ঢাকা ১০:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জানাজায় মানুষের ঢল, ওসমান হাদিকে শেষ বিদায় মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাপতি এ কে খন্দকার আর নেই জাপা নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাড়িতে আগুন হামলার সময় সাহায্য চেয়েও না পাওয়া অভিযোগ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের  দেশে আজও আগুন, পুড়লো উদীচী কার্যালয় ওসমান হাদির দাফন জাতীয় কবির পাশে, জানাজা শনিবার সংসদের সামনে ছায়ানট ভবনে হামলা: জাতীয় সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ, হামলাকারীদের ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করার ঘোষণা ধর্ম নিয়ে ‘কটূক্তির’ অভিযোগে ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, লাশ গাছে ঝুলিয়ে আগুন ২৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার বন্ধ থাকল প্রথম আলো, কর্মীদের মানববন্ধন এক রাতে নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ: ২ সংবাদপত্র বন্ধ, সম্পাদক আক্রান্ত, ৩২ নম্বর, ছায়ানট, ভারতীয় হাই কমিশনের ৩ শাখায় আগুন 

মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাপতি এ কে খন্দকার আর নেই

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:১৪:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 23
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাপতি, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার বীরউত্তম আর নেই; তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৯৬ বছর।

সাবেক এই এয়ার ভাইস মার্শাল বার্ধক্যজনিত কারণে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মারা গেছেন বলে আইএসপিআরের এক বার্তায় জানানো হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরে এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে পরিকল্পনামন্ত্রী হন।

এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে পাবনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছর শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এ কে খন্দকার।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০১১ সালে এ কে খন্দকারকে স্বাধীনতা পদক দেয় সরকার।

২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভুল তথ্য থাকায় তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। সে সময় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়েন এ কে খন্দকার।

প্রকাশের চার বছর পর ২০১৯ সালে তিনি বইটির একটি অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করে নেন এবং ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য জাতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার কাছে ক্ষমা চান।

এ কে খন্দকারের পৈত্রিক বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা গ্রামে হলেও তার জন্মস্থান রংপুরে। বাবার এ কর্মস্থলে ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি তার জন্ম। বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফের চাকরির সুবাদে তার পড়ালেখার হাতেখড়ি হয় নওগাঁ মিউনিসিপ্যাল স্কুলে।

এরপর ১৯৪৭ সালে মালদহ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাস করেন। ঢাকা আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান বুয়েট) অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন, কমিশন পান ১৯৫২ সালে।

১৯৫১ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত বিমান বাহিনীর বিভিন্ন পদমর্যাদায় পশ্চিম পাকিস্তানে কাটে একে খন্দকারের। ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ঢাকা ঘাঁটিতে উইং কমান্ডার হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। সেই সময়ের উত্তাল দিন খুব কাছ থেকে দেখেন।

এরপর একাত্তরের ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়। ২৮ মার্চ এ কে খন্দকার ২ সপ্তাহের জন্য ছুটির আবেদন করেন এবং তা মঞ্জুর হয়।

তারপর তিনদফার চেষ্টায় ১৫ মে তিনি পরিবার ও বিমান বাহিনীর কয়েকজন বাঙালি কর্মকর্তাকে নিয়ে ভারতের আগরতলায় পৌঁছান। এরপর কলকতায় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এবং কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে।

এরপর ভারতের নাগাল্যান্ডে ২ মাস প্রশিক্ষণ শেষে ভারতের দেওয়া ৩টি বেসামরিক বিমান ও কয়েকজন বাঙালি বৈমানিক নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।

ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর সরাসরি যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বৈমানিকরা শত্রুর বিরুদ্ধে বেশ কিছু সফল আক্রমণ পরিচালনা করেন।

স্বাধীনতার পর এ কে খন্দকার প্রধান হিসেবে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পরে তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাপতি এ কে খন্দকার আর নেই

আপডেট সময় : ০৩:১৪:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাপতি, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার বীরউত্তম আর নেই; তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৯৬ বছর।

সাবেক এই এয়ার ভাইস মার্শাল বার্ধক্যজনিত কারণে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মারা গেছেন বলে আইএসপিআরের এক বার্তায় জানানো হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরে এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে পরিকল্পনামন্ত্রী হন।

এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে পাবনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছর শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এ কে খন্দকার।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০১১ সালে এ কে খন্দকারকে স্বাধীনতা পদক দেয় সরকার।

২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভুল তথ্য থাকায় তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। সে সময় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়েন এ কে খন্দকার।

প্রকাশের চার বছর পর ২০১৯ সালে তিনি বইটির একটি অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করে নেন এবং ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য জাতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার কাছে ক্ষমা চান।

এ কে খন্দকারের পৈত্রিক বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা গ্রামে হলেও তার জন্মস্থান রংপুরে। বাবার এ কর্মস্থলে ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি তার জন্ম। বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফের চাকরির সুবাদে তার পড়ালেখার হাতেখড়ি হয় নওগাঁ মিউনিসিপ্যাল স্কুলে।

এরপর ১৯৪৭ সালে মালদহ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাস করেন। ঢাকা আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান বুয়েট) অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন, কমিশন পান ১৯৫২ সালে।

১৯৫১ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত বিমান বাহিনীর বিভিন্ন পদমর্যাদায় পশ্চিম পাকিস্তানে কাটে একে খন্দকারের। ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ঢাকা ঘাঁটিতে উইং কমান্ডার হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। সেই সময়ের উত্তাল দিন খুব কাছ থেকে দেখেন।

এরপর একাত্তরের ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়। ২৮ মার্চ এ কে খন্দকার ২ সপ্তাহের জন্য ছুটির আবেদন করেন এবং তা মঞ্জুর হয়।

তারপর তিনদফার চেষ্টায় ১৫ মে তিনি পরিবার ও বিমান বাহিনীর কয়েকজন বাঙালি কর্মকর্তাকে নিয়ে ভারতের আগরতলায় পৌঁছান। এরপর কলকতায় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এবং কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে।

এরপর ভারতের নাগাল্যান্ডে ২ মাস প্রশিক্ষণ শেষে ভারতের দেওয়া ৩টি বেসামরিক বিমান ও কয়েকজন বাঙালি বৈমানিক নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।

ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর সরাসরি যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বৈমানিকরা শত্রুর বিরুদ্ধে বেশ কিছু সফল আক্রমণ পরিচালনা করেন।

স্বাধীনতার পর এ কে খন্দকার প্রধান হিসেবে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পরে তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়।