বছরের প্রথম কাল বৈশাখী ঝড়ে লন্ড-ভন্ড সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা। মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বজ্রসহ ঘূর্ণীঝড়ে কয়েক শতাধিক কাচা, আধাকাচা, পাকা, ঘরবাড়ী এবং গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। সেই সাথে শিলাবৃষ্টিতে আম ও মৌসুমী ফলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে প্রচন্ড খরায় যেখানে বোরো ধানের মাঠ ফেটে চৌচির, বসন্তের ক্রান্তি-লগ্নে বৃষ্টির ফলে সেই সব বোরো আবাদে কৃষকের চোখে-মুখে আশার সঞ্চার দেখা দিয়েছে । উপজেলার বোরো কৃষকরা বলছেন, এ বৃষ্টি কৃষি খাতে ব্যাপক সুফল বয়ে আনবে।
জানা যায়, সোমবার পবিত্র শবে বরাতের রাতে লোকজন গভীর রাতে যখন নানা ধর্মীয় এবাদতে মগ্ন, ঠিক তখনই রাত আড়াইটার দিকে মাত্র ২০ মিনিটের হালকা বৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ে লন্ড-ভন্ড হয়ে যায় উপজেলার কয়েক শতাধিক বাড়িঘর। গাছপালা, টিনের ছালা বাতাসে একস্থান থেকে অন্যস্থানে উড়ে যায়। কাল বৈশাখী বা ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে মুহর্তে তছ-নছ হয়ে পড়ে দিন-মজুর, অসহায়সহ কয়েক শতাধিক মানুষের কাচা, আধাকাচা, পাকা ঘরবাড়ী।
এছাড়া অনেক এলাকায় গাছপালা বাতাসে উপড়ে ফেলে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। সেইসাথে বৈদ্যুতিক লাইনে গাছ-পালা পড়ে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গোটা উপজেলা। প্রায় ১২ ঘন্টা পর
মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। কিন্তু এখনো অনেক স্থান বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অনেক স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টির সাথে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখিন হতে হয় বোরো চাষীদের।কালবৈশাখীর তান্ডবে মানুষের পাশাপাশি বন্য পশু-পাখির জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়েছে এমনও খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে কেউ কেউ বসন্তের এ বৃষ্টিধারা কৃষি ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হবে বলে এমন মন্তব্য করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পৌর এলাকার ঘোগারকুল মাঝপাড়া এলাকার বুদুর মিয়ার ছেলে দিনমজুর আলিম উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিনের ২ টি ঘরই একেবারে লন্ড-ভন্ড হয়ে গেছে। এ পরিবারটি বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে।শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের মেহেরপুর গ্রামের জগন্নাথ চক্রবর্তী জানান, ঝড়ে আমাদের ইউনিয়নের একাধিক বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানের বিদুৎতের লাইনও ছিড়ে গেছে।
ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের রফিক আহমদ জানান, একাধিক স্থানে ছোট বড় অনেক গাছ ঝড়ের কবলে পড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এছাড়াও অনেক জায়গায় ছোট বড় অনেক গাছ ভেঙ্গে গেছে। সদর ইউনিয়নের সাবেল আহমদ জানান, ইউনিয়নের অনেক কাচা-আধা কাচা ঘর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পৌর এলাকার ঘোগারকুল গ্রামের সাংবাদিক জাহেদুর রহমান জাহেদ জানান, আমার ঘরে বড় একটি গাছ পড়ে ভেঙ্গে গেছে ঘরের একাংশ ৷
এদিকে ঝড়ের একপর্যায়ে বজ্রপাতের কারণে ফুলবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ার আনোয়ার হোসেনের বাড়ির গ্যাস রাইজারে আগুন ধরে। খবর পেয়ে আলমপুর ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহীনির সদস্যরা সেখানে পৌছান এবং আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। এ ঘটনায় তেমন কোন ক্ষতিসাধন হয়নি বলে জানিয়েছেন এলাকার গণমাধ্যমকর্মী ফাহাদ হোসেন।
গোলাপগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম গোপাল চন্দ্র শিব জানান, পুরো উপজেলা জুড়ে সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। প্রচুর জায়গায় বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গেছে। ১০টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে, ২টি খুটি উপড়ে পড়ে গেছে। এখনো বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতসংযোগ না হলেও আমাদের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। দিন ভালো থাকলে বুধবারের মধ্যেই উপজেলা জুড়ে বিদ্যুত সংযোগ সচল করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ গোলাম কবির বলেন,চৈত্রের কালবৈশাখি ঝড়ে উপজেলার অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হচ্ছে।