মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষকদের কল্যাণে কাজ করবে- টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন  » «   প্যারিসে জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের প্রত্যাশা- শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত  » «   ফরাসি ভাষা শিক্ষায় ‘বেসিক-ফ্রঁসে বাংলা’ অ্যাপ্লিকেশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন  » «   গবেষণা এবং শিক্ষাদানের উৎকর্ষতা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপাদান – প্রফেসর মোহাম্মদ মুশফিক উদ্দিন  » «   আনোয়ারুল ইসলাম অভির সিভিক এওয়ার্ড লাভ  » «   ভেজিটেবল অয়েলের পেছনে পাশ্চাত্যের দুর্নীতির ইতিহাস ও আমাদের করণীয়  » «   যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি চাই ক্যাম্পেইন: গ্রীনস্ট্রিটে ব্যাপক প্রচারণা  » «   যুক্তরাজ্যে ঈদে ছুটির দাবীতে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলে  সমাবেশ অনুষ্ঠিত  » «   যুক্তরাজ্যবাসী সাংবাদিক রহমত আলীকে নিয়ে বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবের অশালীন মন্তব্যের ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব  » «   যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি চাই  » «   যুক্তরাজ্যে ঈদের দিনে ছুটি চাই  » «   ঈদের ছুটি- ব্যবসায় লস নয় ব্র্যান্ডিং এর সুযোগ!  » «   দুই প্রেসিডেন্টের কথার লড়াই ও ক্রীড়াঙ্গণের থলের বিড়াল  » «   যুক্তরাজ্যে ঈদে ছুটির দাবীতে  হোয়াইটচ্যাপেলে সমাবেশ ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার  » «   পহেলা বৈশাখ থেকে অনলাইনে শতভাগ ভূমি উন্নয়ন কর  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

করোনা ভাইরাসে ম্যানচেষ্টারে মারা যাওয়া নাগরিক ইটালী ভ্রমন করা বাংলাদেশী



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ব্রিটেনে গতকাল রবিবার আরও একজন করোনাভাইরাসে মারা গেছেন। এ ভাইরাসে যে তৃতীয় ব্যক্তি মারা গেছেন, তিনি হলেন একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি। সংক্রমণ ধরা পড়ার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ম্যানচেস্টারের এক হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার ছেলে বিবিসি বাংলার মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে বর্ণনা করেছেন কীভাবে ইতালিতে বেড়াতে গিয়ে তাঁর বাবা করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছিলেনঃ

“প্রতি বছরের শুরুতে আমার বাবা ইতালিতে বেড়াতে যান দুই-তিন সপ্তাহের জন্য। এটা তার একটা প্রিয় বেড়ানোর জায়গা। কারণ বহু বছর তিনি ইতালিতে ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে ইতালি আসেন। তখন তিনি বয়সে তরুণ।

উত্তর ইতালির যে শহরে আমরা থাকতাম সেটা মিলান থেকে ৫০ মাইল দূরে। সেখান থেকে সুইজারল্যাণ্ডের সীমান্তও বেশি দূরে নয়। বহু বছর আমরা সেখানে ছিলাম। আমার জন্ম সেখানেই। বড় হয়েছি সেখানে।

পাঁচ-ছয় বছর আগে আমরা পাকাপাকিভাবে ব্রিটেনে চলে আসি। আমরা থাকি ম্যানচেস্টারের কাছে। কিন্তু আমার বাবা ইতালিতে বেড়াতে যেতে পছন্দ করতেন। আমরাও প্রতি বছর গ্রীষ্মে পরিবারের সবাই মিলে সেখানে বেড়াতে যেতাম। তবে বাবা প্রতি বছরের শুরুতে নিয়ম করে বেড়াতে যেতেন ইতালিতে তার পুরোনো শহরে । এবছরও গিয়েছিলেন।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তিনি সেখানে যান। তখনও ইতালিতে করোনাভাইরাস এত ব্যাপকভাবে ছড়ানোর কথা শোনা যায়নি। কিন্তু তিনি যে দুই সপ্তাহ ইতালিতে ছিলেন, তার মধ্যেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়। ব্যাপকভাবে সেখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ বাবা ফিরে আসলেন ইতালি থেকে। তখনও তিনি সুস্থ। কিন্তু তিন দিন পর সব যেন ওলট-পালট হয়ে গেল।

মার্চের তিন তারিখ, মঙ্গলবার। সেই মঙ্গলবারটা ছিল আর যে কোন দিনের মতোই। আমাদের বাড়ির কাছে যে হেলথ সেন্টার, বাবা সেখানে গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। এই অ্যাপয়েন্টমেন্টটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।

বাবার বয়স ছিল ৬০ বছর। তার নানা ধরনের অসুস্থতা ছিল, যা নিয়ে তিনি বেশ ভুগছিলেন। কোলেস্টেরল, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট। তবে এসবের পরও তিনি মোটামুটি ভালোই ছিলেন। তিনি একশোভাগ সুস্থ ছিলেন, এটা বলা যাবে না, কিন্তু মোটামুটি ভালো ছিলেন।

করোনাভাইরাস নিয়ে যেহেতু আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল, তাই আমি কিছু মাস্ক কিনেছিলাম। আমি আমার মা-বাবাকে বললাম, বাইরে যাওয়ার সময় যেন তারা মাস্ক পরে বের হন।

গত মঙ্গলবার বাড়ির কাছের হেলথ সেন্টারে যখন বাবা গেলেন, তখন ডাক্তার এবং নার্সরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তিনি মাস্ক পরে আছেন। তিনি বললেন, মাত্র দুদিন আগে তিনি ইতালি থেকে এসেছেন।

সাথে সাথে সেখানে আতংক ছড়িয়ে পড়লো। তাকে আলাদা করে ফেলা হলো। নর্থ ম্যানচেস্টার জেনারেল হাসপাতাল থেকে একটা জরুরি দল চলে এলো। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।

তার সঙ্গে আমাদের সেদিনই শেষ দেখা। আমরা বুঝতে পারিনি যে আর কোনদিন তার সঙ্গে আর দেখা হবে না।

হাসপাতালে প্রথম কয়েকদিন তিনি বেশ ভালোই ছিলেন। কিন্তু তারপর ডাক্তাররা বলছিলেন, তার রক্তে যথেষ্ট অক্সিজেন যাচ্ছে না। তার হার্টবিট অনিয়মিত। এভাবেই চলছিল কয়েকদিন। তারপর রবিবার তিনি মারা গেলেন।

এদিকে বাড়িতে আমাদেরও রীতিমত আলাদা করে রাখা হয়েছিল। আমরা ঘর থেকে বেরুতে পারছিলাম না। কোথাও যেতে পারছিলাম না। বাবার খবরাখবর আমরা পেতাম টেলিফোনে।

যে ওয়ার্ডে তাকে রাখা হয়েছিল, সেখানে আমরা ফোন করতাম। সেখান থেকেই আমরা খবর পেতাম। আমরা তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারতাম না।

গতকাল রবিবার সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন এলো আমাদের কাছে। তারা বললো, আধ ঘন্টা আগে বাবা মারা গেছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। খবরটা শুনে ধাতস্থ হতে আমার কয়েক ঘন্টা সময় লেগেছিল। আমার বাবাকে আমি আর কোনদিন দেখতে পাবো না!

এরকম একটা খবর যখন আপনি পান, সেটা বুঝতেই আপনার অনেক সময় লেগে যায়। আমি ছিলাম শোকাহত। আমাদের বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেল।

বাবার মৃত্যুর খবর পেলেও আমরা কিছুই করতে পারছি না, কোথাও যেতে পারছি না। কারণ আমাদের সবাইকে ‘আইসোলেশনে’ রাখা হয়েছে। প্রতিদিন পাবলিক হেলথ ইংল্যাণ্ড থেকে আমাদের সবার কাছে টেক্সট আসে। তারা জানতে চায়, আমাদের সব ঠিক আছে কীনা। আমাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো লক্ষণ আছে কীনা। প্রতিদিন আমাদের সেই টেক্সটের জবাব দিতে হয়। এখন পর্যন্ত আমরা সবাই ভালো আছি। আমাদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাসের কোন লক্ষণ নেই।

আমরা এক সপ্তাহ এই অবস্থায় আছি। আরও এক সপ্তাহ থাকতে হবে।

আমরা যেহেতু আইসোলেশনে আছি, তাই আমার বাবার জানাজা বা দাফন কোন কিছুই করতে পারছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা লাশ আরও কিছুদিন মর্গে রেখে দেবে । আরও এক সপ্তাহ পর যখন আমাদের মুক্তি মিলবে, তখন আমরা বাবার জানাজা, দাফন এগুলোর আয়োজন করতে পারবো।

আমরা এখনো জানি না, তার জানাজা-দাফন এগুলো আমরা স্বাভাবিকভাবে করতে পারবো কিনা। কারণ তিনি তো স্বাভাবিকভাবে মারা যাননি। পাবলিক হেলথ ইংল্যাণ্ড যা বলে, সেই মতই আমাদের কাজ করতে হবে।

মাত্র দুমাস আগেও আমরা জানতাম না করোনাভাইরাস জিনিসটা কী, এই ভাইরাসটাই ছিল না। এখন এই ভাইরাস আমার বাবাকে কেড়ে নিল।”

উল্লেখ্য, ব্রিটেনে ২৪৯৬০ জনের উপর পরীক্ষা করে এখন পর্যন্ত ৩১৯ জন কে পজিটিভ অর্থাৎ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।ইটালীতে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩৬৬ জনে দাাঁড়িয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন