­
­
বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
মানবিক করিডর আসলে কী, বিশ্বের আর কোথায় আছে, কতটা কার্যকর?  » «   বিএনপি না জামায়াত কোন দিকে ঝুঁকছে ইসলামপন্থি দলগুলো?  » «   সুইডেনে অতর্কিত বন্দুক হামলায় নিহত ৩  » «   ইতালিতে বর্ণাঢ্য বৈশাখী উৎসব বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের  » «   ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানিতে চমক: চীনের ঘাটতি পূরণ করছে বাংলাদেশ  » «   কানাডায় লিবারেলদের জয়, কী কারণ  » «   রাখাইনের জন্য করিডর বাংলাদেশের জন্য কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?  » «   ইউরোপ ৪ দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন!  » «   ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি  » «   বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার  » «   নতুন এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ  » «   ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে উড়ল প্রথম কার্গো ফ্লাইট  » «   রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার  » «   শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানান মোদি  » «   ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ কবিতার কবি দাউদ হায়দার আর নেই  » «  

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রেই



মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আর দশজন বিদেশি শিক্ষার্থীর মতোই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় বাংলাদেশি অঞ্জন রায়ের। এক ইমেইলের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, দেশটিতে অবস্থান করে পড়ালেখা করার বৈধতা হারিয়েছেন তিনি। তবে আশাহত না হয়ে রুখে দাঁড়ান অঞ্জন। বুধবার (২৩ এপ্রিল ২০২৫) এপির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার সেই লড়াইয়ের গল্প।

২৩ বছর বয়সী অঞ্জন ২০২৪ সালের আগস্টে মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে পড়ালেখা শুরু করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির দাবা ক্লাব ও একটি ফ্র্যাটারনিটিতে সক্রিয় ছিলেন। ডিসেম্বরে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর তিনি জানুয়ারিতে মাস্টার্সের ক্লাস শুরু করেন। ২০২৬ সালের মে মাসে তার মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

গত ১০ এপ্রিল ইমেইলের মাধ্যমে অঞ্জন জানতে পারেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে পড়াশোনা করার বৈধতা হারিয়েছেন তিনি। যার ফলে, যেকোনো সময় তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে—এমন আশঙ্কায় পড়েন অঞ্জন। এপিকে অঞ্জন বলেন, ‘আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। ভাবতে থাকি, এটা কীভাবে সম্ভব?’

ইমেইল পাওয়ার পর তিনি এক সহপাঠীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সেবা কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে ডেটাবেস যাচাই করে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে তার বৈধতা বাতিল করার কারণ তারা জানেন না।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেও তিনি একটি ইমেইল পান। যেখানে বলা হয়, তার ভিসা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং যেকোনো সময় তাকে আটক করা হতে পারে। দূতাবাস সতর্ক করে, তাকে বাংলাদেশে ফেরত না পাঠিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবলেও পরবর্তীতে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে মনস্থির করেন অঞ্জন। নিজ বাড়িতে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ভেবে তিনি তার এক আত্মীয়ের বাসায় চলে যান। ক্লাসে যাওয়া বন্ধ রাখেন। ইন্টারনেটও ব্যবহার করেননি। তিনি জানান, শিক্ষকরা তার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকায় ক্লাসে না আসার বিষয়টি বুঝতে পারেন।

অঞ্জন এ সপ্তাহে আদালতের রায়ে নিজের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের বৈধতা ফিরে পেয়েছেন। ফিরেছেন নিজের অ্যাপার্টমেন্টে। তারপরও অজানা আশঙ্কায় রুমমেটদের অনুরোধ করেছেন, কেউ তার খোঁজ করতে আসে কি না, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে। অঞ্জনের মতো হাজারো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সম্প্রতি একই ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। তাদের শিক্ষা জীবন, ক্যারিয়ার ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের যাপিত জীবনকে সংশয়ের চাদরে ঢেকে দিয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের দমন-পীড়ন অভিযান।

অঞ্জনের মতো অনেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। দেশজুড়ে ফেডারেল বিচারকরা বিশেষ নির্দেশ দিয়ে আপাতত শিক্ষার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিত করছেন। সাময়িক হলেও এই উদ্যোগে স্বস্তি ফিরে এসেছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

আটলান্টায় ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় অঞ্জনসহ ১৩৩ জন বাদি রয়েছেন। বিচারকরা তাদের পক্ষে রায় দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন।

একই ধরনের রায় এসেছে নিউ হ্যাম্পশায়ার, উইসকনসিন, মন্টানা, ওরেগন ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যেও। তবে কয়েকটি মামলায় বিচারকরা মত দিয়েছেন, সাময়িকভাবে বৈধতা হারালেও এতে শিক্ষার্থীদের কোনো অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে না। যার ফলে তারা সরকারি নির্দেশে স্থিতাবস্থা জারি করেননি।

গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, যেসব বিদেশি নাগরিক দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে নিয়োজিত, তাদের ভিসা বাতিল করা হবে। তাদের মধ্যে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েলি গণহত্যাবিরোধী ও ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরাও অন্তর্ভুক্ত।

তিনি জানান, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগও আনান হবে। তবে ভিসা বাতিলের সংবাদ পেয়েছেন এমন অনেক শিক্ষার্থী দাবি করেন, তারা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাড়া আর তেমন কিছুই করেননি।

অনেকে স্পষ্ট করে বলতেও পারেননি কেন তাদেরকে এ ধরনের অভিযোগের আওতায় আনা হয়েছে। অঞ্জন ও অন্যান্য বাদীদের পক্ষের আইনজীবী চার্লস কাক যুক্তি দেন, শিক্ষার্থীদের ভিসা বা বৈধতা বাতিলের কোনো এখতিয়ার সরকারের নেই।

তিনি গত সপ্তাহে আদালতে দাবি করেন, সরকার ভয়-ভীতি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে চাইছে। তিনি মন্তব্য করেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর অবর্ণনীয় মানসিক চাপ দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি জানান, কেউ কেউ তাকে এমন প্রশ্নও করেছে যে খাবার কিনতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়া নিরাপদ হবে কি না। অন্যান্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বছরের পর বছর পরিশ্রম করেও হয়তো তারা ডিগ্রিটা আর পাবেন না। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়েও অনেকের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আর ডেভিড পাওয়েল যুক্তি দেন, ‘বৈধতা হারালেও ওই শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ, তারা সহজেই একাডেমিক ক্রেডিট অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করতে পারবেন কিংবা অন্য কোনো দেশে চাকরি খুঁজতে পারবেন।’

মার্চ থেকে শুরু করে অন্তত ১৭৪ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ১০০ শিক্ষার্থী ভিসা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধতা হারিয়েছেন। আরও অসংখ্য শিক্ষার্থী একই ধরনের পরিস্থিতিতে রয়েছেন। এপির সাংবাদিকরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন