম ভাবেই তৈরী।
দ্যা ইয়্যার্ড কর্তৃপক্ষ এই জায়গায়টিকে কমিউনিটি ইভেন্টের মতো দেখছেন। যেখানে স্থানীয় ও পর্যটকরা যে কোন সময়ে এসে তাদের সময়টাকে আনন্দসঘন কাটাতে পারে। অনেকের জন্য সামাজিকভাবে একসাথে মিলনের জায়গা হিসাবেও স্থানীয়রা এটাকে পছন্দনীয় জায়গা হিসাবে যাতে বেছে নিতে পারে। Last Exit D89 এর আধুনিক কারপার্কটিও খোলা থাকে ২৪ঘন্টা।
এখানে বেড়াতে আসা ব্রিটেন থেকে আসা পর্যটক স্মিথ ও রোজার কাজে দিনটি অনেক ভালোলাগার প্রকাশ করে বলেন- ‘এই বছর ভ্যালেন্টাইনস ডে দুবাইতে কাটাবো বলেই আমরা দুজন এসেছি। দ্যা ইয়্যার্ড ১৪ ফেব্রুয়ারীর আগেই মনে জায়গা করে নিয়েছে। বিকালে একসাথে সময় কাটিয়ে খোলা আকাশের নিচে রেস্তোরায় ডিনার আর প্রাকৃতিক আবহের মিউজিক তুলনাহীন রোমান্টিক। ইটস ওস্যোম।’
বৃটেনবাসী সাংবাদিক কলামিষ্ট ফারুক যোশী দ্যা ইয়ার্ডের অনেকগুলো দিক নিয়েই প্রকাশ করেছেন তার আনন্দঅনুভূতি। তবে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা লেকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে রাখার দিকটি তাকে দিয়েছে বাড়তি আনন্দ- ‘এখানে বাংলাদেশকে খুঁজে পেয়েছি। তাও আলোকিত ভাবে। দ্যা ইয়ার্ডের নান্দনিক কাজগুলোতে বাংলাদেশী শ্রমিকের শ্রম আছে। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ করতে সংশিষ্টদের এইরকম সৃজনশীল জায়গাগুলোতে বেশী করে কাজ করা দরকার।’
‘প্রবাসে বাংলাদেশকে পজিটিভভাবে তুলে ধরতে যার যার অবস্থান থেকে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করা দরকার। আরব আমিরাতে বাংলাদেশীদের অনেক ভালো ভালো কাজ আছে। তবে, দুতাবাসসহ সংশ্লিষ্টদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের অর্জনগুলো গ্লোবালি প্রকাশ ও প্রচার করা দরকার। এখানে লেকের শাপলা ফুল বাংলাদেশকেই প্রতিনিধিত্ব করছে। সাথে আমাদের করছে গর্বিত’- বললেন দ্যা ইয়ার্ডে বেড়াতে নিয়ে আসা প্রবাসী সাংবাদিক,ছড়াকার লুৎফুর রহমান। আমাদের সাথে ছিলেন- ফটোসাংবাদিক জাবেদ আহমদ ও সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম। দু‘জনই মাথা উপর-নিচ করে এই দুই সাংবাদিকের কথার সাথে জোরালো সহমত পোষণ করলেন।
প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের অনেকগুলো ভিন্ন, নতুনত্বে ভরা আয়োজনে দিনটি কাটানোর জন্য যে কোন সময় আসতে পারেন-দুবাই‘র দ্যা ইয়্যার্ডে। তবে, বিকেল বেলায় আসলে ষোলকলা পূর্ণ করে দেখা ও নিজের একান্ত সময় উপভোগ করতে পারবেন।
গোধুলী আভায় হাটতে যেমন ভুরু কুচকানো দৃষ্টি থাকবেনা। তেমনি, ‘লাষ্ট প্রমিসিং‘ মুহূর্তটাতে দাড়িয়ে সময় কাটানো,পাখিদের জন্য তৈরী করে দেয়া বাসস্থানে পাখিদের আশ্রয়মূহুর্তে দলবেঁধে পাখিদের আনন্দকুজন ও তাদের রোমান্টিকতার দৃশ্যাবলী, সামনের লেকে শাপলা ফুলের পাতাগুলো জলফুয়ারার ঢেউয়ের সাথে সোনালী আভায় হলুদ -সবুজ খেলা এবং একটু পরে সূর্যডুবার মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে উজ্জ্বল করে ধরে রাখতে পারবেন। এছাড়া রাতের রেজারভিউ এর সুন্দর্য উপভোগ করে খোলা রেস্তুরাতে ডিনার করে আসার সুযোগটি-ও ভালোবাসাময় জীবনের অনন্য সময় এর সুযোগটি তো আছেই।
সবমিলিয়ে দ্যা ইয়ার্ড মন ভালো করা অদ্ভূদ সৌন্দর্যের জায়গা। যেখানে আছে প্রকৃতি, সামাজিকতা আর একান্তে জীবনটাকে কিছু সময় প্রিয়জন,স্বজনদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর নান্দনিক ও সৃজনশীল আধুনিক সব উপকরণ। মূলত এই কারণেই ইউরোপের পর্যটকদেরও উল্লেখকরার মতো ভিড় ভাড়ছে দিন দিন।
আনোয়ারুল ইসলাম অভি ; কবি, সাংবাদিক। লন্ডন