বাংলাদেশে বিলুপ্তির মুখে রয়েছে ১৪ ভাষা। এর মধ্যে রেংমিটচ্যা ভাষা বলতে পারেন মাত্র এই ছয়জন। তারা মারা গেলে পৃথিবী থেকে হারিয়ে এই ভাষাটি। মাতৃভাষা রক্ষার জন্য ঢাকায় গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এই রেংমিটচ্যা ভাষাসহ তিনটি ভাষা রক্ষায় কাজ করছে। রিংমিটচ্যা, লালেং বা পাত্র এবং কন্দো ভাষা বাঁচাতে জরিপ করছে। তবে ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা না থাকায় সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, দেশে বাংলাসহ ৪১টি ভাষার প্রচলন আছে। তবে এর মধ্যে বিলুপ্তির মুখে রিংমিটচ্যা, পাত্র, কন্দোসহ ১৪টি। নিজস্ব ভাষায় বই রয়েছে শুধু চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরি জাতির। তবে পড়ানোর মতো শিক্ষক নেই।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তিনটি ভাষাকে আমরা টার্গেট করেছি, যেগুলো বিভিন্ন অবস্থায় রয়েছে। পাত্র, কন্দো, রিংমিটচ্যা- এ ভাষাগুলো নিয়ে আমরা জরিপ করছি। জরিপের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের ভাষা সম্পর্কে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
ছয়জনের রেংমিটচ্য ভাষা বাঁচিয়ে রাখার লড়াই
ম্রো জাতিগোষ্ঠীর মানুষ সাধারণত নিজেদের মাতৃভাষা ‘ম্রো’তে কথা বললেও প্রায় সাত দশক আগে বান্দরবানে তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত রেংমিটচ্য ভাষী কিছু মানুষ ছিলেন, যাদের সংখ্যা কমতে কমতে এখন ছয় থেকে আটজনে এসে ঠেকেছে।
এই হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ মারা গেলে রেংমিটচ্য ভাষাটিও চিরতরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। এই বাস্তবতার মধ্যেই পাহাড়ের কিছু মানুষ নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছেন, যাতে ভাষাটি বিলুপ্ত হয়ে না যায়।
আড়াই দশকের বেশি সময়ের চেষ্টায় ম্রো ও বাংলাভাষা দিয়ে ভাষাটির নিজস্ব শব্দভাণ্ডার দাঁড় করিয়ে পুস্তক প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। রেংমিটচ্য ভাষাগোষ্ঠীর শিশুদের সেই ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা ‘স্কুল কাম হোস্টেল’; যেখানে থেকে শিশুরা প্রতিনিয়ত ভাষাটি রপ্ত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, “রেংমিটচ্য ভাষার ডকুমেন্টশন করব আমরা। হয়ত রোজার ঈদের পর ওই এলাকায় (বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা) যাব। ডকুমেন্টশন করে কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় দেখব। আসলে ভাষা বেঁচে থাকে তো তার ভাষীর মাধ্যমে। সেটাই করতে হবে।”
এসব উদ্যোগের কারণে দেশের বিলুপ্তপ্রায় ভাষার তালিকায় শীর্ষে থাকা ‘রংমিটচ্য’ আবার জাতিগোষ্ঠীর মুখে মুখে ফিরবে এমন প্রত্যাশাই করেছেন ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষেরা।