­
­
শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
ট্রাম্পের শুল্ক ধাক্কা কীভাবে সামলাবে বাংলাদেশ  » «   ইউনূস-মোদীর প্রথম বৈঠকে হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইল বাংলাদেশ  » «   বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭% শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের, পোশাক শিল্পে বড় ধাক্কা  » «   জাফলং ঘুরতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ গেলো কিশোরের  » «   ১৭ বছর পরে জাতীয় ঈদগাহের ঈদ জামাতে সরকারপ্রধান  » «   ঈদ আসে, গাজায় আনন্দ আসে না  » «   এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া  » «   মিয়ানমারে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরও হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী  » «   ঈদযাত্রা: শুক্র ও শনিবার ঢাকা ছেড়েছে ৪১ লাখ সিমধারী  » «   তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ‘ইতিবাচক’, মোংলায় আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চায় চীন  » «   মিয়ানমারে কেন এত বড় বিধ্বংসী ভূমিকম্প, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?  » «   বাংলাদেশে সাজাপ্রাপ্ত উগ্রবাদীদের মুক্তি নিরাপত্তার জন্য ‘মারাত্মক উদ্বেগের’: ভারত  » «   চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে ঈদ রবিবার  » «   এনসিপি: অম্ল-মধুর একমাস পার, ভোটের পথে প্রস্তুতি কতদূর?  » «   চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে, ফায়ার সার্ভিসের সতর্কতা  » «  

করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশে বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্স



বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। ইউরোপের মানুষও এই ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় মাসাধিককাল ধরে বন্ধ হয়ে আছে। ফলে অর্থনৈতিক মন্দাও ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। ইউরোপের দেশ গ্রিসও এর ব্যতিক্রম নয়। গ্রিসে ইতোমধ্যে প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষ সংক্রামিত হয়েছে এবং প্রায় শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এ দেশে এক মাসেরও বেশী সময় লক-ডাউন এর কারণে জনজীবনের স্বাভাবিক গতিশীলতা একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি শ্রমজীবী মানুষেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য গ্রীক সরকার পাঁচটি ধাপে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ইউরোর অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যেখানে কর্মজীবীদের জন্য এক মাসের বেতন প্রদান, আয়কর ও সামাজিক নিরাপত্তা কর মওকুফসহ বিভিন্ন সহায়তাও থাকছে।

গ্রিসে প্রায় ৩৫ হাজার বাংলাদেশির বসবাস। তাদের বেশিরভাগই ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কৃষি, তৈরি পোশাক এবং পর্যটনের মত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিযুক্ত আছেন। করোনা ভাইরাসজনিত বিরূপ পরিস্থিতিতে এখানকার বাংলাদেশিরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। স্থানীয় গ্রিকদের মতো তারাও গ্রীক সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় রয়েছেন , ফলে তারা প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রেখেছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। প্রথমেই করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ এবং এর থেকে রক্ষা পাবার জন্য সচেতনামুলক তথ্য সমৃদ্ধ পোস্টার, লিফলেট প্রস্তুত করেছে যা গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপ ও মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাংলাদেশীদের কাছে প্রচার করা হয়েছে। পরবর্তীতে আইইডিসিআরের সহায়তায় একটি সচেতনতামূলক ভিডিওচিত্র প্রস্তুত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইনে প্রচার করা হয়েছে। প্রবাসীদের চলাচলের সীমিত করতে দূতাবাস ডাকযোগে কনস্যুলার সেবা প্রদান শুরু করে। এছাড়া দূতাবাস প্রবাসী বিভিন্ন সংগঠনকে সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে উৎসাহিত করে আসছে।

ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় প্রতিবছর বাংলাদেশীরাসহ বিপুল সংখ্যক অভিবাসী গ্রিসে অনিয়মিতভাবে প্রবেশ করেন যারা পরবর্তীতে গ্রিসে বৈধতা লাভ করেন কিংবা পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমান। সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসন বিষয়ে গ্রিক সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী গ্রিসে বৈধতা অর্জন করতে পারেননি অথবা সীমান্ত অতিক্রম করে পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেতে পারেননি। অবৈধ অভিবাসী হওয়ার কারণে এইসব বাংলাদেশীরা কর্মহীন দিন কাটাচ্ছিলেন। সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসজনিত লকডাউন এবং বৈশ্বিক অচলাবস্থার কারণে এই সমস্ত বাংলাদেশীরা ব্যাপকভাবে বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। দীর্ঘ অভিবাসন যাত্রার কারণে তারা একদিকে যেমন কপর্দকশূন্য তেমনি এখানে কর্মহীন থাকার কারণে দীর্ঘ লকডাউনে জীবনধারণের মত আর্থিক সংগতিও তাদের নেই। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অবৈধ হওয়ার কারণে তারা গ্রীক সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমেরও অন্তর্ভুক্ত নয়।

গ্রিসে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় দশ সহস্রাধিক যারা মূলত এথেন্স, থেসালোনিকিতে, মানোলাদা, লাপ্পা এবং দ্বীপাঞ্চলে বসবাস করছেন। দীর্ঘ লকডাউনে বিপর্যস্থ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তার বিষয়টি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবাসী-বান্ধব নীতির আলোকে এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে এবং তাদের সহায়তার জন্য প্রাথমিকভাবে একটি বরাদ্দের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এই সহায়তার আওতায় নিরুপায় বাংলাদেশীদের একমাসের খাদ্য সামগ্রী প্রদানের প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের সহায়তার জন্য দূতাবাসের বরাবরে ২০ লক্ষ টাকার একটি বরাদ্দ প্রদান করে। ইতোমধ্যে সহায়তা প্রদানের বিষয়টি প্রচারপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশীদের অবহিত করা হয়েছে এবং দূতাবাসের নির্ধারিত টেলিফোন নম্বরে ফোন করে বাংলাদেশী জাতীয়তা প্রমাণ সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের এই সহায়তার জন্য আবেদন করার অনুরোধ জানানো হয়। প্রায় সহস্রাধিক বাংলাদেশী নাগরিক স্বউদ্যোগে দূতাবাসের নম্বরে যোগাযোগ করে ত্রাণ তালিকায় নাম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এই নিবন্ধিত বাংলাদেশীদের ত্রাণ বিতরণের জন্য বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় ৯টি বিতরণ কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে এবং প্রতিটি নিবন্ধিত ব্যক্তিকে অনলাইনে বা টেলিফোনে একটি টোকেন নম্বর ও একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হচ্ছে যার মাধ্যমে ঐ ব্যক্তি তার আবাসস্থান থেকে নিকটবর্তী বিতরণ কেন্দ্র হতে নির্ধারিত সময়ে তার খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করতে পারবেন। এই খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমের প্রস্তুতিকালে দূতাবাস কিছু বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে, যেমন – ত্রাণ প্রদানের বিষয়টি সকল বাংলাদেশীকে অবহিতকরণ, সহজে বাংলাদেশ দূতাবাসের নাম্বারে যোগাযোগ করে নিবন্ধিত হতে পারা, ত্রানপ্রার্থীদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা, লকডাউন বিধি নিষেধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রবাসীদের থেকে ন্যূনতম দূরত্বে বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন এবং কোন সংস্পর্শ ও গনজমায়েত ছাড়াই ত্রাণ বিতরণ সম্পন্ন করা। যথাযথ প্রস্তুতি, পর্যাপ্ত তদারকি এবং প্রবাসী নেতৃবৃন্দের সহায়তায় দূতাবাস সম্পূর্ণ কার্যক্রমটি কার্যকর এবং যথাযথভাবে পরিচালনা করছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন