বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
সাংবাদিক আব্দুল বাছিত রফির পিতা হাজী মো: আব্দুল হান্নান এর মৃত্যুতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দের শোক  » «   বাংলাদেশে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের সম্পদ সুরক্ষায় অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে  » «   ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটির উদ্যোগে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কর্মশালায় বিভিন্ন পেশার মানুষের অংশগ্রহণ  » «   হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের  বিরুদ্ধে নীতিহীন কর্মকান্ডের অভিযোগ  » «   সাংবাদিক ক্যারলকে গ্লোবাল জালালাবাদ ফ্রান্সের বিশেষ সম্মাননা প্রদান  » «   গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক জালালাবাদ উৎসব প্যারিস অনুষ্ঠিত  » «    সাকিব : নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতি  » «   লন্ডনে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী চাটগাঁয়ে মেজবান ৬ অক্টোবর রবিবার  » «   ১১তম মুসলিম চ্যারিটি রান ২০ অক্টোবর ভিক্টোরিয়া পার্কে  » «   ৭৫ শেফ এর অংশগ্রহণে বিসিএর শেফ অব দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  » «   ৩০ বছরেও ধরা পড়েনি কোনো আসামী, বিচারের দাবীতে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন  » «   ইস্টহ্যান্ডসের ফ্রি স্মার্ট ফোন পেলেন ৪০ জন  » «   সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য পদক ২০২৪’পেলেন কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক ফারুক আহমেদ রনি  » «   টাওয়ার হ্যামলেটসে হোমলেসনেস-এর প্রস্তাবিত নতুন পলিসি সাসপেন্ড করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   লন্ডনে বিসিএ এ্যাওয়ার্ডস ২৮ অক্টোবর থাকছে নানা চমকপ্রদ আয়োজন  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

লুটেরাদের ‘সেকেন্ড হোম’এবং দেশের অর্থ



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

কানাডাকে কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশের টাকা পাচারকারী লুটেরাদের নিরাপদ গন্তব্য হতে দেয়া হবে না- মর্মে অঙ্গীকার করেছেন টরন্টোয় বসবাসরত বাংলাদেশিরা। টরন্টোয় বাংলাদেশি লুটেরাদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করেছে ‘গানে-কবিতায়’। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে টাকা আত্মসাৎ করে কানাডায় পাড়ি জমানো লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে এই অঙ্গীকার করা হয়। টরন্টোর বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত সাংস্কৃতিক কর্মীদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘রুখো লুটেরা বাঁচাও স্বদেশ’ শীর্ষক গানে, কবিতায় প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে বক্তাদের এই অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে।

পরবর্তীতে এ নিয়ে এক অর্থ পাচারকারী এবং কানাডায় অর্থ দিয়ে আবাস গড়া পলাতক এক লুটেরা সলিসিটার নোটিস পাঠিয়েছেন তাদের, যারা ওই লুটেরা-দুর্বৃত্তদের মুখোশ উন্মোচন করতে সাহস নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, সেসব সংস্কৃতিকর্মীদের। আইন আইনের মতোই চলে। একজন যদি ৩০০ কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে আসে, সে সলিসিটার নোটিস দেয়ার মতো অর্থনৈতিক ক্ষমতা রাখে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করার তার নৈতিক কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু স্ত্রী-সন্তানদের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর সে তার স্ত্রী কিংবা সন্তানদের হাসিমাখা মুখের দিকে চেয়ে তার আর কিছু করারও থাকে না। একজন একাডেমিক শিক্ষিত মানুষের শত শত কোটি টাকা চুরিতে একজন স্ত্রীর সমর্থন-সহযোগিতা-অনুপ্রেরণা থাকতেই পারে, কিন্তু আমার বিশ্বাস সন্তানরা এতে অনেকটা ইনোসেন্টই থাকে। এই সন্তান যখন নিজেকে ‘চোরের সন্তান’ হিসেবে স্যোশিয়েল মিডিয়ায় দেখে, তখন তার দুঃখ করা ছাড়া আর কোনো পথও থাকে না। সেজন্য একজন টাকা আত্মসাৎকারী তার শেষ অস্ত্র হিসেবে অন্তত সন্তানদের সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চান, যা কানাডায় হয়েছে।

কানাডায় যা হচ্ছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিদেশে অর্থ পাচার করছে অনেকেই। আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী সবাই এ পাচারকারীর লিস্টে আছেন। একজন টাকাওয়ালা কিংবা ব্যবসায়ী তার ব্যবসাকে আরো বহির্মুখী করতে কিংবা আরো মুনাফানির্ভর করতে অর্থ বিদেশে বিনিয়োগ করতেই পারেন। পৃথিবীর সব দেশের ব্যবসায়ীরাই এটা করেন। যা রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনসিদ্ধও। সে হিসেবে বাংলাদেশের অর্থ বাইরের দেশে গেলে এটা অপরাধ হিসেবে ধরে নেয়া যায় না। কিন্তু ‘পাচার’ শব্দটার সঙ্গে চুরি-হুন্ডি-কালোবাজারি তথা অনৈতিকতার বিষয়টিই চলে আসে। এবং এই অনৈতিকতাই চলছে বাংলাদেশের অর্থ নিয়ে।

বাংলাদেশে বিত্তশালী মানুষের আকাল নেই। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের চোখ ধাঁধানো অর্জন আছে বিভিন্ন দেশে। ব্রিটেনেও দেখিছি। আমি যে এলাকায় থাকি, সে এলাকার একটা হোটেল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গত প্রায় পাঁচ বছর আগে (২০১৫ সালে) ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে কিনে নিয়েছেন একজন বাংলাদেশি (নন-ব্রিটিশ) ব্যবসায়ী। ৭ একর জায়গার ওপর দাঁড়ানো মনোরম এই হোটেলটি চেশায়ারের স্টকপোর্ট এলাকার বিনোদনের জন্য একটা ভালো জায়গা। স্থানীয় প্রশাসন বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে, কারণ তিনি তখন ২৫০ জন মানুষের চাকরি বাঁচিয়েছিলেন। ১৪ মিলিয়ন পাউন্ডের দেনা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি যখন দেউলিয়া হচ্ছিল, তখন তিনি এগিয়ে এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, আরো এক মিলিয়ন পাউন্ডের কাজ করিয়েছিলেন এই তারকাচিহ্নিত হোটেলে।

বাংলাদেশের একজন সাবেক খ্যাতিমান ছাত্রনেতা (এখনো বিএনপির প্রভাবশালী নেতা) ব্রিটেনে এক সময় বাড়ি কিনতে ধরনা দিয়েছেন, তার আত্মীয় বাড়ি কিনতে রাজি হননি। কারণ তার আত্মীয় এই নগদ অর্থের উৎস দেখাতে পারবেন না, তাই। বর্তমানে একজন সাবেক প্রভাবশালী ছাত্রনেতা তো বাংলাদেশ থেকে এখানে পাড়ি জমিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে বিস্তর। ব্যাংকের অর্থ তিনি আত্মসাৎ করেছেন, তার রাজনৈতিক পরিচয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, পরে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছেন এবং বিনিয়োগ করেছেন। এ নিয়ে লেখালেখি হয়েছে, চলছে। নিজের পুরনো ইজ্জত টিকিয়ে রাখতে তিনিও ক’দিন আগে মুখ খুলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন সমালোচনাকারীদের, কারণ তিনি মামলায় যাবেন না। যদিও আমরা বুঝি কিংবা জানি, তার দৌড় আর কতটুকুই হবে, আর সেজন্যই সে আইনের দৌড় থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। আজকাল তাকে পার্টির কার্যক্রমেও দেখা যায় না। লন্ডনের কোনো নেতাকর্মী তাকে নিয়ে খুব একটা আর ছবিটবিও দেয় না। কারণ ওপর থেকে তার ওপর আগের সেই হাত নেই হয়তো।

