মিজানুর রহমানের বাড়ী কুমিল্লা জেলার লক্ষণপুর থানার সফুরা গ্রামে। আর,এ,কে সিরামিক এ কাজ করেন। ১৪ বছর ধরে এই প্রবাসে আছেন,থাকেনও রাস আল খাইমাতে । করোনা সংকটে দেশে আটকা পড়ে অবশেষে ১০ মাস পর মরিয়া হয়ে আমিরাত ফিরছিলেন । রিটার্ন টিকেট থাকা সত্বেও আরো ২৫ হাজার টাকা দিয়ে এয়ার এ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইট যোগে ট্রাভেল এজেন্সি ও এয়ারলাইন্সের আশ্বাস পেয়ে রাস আল খাইমাহ আসেন গতরাত দেড়টায় । এরপর থেকে রাস আল খায়মাহ ( RAK) এয়ারপোর্টেই প্রায় ১০ ঘন্টা ছাড়া পেলেন ।
তিনি বলেন , টিকেটে গেছে ২৫ হাজার , কিন্তু ৪/৫ বার ঢাকায় আসা যাওয়ায় গেছে আরো ২৫ হাজারের ওপর । চাকরী নাই,আয় উপার্জন নেই,এই অবস্থায় এতগুলো টাকা খরচ করে আসতে হল ।
একই ফ্লাইটের আরেকজন কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ এর আনোয়ার হোসেন। আর এ কে সিরামিকে ডেকোরেশন এর কাজ করেন ।১০ বছর ধরে আছেন আমিরাতে । করোনা সংকটে ৭ মাস আটকা ছিলেন দেশে । ফেরার জন্য গ্রীন সিগন্যাল আর আসে না।ট্রাভেল এজেন্সি বলেছে,”সিগনাল এর সমস্যা নাই,ইতা আমরা দেইখাম” টিকেট করা থাকলেও এজেন্সিকে ৪২ হাজার টাকা দিয়ে রাস আল খাইমাহ এসে আটকা পড়ে শুয়ে বসে এয়ারপোর্টে অবর্ণনীয় কষ্টে সময় কাটিয়েছেন । বুধবার সকাল থেকে পেটে দানাপানি পড়েনি। এখন ছাড়া পেয়ে সে কষ্ট ভুলেছেন ।
একই সমস্যায় পড়া আরেক যাত্রী ময়মনসিংহের পাগলা থানার বাসিন্দা রাস আল খাইমাহ প্রবাসী মোহাম্মদ তারা মিয়া | রাত দেড়টা থেকে এয়ারপোর্টের ট্রানজিট লাউঞ্জে আটকে পড়া ৮৫-৯০ জন বাংলাদেশীর সাথে হতাশার অন্ধকার চেহারায় মেখে ঠাঁয় বসে ছিলেন । আমিরাত প্রবাসে আছেন সাড়ে নয় বছর । ৯ মাস হয়েছে তার দেশে করোনায় আটকা পড়ার । ধার দেনা করে ৭৫ হাজার টাকায় স্বাভাবিক এর চেয়ে ৩/৪ গুন বেশী টাকা দিয়ে ওয়ান ওয়ে টিকেট কিনেছেন । ৯ মাস কোন কাজকর্ম নেই,দেনা রেখে দেশ ছেড়েছেন,এখন কাজটা ফিরে পেলে কষ্টের মাঝেও থাকবে কিছুটা স্বান্তনা’ বললেন তারা মিয়া।
শুক্রবার ভোর রাত ০১-৩০টা থেকে ১০ ঘন্টা আশা নিরাশার দোলাচলে দুলতে দুলতে অবশেষে ছাড়া পেলেন বাংলাদেশী এই প্রান্তিক মানুষগুলো । তাদের সাথে যোগাযোগের পর থেকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করেছি,স্বান্তনা দিয়েছি আর বাকী কাজটা রাস আল খাইমাহ ইমিগ্রেশান কর্তৃপক্ষ করেছেন । খোঁজ নিয়ে জানা যায় গ্রীন সিগন্যাল না থাকার কারণে তাদেরকে এই সমস্যায় পড়তে হয় ।