পেয়ে হারানোর বেদনা আসলে-ই প্রকাশ করা যায় না। নিখাঁদ ভালোবেসে যাওয়া এবং একই সঙ্গে হারানোর শুন্যতা অন্যরকম কষ্টের অনুভূতি তৈরী করে। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল থেকে ইংল্যান্ড বিদায় নিয়েছে আজ। মাত্র কয়েক ঘন্টা আগের ইংল্যান্ড আর এই মুহুর্তের ইংল্যান্ড এর মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান।
চারদিকে অদ্ভূদ নিরবতা। গলাফাটানো চিৎকার, উল্লাস- ক্যা-মন ইংল্যান্ড, ইয়্যে, ক্যা-মিং হোম -এর মতো উচ্ছাস, অনুপ্রেরণাগুলো মরে গেছে সেমিফাইনালের শেষ বাঁশিটা বাজার সাথে সাথে।
ইংল্যান্ড ভালো খেলে হেরেছে, না ভালো খেলে ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে- সেটা নিয়ে যার যার মতো যুক্তি,তর্ক,বিতর্ক থাকতেই পারে। থাকাটা খেলার-ই অন্যতম অনুসঙ্গ।
তবে, হলফ করে বলতে পারি- ইংল্যান্ড টিম গোটা ব্রিটেনের মানুষের ভালোবাসায় মনে জায়গা করে নিয়েছে। জয়- পরাজয়ের বাটখারায় ইংল্যান্ড টিম এই মুহূর্তে উচ্চারিত বা প্রচারিত হচ্ছেনা। ব্রিটেনে ন্যাশনাল টিভির ব্রডকাষ্টিং থেকে শুরু করে শহর-গ্রামের পানশালা, ষ্ট্রিট এর দোকানের সামনের ঝটলা থেকে শুরু করে বাসে,ট্রেনে,খোলা পার্কে- সবখানেই একই কথা -ওয়েল ডান বয়েজস, ল্যাভ ইউ স্যো মাচ ইত্যাদি-ই প্রকাশ পাচ্ছে ।
এ এক অদ্ভূদ ভালোবাসা। নিজের জায়গা থেকে নিজেকে মানবিক ভাবে প্রকাশ করা। দেশকে নিখাঁদ ভালোবেসে ভুলগুলো, ব্যর্থতার দিকগুলোকে সামনে না এনে, এগিয়ে যাবার প্রত্যয়গুলোকেই সামনে নিয়ে প্রেরনাময় ভালোবাসারই প্রকাশ সবখাানে।
খেলার মাঠেও প্রকাশ পেয়েছে অদ্ভূদ ভালোবাসার প্রকাশচিত্র। ব্রিটিশ দর্শক মাঠ ছেড়ে দ্রুত যায়নি। প্রচন্ড রোদ আর গরমে লাল হয়ে যাওয়া মুখে ষ্পষ্ট দেখা গেছে বিষাদ ও কষ্টের ছাপ। এর চেয়ে বড় দিক হলো,এগুলোও ছাপিয়ে প্রকাশ পেয়েছে খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে আসা পুরো ইংল্যান্ড টিমের জন্য দাড়িয়ে থেকে ভালোবাসা প্রকাশের দৃশ্যগুলো। ব্রিটিশ পুরুষরা সামনে কাঁদেনা- বলে প্রচলিত কথাটি যে সত্য নয়, টিভি ক্যামেরায় তা ধরা পড়েছে দেশের প্রতি আবেগ-ভালোবাসা প্রকাশ মুহূর্তে। তাঁরাও কেদেছে। সংখ্যাগরিষ্টের চোখ-মুখে ছিল -‘জিততে জিততে হেরে যাওয়া’র কষ্টগুলো বহনের ছাপ।
বিশ্বকাপ নিয়ে ট্রোল, মন্তব্য,প্রতিমন্তব্য, ব্যঙ্গাত্নক ভিডিও-ছবিতে ইংল্যান্ড এর ফ্যানরাও যে ছিল না। তা নয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ফুটে উঠেছে মাতৃভূমির প্রতি তাদের ভালোবাসা। নিজ দেশের বিশ্বকাপ টিম এর প্রতি ভালোবাসার বহি:প্রকাশ। ঘরে বাইরে,খেলার মাঠে সবখানেই ছিল সমান সচিত্রদৃশ্য।
সংখ্যায় খুবই নগন্য ব্রিটিশ পাওয়া যাবে যে, তারা আজকে কাজ অথবা ব্যক্তিগত মারাত্নক বা বিশেষ কারণ ছাড়া খেলা দেখেনি। বিশেষ করে গোটা ইংল্যান্ডের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা তো টিভি স্কিনেই নিমগ্ন ছিল।যা শেষ পর্যন্ত বিষাদ,কষ্ট আর চোখের জলেই আপাতত ইতি ঘটেছে।
এই ভালোবাসার ছবি, আনন্দ উচ্ছাসের প্রকাশ, শেষ বাঁশির মুহূর্তে লক্ষ লক্ষ মানুষের করুণ মুখের দৃশ্য- না দেখলে বিশ্বাসে কষ্ট হবে।
#গোল্ডেন বুট অর্জনের প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি ক্যান এর নামটি এখনও শীর্ষে আছে#
১৯৬৬ এর পর থেকে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নটি এবার হাতের নাগাল থেকেই চলে গেল। তবে আলোজাগানিয়া দেশপ্রেম, ভালোবাসা ও প্রেরণার দিক বিবেচনায় নিয়ে এবারের বিশ্বকাপ দেখলে, আভ্যন্তরীণ ভাবে, ব্রিটেনের এক অর্থে বিজয়ও আছে। বিশ্বকাপ মাতমে ব্রিটেন তাদের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে ‘ঐক্যবদ্ধ‘ ছিল। আনন্দ-কষ্ট-ভালোবাসা-প্রেরণা প্রকাশে তারা কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমীদের মন জয় করেছে সন্দেহ নেই।
লাভ ইয়্যু ইংল্যান্ড ফুটবল টিম।লাভ ইয়্যু ব্রিটিশ পিপপস; সত্যি-ই, হার-জিতে দেশকে এভাবেই প্রেরণায় -ভালোবাসায় রাখতে হয়।