­
­
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
বিনিয়োগ সম্মেলনে কেমন সাড়া পেলো বাংলাদেশ?  » «   আরবদের হটিয়ে যেভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল  » «   ২০২৪ সালে লন্ডন ছেড়েছেন ১১ হাজার ধনী, কোথায় যাচ্ছেন তাঁরা  » «   জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নেমে আসবে: গভর্নর  » «   মডেল মেঘনা বিশেষ ক্ষমতা আইনে জেলে, অভিযোগ ছাড়াই আটকের যৌক্তিকতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন  » «   ‘আলোয় আলোয় মুক্তির’ সন্ধানে বর্ষবরণ করবে ছায়ানট  » «   মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলে গেল  » «   যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ: বিপজ্জনক খেলা, পথ নেই পিছু হটার  » «   বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশ ক্রেজি আইডিয়ার দেশ  » «   প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি  » «   নাসার সাথে চুক্তি, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা জোটে যুক্ত হলো বাংলাদেশ  » «   সারা দেশে সরকারি ফার্মেসি চালু করছে সরকার  » «   ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ থেকে বাটা-কেএফসি ভাংচুর : ৪ মামলা, গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান  » «   গাজায় গণহত্যা: ছয় জেলায় বাটা-কেএফসিতে হামলা-ভাঙচুর, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ  » «   গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে, সংকুচিত হয়ে পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা  » «  

ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে থাকবে কোভিড জেনারেশানের জিসিএসই, এ লেভেল ও বিটেক রেজাল্ট !



 

রেজাল্ট কেলেঙ্কারীর স্মৃতি শিক্ষার্থীদের বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন

লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী, মা – বাবা ও অভিভাবকদের দীর্ঘ নির্ঘুম প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে একযোগে চলতি বছরের গ্রীস্মকালীন জিসিএসই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। “এ লেভেল” পরীক্ষার ফলাফল কেলেঙ্কারীর সপ্তাহখানেকের মাথায় এই ফল বেরুলো। বৃহস্পতিবার, ২০শে অগাস্ট জিসিএসই শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত মনে তাদের বাদামি খাম (Brown envelope) খোলে। ফলাফল দেখে সিংহ ভাগ শিক্ষার্থী আনন্দ – উল্লাসে ফেটে পড়ে। কারন “এ লেভেল” ফলাফল জালিয়াতির পর তারা ভীষণ শংকিত ছিলো তাদের গ্রেড নিয়ে। তবে কাঙ্খিত কিংবা প্রত্যাশার চেয়েও ভালো গ্রেড অর্জন করায় শিক্ষার্থীদের চোখে – মুখে উচ্ছাসের দ্যুতি লক্ষ্য করা গেছে।

এবারে রেকর্ড পাস রেট (Pass rate) নিয়ে জিসিএসই ফল প্রকাশিত হলো। “আলগারিদম” (Algorithm) ফর্মুলাকে অনুসরণ না করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা “অফকল এবং এক্সামবোর্ডগুলো ” স্কুল ও কলেজ থেকে পাঠানো শিক্ষকদের অনুমানভিত্তিক গ্রেডকে বিবেচনায় এনে চুড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে। ফলে এ লেভেল শিক্ষার্থীদের মতো জিসিএসই পরীক্ষার্থীরা তেমন প্রতারণার শিকার হয়নি। ইংল্যান্ডে এবার পাশের হার শতকরা ৭৯ ভাগ। গত বছর ছিলো যা শতকরা ৬৯ দশমিক ৯ ভাগ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় গ্রেড ৪ বা তার অধিক বেড়েছে শতকরা ৯ ভাগ। আর গ্রেড ৭ বা তার অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ২৫ ভাগ। যা গত বছর ছিলো ২০ দশমিক ৭ ভাগ। এবার মূল বিষয় যেমন অংক এবং ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বছরের তুলনায় খুব ভালো করেছে।

