স্বাধীনতা অর্জনে সর্বোচ্চ অবদান ও ত্যাগ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের সাথে কারো তুলনা হয় না। জাতির জনকের আহ্বানে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বে এক অনন্য ইতিহাস রচনা করে। কিন্তু প্রাকারান্তরে সকলেই যার যার অবস্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদেরে সহায়তা করেছেন। আর সেজন্যই বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান’ বলে আখ্যায়িত করে গেছেন। ১৯৭২ সালে সেই আলোকেই বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায়িত করে গেছেন। তাই মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ও সম্মাননা শুধুমাত্র সম্মুখ সমরে নিয়োজিত সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এসব কথা উঠে এসেছে মুক্তিযোদ্ধা ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের এক মতবিনিময় সভায়।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে স্থানীয় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ জুলাই লন্ডনে ভার্চুয়ালী অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান। সভাপতি তার সূচনা বক্তব্যে সকলকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
সভা আয়োজন ও সঞ্চালনায় বিশেষ সহায়তা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান খান। তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা দেশ- বিদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর সাহায্য, সহায়তা, দোয়া নিয়ে প্রাণ হাতে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। সকলের মহান অবদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলতে চাই- বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ অভিধাটি আমাদের জন্য রেখে বাকি দেরে অন্যান্য সম্মানসূচক নাম দেয়া যেতে পারে।
বিপুল সংখ্যক অতিথি ও মুক্তিযোদ্ধাদের এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ থেকে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ কালে গঠিত ষ্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম ও বর্তমানে একমাত্র জীবিত সদস্য অধ্যাপক ডক্টর কবীর চৌধুরী, প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ।
আরো বক্তব্য রাখেন ১৯৭১-এ যুক্তরাজ্যের প্রবাসী সংগঠক শামসুদ্দিন আহমেদ এমবিই ও মোহাম্মদ শামসুদ্দিন (সাউথএন্ড)। স্থানীয় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে-র জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ আব্দুর রাকীব, বাংলাদেশী টিচার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল উদ্দিন আহমদ মিলন, যুক্তরাজ্য বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলীমুজ্জামান, সাংবাদিক সুজাত মনসুর, অ্যাডভোকেট শাহ ফারুক আহমদ, ব্যারিষ্টার হাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি – আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশে বিদেশে যারা যত ধরণের অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা হোক, তবে “বীর মুক্তিযোদ্ধা” এই পরিচয়টা শুধু মাত্র রণাঙ্গনের সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হোক — এর প্রতি সকলেই সহমর্মিতা প্রদর্শন করে বলেন, সবাইকে ঢালাও ভাবে মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করলে বরং মুক্তিযুদ্ধের বৈচিত্রকে ম্লান করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা থেকে জহিরুদ্দিন বিচ্ছু জালাল, মুহিবুল ইসলাম ইদু, এহসানুল হক মিনু, চট্টগ্রাম থেকে রুহুল আমিন মজুমদার, সিলেট থেকে সুব্রত চক্রবর্তী ও আব্দুস শুকুর এবং যুক্তরাজ্য থেকে খলিল কাজী এমবিই, এনামুল হক, সোহরাব উদ্দিন, প্রকৌশলী মেফতা ইসলাম, আব্দুল মালিক শিকদার, লোকমান হোসেন, জিয়াউল ইসলাম মাহতাব ও মাহমুদ হাসান ওবিই।
পরিশেষে যারা দেশ- বিদেশ থেকে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন, অভিমত ও সহমত জানিয়েছেন তথা যেসব কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হতে পারেননি কিন্তু একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তাঁদের সকলের প্রতি সভাপতি কৃতজ্ঞতা জানান। শোকের মাস আগষ্টের ঊষা লগ্নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূণ্য স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সভা সমাপ্ত করা হয়।