এভাবে উদাহরণ দেয়া যাবে অনেক। গত তিন বছরে মালয়েশিয়া সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিদেশির জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ। বিএনপি আমলে একটা কথা প্রচলিত ছিল মালয়েশিয়াকে সেকেন্ড হোম করেছে সে সময়ের ক্ষমতায় ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা রাজনীতিবিদরা। নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা এটা করতে পেরেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে এ সময়ে আরো বেশি হয়েছে সেকেন্ড হোম। আর এখন দেখা যাচ্ছে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া হয়ে যাচ্ছে অনেকের সেকেন্ড হোম। এই সেকেন্ড হোম বানাতে বাংলাদেশি মানুষগুলো এত অর্থ পায় কোথায়, তা কি জানে বাংলাদেশের সরকার। এই অর্থ তারা কীভাবে আয় করেছে, কীভাবেই বা পাচার করছে এর হিসাব নেই বাংলাদেশের কাছে, ব্যাংক থেকে এরা হাজার হাজার কোটি টাকা লোন নিয়েছে অথচ এই টাকাই পাঠিয়ে দিয়ে ‘পৃথিবীর বিলাস’ কিনছে পশ্চিমের দেশগুলোতে। বাংলাদেশের মানুষের অর্থ এগুলো। কতিপয় রাজনীতিবিদ-চাকরিজীবীদের এত অর্থ প্রাপ্তির কোনো উৎস দেখা যায় না, কারণ এদের অনেকেরই বিশাল অঙ্কের অর্থ উপার্জনের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই। চাকরি করে তো শত-সহস্র কোটি টাকা শেষ জীবনে সঞ্চয়ও হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এরাই যখন শত-সহস্র কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে আসে তখনই বাংলাদেশের মানুষ প্রশ্ন তুলে, কারণ এ অর্থগুলোতে বাংলাদেশের মানুষের শ্রম-ঘামের গন্ধ থাকে।

বিদেশে টাকা পাচার শুধু যে বাংলাদেশের লুটেরাই করছে, যদিও তা নয়। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনে ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৪৮টি উন্নয়নশীল দেশের অর্থ পাচারের তথ্য উঠেছে। এ সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। যার মাঝে এমনকি মালয়েশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশটা থেকেও ৩ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার শুধু ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে। বিদেশে টাকা পাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। এক নম্বরে আছে ভারত। জিএফআই-ই এ তথ্য দিয়েছে।

এই প্রতিবন্ধকতার বিপরীতেই দাঁড়িয়েছেন কানাডার সংস্কৃতিকর্মীরা। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যারা বিদেশে বুক ফুলিয়ে হাঁটেন, তারা এ উদ্যোগ নিচ্ছেন না। অথচ তাদেরই এ উদ্যোগ নেয়ার কথা ছিল। কারণ সরকারের উন্নয়নে এরাই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সরকারের উন্নয়ন- স্লোগানকে এরাই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাই দেশের প্রয়োজনেই শুধু নয়, রাজনৈতিক প্রয়োজনেও এই লুটেরাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যেতে পারে। সংস্কৃতিকর্মীরা উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উদ্যোগ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় নিতে পারেন অভিবাসী বাঙালিরা। আর এদের সঙ্গে সুস্থ চিন্তার রাজনৈতিক নেতাদেরও তো এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে লুটেরাদের সহযোগী হিসেবে নিজের অবস্থান না থাকলেও মানুষের সন্দেহ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন না প্রবাসের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে একেকজন রাজনীতির মানুষের এ বিষয়ক উচ্চারণ লুটেরাদেরও অবস্থান সুসংহত হতে দেবে না এই সেকেন্ড হোমে। একজন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ গড়তে পারছে বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি রাজনীতির রাজনীতিবিদরা, অথচ এ যুগে একজন লুটেরা যা করছে, তা সেকালের রাজাকার কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও ভয়ঙ্কর দেশের উন্নয়ন পরিক্রমায়। এই ভয়ঙ্কর দেশদ্রোহীদের রুখতে এই প্রবাসে সম্মিলিত ঘৃণা প্রদর্শন অন্তত আমরা করতেই পারি।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক, প্রধান সম্পাদক; ৫২বাংলাটিভি ডটকম


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক