“বঙ্গবন্ধু হত্যা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা হত্যার নামান্তর। ঐ হত্যা কান্ডের মাধ্যমে সমাজ বিকাশের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ হয়” বলেছেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য । বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে। আলোচনা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনী, রচনা প্রতিযোগিতা, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মিলিয়ে এক জাঁকজমকপূর্ণ, ভাবগম্ভীর ও আনন্দঘন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি যুক্তরাষ্ট্রের কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ব্র্যাকের প্রাক্তন ভাইস চেয়ার আহমদ মোস্তাক রাজা চৌধুরী। আরো আলোচনায় অংশ নেন সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক এএনএম মাশকাত উদ্দিন। প্রধান অতিথি তাঁর ভাষণে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালী জাতির জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। তিনি বলেন আত্মজিঞ্জাসা, আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারার নবজাগরণ সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হবে। শিশু, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন প্রজন্মের সমন্বয়ে আয়োজিত এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য তিনি আয়োজকদের সাধুবাদ জানান। অধ্যাপক আহমদ মোস্তাক রাজা চৌধুরী তার বক্তব্যে বিগত অর্ধশতকের বাংলাদেশের অর্জনের সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন আমরা অনেক সূচকেই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। বাংলাদেশ থেকে দূর্ভিক্ষ, মঙ্গা উঠে গেছে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে অগ্রসর প্রতিবেশী দেশকেও আমরা অতিক্রম করতে পেরেছি। বিখ্যাত ল্যানসেট জার্নাল প্রতিকূলতার মধ্যে অর্জিত এ সফলতাকে “বাংলাদেশ প্যারাডক্স” বলে আখ্যায়িত করেছে। তিনি বলেন “এটা আমাদের স্বাধীনতারই ফসল”। দারিদ্র দূরীকরণে বাংলাদেশ মডেল অনুসরণ করার জন্য আজ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও পরামর্শ পাচ্ছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন এতে আত্মসন্তুষ্টিতে ভোগলে চলবে না, আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে।
অপরাহ্ন ৪ টায় অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান। সভার সার্বিক সঞ্চালক ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুর রাকীব। বিশেষ অতিথি প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক এএনএম মাশকাত উদ্দিনকে পরিচয় করিয়ে দেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ চৌধুরী আর মূল বক্তা অধ্যাপক মোস্তাক চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি পংকজ ভট্টাচার্যকে পরিচয় করিয়ে দেন সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুর রাকীব। সভাপতি তার ভাষণে বলেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যের সাথে নবীন প্রজন্মের সংযোগ স্থাপন এ অনুষ্ঠানের বিশেষ লক্ষ্য। সভার প্রারম্ভে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও প্রয়াত জাতীয় বীরদের সন্মানে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন মোস্তফা কামাল উদ্দীন মিলন। অতঃপর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি ভিডিও ক্লিপ পরিবেশন করেন প্রশান্ত দত্ত পুরকায়েস্থ। সৈয়দ আবু আকবর ইকবালের সঞ্চালনায় চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনী উপস্থাপন করেন প্রশান্ত পুরকায়স্থ। শিশুদের রচনা প্রতিযোগিতা উপস্থাপন করেন রাজিয়া বেগম। অংশগ্রহণকারী সকল শিশু সহ উপস্থিত সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সুবর্ণ জয়ন্তীর স্মারক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা অংশ সঞ্চালনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান । এতে মানপত্র পড়েন ইসমাইল হোসেন ও সম্মাননা গান পরিবেশন করেন রিপা সুলতানা রাকীব। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় করিয়ে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান।