বৃহত্তর সিলেটের প্রথম সারির বীর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী- বড়লেখা)র দুইবারের সংসদ সদস্য মরহুম সিরাজুল ইসলাম স্মরণে বড়লেখার নাগরিক সমাজের উদ্যোগে এক নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বড়লেখার পানিধার মার্কেট প্রাঙ্গণে সাবেক শিক্ষক সৈয়দ সয়েফ আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আলহাজ্ব মো: শাহাব উদ্দিন এমপি।
নাগরিক শোক সভা থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, মানুষ গড়ার কারিগড় ও সাবেক এমপি মরহুম সিরাজুল ইসলামের স্মৃতিরক্ষায় বড়লেখা উপজেলায় অন্যতম একটি সড়ক বা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার নামে নামকরণের দাবি জানানো হয়।
মন্ত্রী মো: সাহাব উদ্দিন এমপি বলেছেন, জননেতা মরহুম সিরাজুল ইসলাম আমার শিক্ষা গুরু এবং রাজনৈতিক গুরু। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত জনমানুষের নেতা। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি হিসাবে তিনি জনগণের সেবায় তার জীবন ব্যয় করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সিলেট বিভাগের অন্যতম সংগঠক হিসাবে দেশের মানুষের কাছে চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবেন।
মন্ত্রী নাগরিক শোক সভায় প্রস্তাবিত দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, বড়লেখার এই কৃতি সন্তানের স্মৃতি আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে কিছু একটা করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। অচিরেই তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন,বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেব আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদ্দাচ্ছির বিন আলী, থানা অফিসার ইন-চার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম কামরান চৌধুরী, বড়লেখা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর, বড়লেখা উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান বৃন্দ এবং ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আহমদ চৌধুরী ।
বক্তারা বলেন- জননেতা মরহুম সিরাজুল ইসলাম ছিলেন তৃণমূল রাজনীতিবিদ। বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন এই রাজনীতিবিদ ছাত্রজীবন থেকে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন বলেই সিলেট ও মৌলভীবাজারে তার সময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন । তার বর্ণাঢ্য জীবন নতুন প্রজন্মের কাছে ধরে রাখলে মানুষ ভালোকাজে অনুপ্রাণিত হবেন। বক্তারা তার জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, বড়লেখার সকল স্তরে মানুষের কাছে তিনি একজন বড়মাপের জনসেবক হিসাবেই বেচে থাকবেন।
বড়লেখা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বড়লেখা পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাউন্সিলার জায়েদ আহমেদ চৌধুরী, বড়লেখা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এডভোকেট জিল্লুর রহমান, ৮ নং ওয়ার্ড পৌরসভার কাউন্সিলার জাহিদ হাসান প্রমুখ। এছাড়াও অত্রঅঞ্চলের বিভিন্ন পেশা ও সংগঠন ও প্রবীন ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত বীর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও প্রবীন রাজনীতিবিদ প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পার্লামেন্ট নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী- বড়লেখা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৬৬-৭০ সালে তিনি বড়লেখা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মেজর জেনারেল সি আর দত্ত নেতৃত্বাধীন সেক্টর -৪ এর সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
ফাইল ছবি:৫২বাংলা
পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন আইয়ুব খানের সিলেট সমাবেশে তিনি আইয়ুব খানের উপর জুতা নিক্ষেপ করেন । এতে তাঁর উপর হুলিয়া জারি হয়।
১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বড়লেখায় তিনি পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হন। ১৯৮৮ সালে বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তিতে নানা কারণে রাজনীতিতে তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।
সিরাজুল ইসলাম ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল শনিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৮ বছরে তিনি ইন্তেকাল করেন।রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম প্রায় ১৫ বছর ধরে ইউরোপ এবং আমেরিকায় নিভৃতচারী জীবন বেঁচে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন-
বীর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও রাজনীতিবিদ সিরাজুল ইসলামের স্মৃতি ধরে রাখা হোক