পঞ্চাশোর্ধ্ব সাচ্চু মিয়া অভাবের তাড়নায় জরাজীর্ণ ঘর মেরামত করতে না পেরে চার বছর আগে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকায়। সেখানে টাকা রোজগার করে ফিরে এসে গত শুক্রবার ঘর মেরামত কাজে হাত দিয়েছেন। সাচ্চু মিয়ার প্রতিবেশী স্বপন দেবের ঘর বসবাস অনুপযোগী থাকায় তিনিও (স্বপন) চলে গেছেন অন্যত্র। শুধু স্বপন দেব নন, আশপাশের অর্ধশত নিম্ন আয়ের পরিবার একই সমস্যায় পড়ে ঘর ছেড়েছেন। যারা এখানে বসবাস করছেন, তারাও রয়েছেন নানা সমস্যায়। কারও ঘরের চালা নষ্ট, কারও খুলে গেছে বেড়ার টিন। বৃষ্টি হলে বিড়ম্বনার শেষ নেই। সামর্থ্য অনুযায়ী কেউ কম দামি টিন আবার কেউ পলিথিন দিয়ে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন। আর যাদের সামর্থ্য নেই, তারা বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। এমন চিত্র নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রাজাপুর আবাসন প্রকল্পের। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে দিন দিন বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এ আবাসন প্রকল্পের প্রতিটি ঘর। ফলে এখানে বসবাসকারী ৭০টি পরিবার পড়েছে বিপাকে।
ভূমিহীন, অসহায়, দরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য ২০০৭ সালে কলমাকান্দা-পাঁচগাঁও সড়কের পূর্বদিকে রাজাপুর এলাকায় আট একর ৩২ শতাংশ জায়গায় রাজাপুর আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এর পরের বছর ২৭ আগস্ট ১২০টি পরিবারকে সেখানে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই ওই আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলোতে ব্যবহূত টিনে মরিচা পড়তে থাকে। ক্রমেই মরিচা বেড়ে চালার টিন ছিদ্র হতে থাকে। ফলে বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতর পানি পড়ে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এ আবাসন প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই ব্যবহারের অনুপযোগী। রয়েছে স্যানিটেশনসহ পানীর সমস্যা। ১৫টি নলকূপের মধ্যে ১৩টিই অকেজো। আবাসন প্রকল্পের উভয় পাশে হাওর থাকায় এবারের বন্যায় বেশকিছু জায়গা সোনাডুবি হাওরে বিলীন হওয়ার পাশাপাশি টয়লেটগুলো ভেঙে গেছে। ফলে নিজ খরচে তাদের আলাদা করে টয়লেট স্থাপন করতে হয়েছে। পানির সমস্যা সমাধানে নিজেরাই বসিয়েছে নলকূপ।
আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী শেখ আলী উসমান জানান, এখানে বসবাসকারী প্রত্যেকেই নিম্ন আয়ের মানুষ। দিনমজুর, রিকশা ও ট্রলি চালিয়ে কোনো রকমে জীবনযাপন করে। সরকারি সহযোগিতা না পেয়ে অনেকেই নিজের টাকায় ঘর মেরামত করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
সীতা রানী দাস নামে আরেক বাসিন্দা জানান, বন্যার কারণে ল্যাট্রিনের সিঁড়ির গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে। ল্যাট্রিনে উঠতে গিয়ে সিঁড়ি ভেঙে তিনি পায়ে ব্যথা পেয়েছেন। তাই আবাসন প্রকল্পের জরাজীর্ণ সমস্ত কিছু মেরামত করে দেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে কলমাকান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
কলাকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক ৫২ বাংলা টিভিকে বলেন, এবিষয়টি নিয়ে জেলা সমন্বয় সভায় কথা বলেছি। দরিদ্র পরিবারগুলোর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এডিপি থেকে বরাদ্দ দিয়ে এটি সংস্কার করা যায় কিনা তাও ভেবে দেখা হচ্ছে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা ৫২ বাংলা টিভিকে বলেন, আমি ইতিমধ্যেই সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সংস্কারের জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তা মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলেই সংস্কার করা হবে।