এ বছর ইংরেজি বিষয়ে গ্রেড ৪ বা পাস গ্রেডের হার শতকরা ৮০ দশমিক ২ ভাগ। যা গত বছর ছিলো ৭০ দশমিক ৫ ভাগ। একই বিষয়ে গ্রেড ৭ বা তার অধিক গ্রেডের হার শতকরা ২৩ দশমিক ৫ ভাগ। যা গত বছর ছিলো ১৭ দশমিক ৪ ভাগ। অন্যদিকে এ বছর অংক বিষয়ে গ্রেড ৪ বা পাস গ্রেডের হার শতকরা ৭২ দশমিক ২ ভাগ। যা গত বছর ছিলো ৭১ দশমিক ৫ ভাগ। একই বিষয়ে গ্রেড ৭ বা তার অধিক গ্রেডের হার শতকরা ২৪ দশমিক ৩ ভাগ। যা গত বছর ছিলো ২০ দশমিক ৪ ভাগ।

ওয়েলসে “এ ষ্টার টু সি ” গ্রেড পেয়েছে শতকরা ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি ভালো ফলাফল অর্জনের রেকর্ড। এদের মধ্যে শতকরা ২৬ ভাগ শিক্ষার্থী “এ ষ্টার টু এ ” গ্রেড লাভ করেছে। অন্যদিকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে শতকরা ৮৯ ভাগ শিক্ষার্থী “এ ষ্টার টু সি ” গ্রেড পেয়েছে। গত বছর যা ছিল শতকরা ৮২ ভাগ। অর্থাৎ টপ রেজাল্ট বেড়েছে শতকরা ৫ দশমিক ৭ ভাগ।

অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রকাশিত ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করলেও কেউ কেউ প্রাপ্ত ফলাফলে খুশি হতে পারেনি। এসব শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বলছে যে, স্কুল বা কলেজ থেকে শিক্ষকরা তাদের অনুমানভিত্তিক গ্রেডকে এক বা দুই ধাপ অবনমিত (ডাউন গ্রেডেড) করে এক্সাম বোর্ডে পাঠিয়েছে। ফলে আশানুরূপ ফল তারা অর্জন করতে পারেনি। তাদের মতে, পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারলে তারা আরো উন্নত ফলাফল অর্জন করতে পারতো। কারন মক পরীক্ষার(Mock exam) পর তারা চূড়ান্ত পরীক্ষাকে সামনে রেখে আদা – জল খেয়ে তাদের রিভিশান আরম্ভ করেছিল। কোভিড – ১৯ এর কারণে পরীক্ষা বাতিল না হলে তাদের রেজাল্ট নিঃসন্দেহে আরো কয়েকগুন ভালো হতো তা বলা বাহুল্য। কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে আলাপ করে এও জানতে পারলাম যে, শিক্ষকের সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকায় তাদের কোনো কোনো সহপাঠী ফলাফল বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। আবার কোনো কোনো স্কুলে বা কলেজে মক পরীক্ষা হয়নি। সে ক্ষেত্রে ইয়ার টেন এর রেজাল্ট, ইয়ার ইলেভেনের ক্লাস পারফরমেন্স এবং কোনো কোনো বিষয়ে কোর্সওয়ার্ক এসেসমেন্ট এর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষকরা অনুমানভিত্তিক গ্রেড নির্ধারণ করেছেন। ফলে রেজাল্ট বলির শিকার হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। কলেজে গিয়ে পছন্দের বিষয় নিয়ে এ লেভেল অধ্যয়নের জন্য এদের হয় আপীল করতে হবে, না হয় চলতি বছরের অটাম সীজনে অনুষ্ঠিতব্য রিসিট এর জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হবে।

“এ লেভেল” রেজাল্টের তুলকালাম কান্ডের পর জিসিএসই ফলাফলে হেডটিচার এবং প্রিন্সিপালরা স্বস্তি বোধ করলেও তাদের আশংকা, গত বছরের চেয়ে এবছরের পাস রেটের (Pass rate) হার উচ্চ হওয়ায় কলেজ বা সিক্সথ ফর্মে শিক্ষর্থীদের এন্ট্রি সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। স্থান সংকুলানের জন্য অনেক কলেজ ও সিক্সথ ফর্মকে হিমশিম খেতে হতে পারে। যারা অটাম সীজনে রিসিট করবে তারা সময় মতো কোর্স শুরু করতে পারবে না। ফলে সেসব শিক্ষার্থীদের ওপর একটা বাড়তি চাপ থাকবে। রিসিট এর ফলাফল আশানুরূপ না হলে পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে। কপাল মন্দ হলে কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। সরকার, অফকল এবং এক্সাম বোর্ড এর দায়িত্বহীনতার সুবাদে স্বভাবতই এসব শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট হবে। যা মোটেই কাম্য নয়। আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য জিসিএসই ও এ লেভেল শিক্ষার্থীদের উপর থেকে পড়াশোনার বাড়তি চাপ লাঘবে হেডটিচাররা এরইমধ্যে এক্সাম বোর্ডগুলোর কাছে অনুরোধ করেছে সিলেবাস থেকে কোর্স কনটেন্ট(Course content) বা মডিউল(Module) কমিয়ে দিতে।

এদিকে “বিটেক” রেজাল্ট নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার রাতে সরকার হঠাৎ বিটেক রেজাল্টকে বাতিল করে নতুন ভাবে ফলাফল ঘোষনা করবে বলে জানিয়েছে। সরকার বলছে, শিক্ষকদের অনুমানভিত্তিক রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে এ লেভেল ও জিসিএসই ফলাফল প্রকাশ হবার পর বিটেক রেজাল্ট যদি একইভাবে নির্ধারিত না হয়, তা বিটেক শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যায়সঙ্গত হবে না। আর সে কারণেই সরকার পূর্ব প্রকাশিত বিটেক রেজাল্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার আরো বলছে যে , শিক্ষার্থীদের কোর্সওয়ার্ক এর উপর শিক্ষকদের এসেসমেন্টকে (Assessment) প্রাধান্য দেয়া হবে। প্রায় অর্ধ মিলিয়ন শিক্ষার্থী তড়িঘড়ি করে সরকারের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে হতাশা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রিগ্রেডিং এবং ফলাফল বিলম্বের কারণে কোনো শিক্ষার্থী যাতে সুবিধাবঞ্চিত না হয় সে দিকে কড়া নজর থাকবে তাদের। তারা আশা করছে চলতি সপ্তাহের কোনো এক সময় পরিবর্তিত রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন না করলে কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হবে। অন্যদিকে সরকার বলছে যে, যেসব ডাউনগ্রেডেড এ লেভেল শিক্ষার্থীদের গ্রেডকে রিগ্রেডেড করা হয়েছে, তারা তাদের পছন্দের ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাবে। তবে কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তির ব্যাপারে অপেক্ষা করতে হতে পারে। পছন্দের ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেলেও, যদি পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ না পায়, সেক্ষেত্রে তাদেরকে অন্য বিষয় নিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তূত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এদিকে বরাবরের মতো এবারো জিসিএসইতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থীদের আশাতীত সাফল্য লক্ষ্য করা গেছে। সবার কামনা এসব ব্রিটিশ – বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জিসিএসই, এ লেভেল ও বিটেক পরীক্ষার রেজাল্ট হলো শিক্ষার্থীদের “পাসপোর্ট” বা “ছাড়পত্র”। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি, এপ্রেন্টিসশীপ, বা চাকরিতে ঢোকার জন্য যার কোনো বিকল্প নেই। অথচ করোনা ব্যাচের জিসিএসই, এ লেভেল ও বিটেক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারের সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্তহীনতার ফলে অনেকের ভবিষৎ যে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এর দায়ভার সরকার আদৌ নেবে কিনা তা এক বড়ো প্রশ্ন আকারে দেখা দিয়েছে। পরিণতি যাই হোক না কেনো, আজীবন এই রেজাল্ট কেলেঙ্কারীর স্মৃতি “কোভিড জেনারেশানের ” শিক্ষার্থীদের বয়ে বেড়াতে হবে। মা , বাবা ও অভিভাবকরাও এ থেকে রেহাই পাবেন না। ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে থাকবে “কোভিড – ১৯ রেজাল্ট”।

লেখক: শিক্ষক, পরীক্ষক, সাংবাদিক ও কমিউনিটি কর্মী, লন্ডন।

(লেখাটি সম্প্রতি  সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল)

আরও পড়ুন:

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন