ঢাকা ১০:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
খালেদা জিয়া ‘বিমান ভ্রমণে সক্ষম নন’, মত মেডিকেল বোর্ডের শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন ভারতে কতদিন থাকবেন, জানালেন জয়শঙ্কর আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত

শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন ভারতে কতদিন থাকবেন, জানালেন জয়শঙ্কর

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৪:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 59

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানকে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে সেই ‘পরিস্থিতি’, যার মুখোমুখি হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে গত বছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলন দমনে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে গত মাসে তার অনুপস্থিতিতেই ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে তাকে ফেরত চেয়ে ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিক চিঠিও পাঠায় ঢাকা।

শনিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে এনডিটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক রাহুল কানওয়ালের সঙ্গে আলাপে জয়শঙ্করের কাছে জানতে চাওয়া হয়— শেখ হাসিনা ‘যতদিন ইচ্ছা ততদিনই’ ভারতে থাকতে পারবেন কি না।

জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা কিন্তু ভিন্ন ধরনের প্রশ্ন, তাই না? তিনি এক বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছেন। তাকে ঘিরে যা কিছু ঘটছে, সেটির স্পষ্ট প্রভাব এই পরিস্থিতির ওপর পড়েছে বলে আমি মনে করি। তবে শেষ পর্যন্ত এটি এমনই একটি বিষয়, যার সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।”

নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেশী দেশে বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দেন জয়শঙ্কর।

বাংলাদেশের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আমরা যেটুকু শুনেছি— বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাদের আগের নির্বাচনগুলো নিয়ে অসন্তোষ ছিল।

“এখন যদি নির্বাচনই ইস্যু হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম কাজ হওয়া উচিত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।”

এতদসত্ত্বেও ভবিষ্যৎ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আশাবাদী মনোভাব প্রকাশ করেন তিনি।

গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের অবস্থান তুলে ধরে জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মঙ্গল চাই। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমরা মনে করি, যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র জনগণের ইচ্ছা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জানার সুযোগ করে দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা সম্পর্কের বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপক্ক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখবে এবং আশা করছি— পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।”

জুলাই আন্দোলনের পর ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও তার সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কামালও বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

রায় ঘোষণার দিনই তাদের ফেরত পাঠাতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানায় বাংলাদেশ সরকার।

২৩ নভেম্বর ভারতকে কূটনৈতিক পত্র পাঠানো হয়, যা তিন দিন পর প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে দিল্লি। তবে শেখ হাসিনা ও কামালকে ফেরত দেওয়া হবে কি না— সে বিষয়ে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

এর আগে বিচার নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল, যার কোনো জবাব পায়নি ঢাকা।

এদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করার’ অভিযোগ তুলেছে ইউনূস সরকার।

অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ‘নিরাপত্তাহীনতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ‘ভুল তথ্য’ ও ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণার’ অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সরকার।

কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পাশাপাশি সীমান্ত, বাণিজ্য এবং দিল্লি থেকে দেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি তলবের ঘটনাও ঘটেছে।

এ অবস্থার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কেও বিরূপ প্রভাব পড়ে— সর্বশেষ ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আমদানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত।

সাম্প্রতিক উত্তেজনার ধারাবাহিকতায়, দিল্লিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়া সীমিত রাখার অনুরোধে ১২ নভেম্বর ঢাকায় ভারতের উপ–হাই কমিশনারকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন ভারতে কতদিন থাকবেন, জানালেন জয়শঙ্কর

আপডেট সময় : ০৬:৩৪:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানকে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে সেই ‘পরিস্থিতি’, যার মুখোমুখি হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে গত বছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলন দমনে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে গত মাসে তার অনুপস্থিতিতেই ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে তাকে ফেরত চেয়ে ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিক চিঠিও পাঠায় ঢাকা।

শনিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে এনডিটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক রাহুল কানওয়ালের সঙ্গে আলাপে জয়শঙ্করের কাছে জানতে চাওয়া হয়— শেখ হাসিনা ‘যতদিন ইচ্ছা ততদিনই’ ভারতে থাকতে পারবেন কি না।

জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা কিন্তু ভিন্ন ধরনের প্রশ্ন, তাই না? তিনি এক বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছেন। তাকে ঘিরে যা কিছু ঘটছে, সেটির স্পষ্ট প্রভাব এই পরিস্থিতির ওপর পড়েছে বলে আমি মনে করি। তবে শেষ পর্যন্ত এটি এমনই একটি বিষয়, যার সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।”

নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেশী দেশে বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দেন জয়শঙ্কর।

বাংলাদেশের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আমরা যেটুকু শুনেছি— বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাদের আগের নির্বাচনগুলো নিয়ে অসন্তোষ ছিল।

“এখন যদি নির্বাচনই ইস্যু হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম কাজ হওয়া উচিত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।”

এতদসত্ত্বেও ভবিষ্যৎ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আশাবাদী মনোভাব প্রকাশ করেন তিনি।

গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের অবস্থান তুলে ধরে জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মঙ্গল চাই। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমরা মনে করি, যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র জনগণের ইচ্ছা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জানার সুযোগ করে দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা সম্পর্কের বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপক্ক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখবে এবং আশা করছি— পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।”

জুলাই আন্দোলনের পর ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও তার সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কামালও বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

রায় ঘোষণার দিনই তাদের ফেরত পাঠাতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানায় বাংলাদেশ সরকার।

২৩ নভেম্বর ভারতকে কূটনৈতিক পত্র পাঠানো হয়, যা তিন দিন পর প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে দিল্লি। তবে শেখ হাসিনা ও কামালকে ফেরত দেওয়া হবে কি না— সে বিষয়ে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

এর আগে বিচার নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল, যার কোনো জবাব পায়নি ঢাকা।

এদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করার’ অভিযোগ তুলেছে ইউনূস সরকার।

অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ‘নিরাপত্তাহীনতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ‘ভুল তথ্য’ ও ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণার’ অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সরকার।

কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পাশাপাশি সীমান্ত, বাণিজ্য এবং দিল্লি থেকে দেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি তলবের ঘটনাও ঘটেছে।

এ অবস্থার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কেও বিরূপ প্রভাব পড়ে— সর্বশেষ ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আমদানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত।

সাম্প্রতিক উত্তেজনার ধারাবাহিকতায়, দিল্লিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়া সীমিত রাখার অনুরোধে ১২ নভেম্বর ঢাকায় ভারতের উপ–হাই কমিশনারকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।