চট্টগ্রাম সমিতি ইউকের উদ্যোগে প্রবাসী চট্রগামবাসীর বহুল প্রত্যাশিত বার্ষিক মেজবান ২০২৩ আগামী ১৫ অক্টোবর রোববার দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রমফোর্ডের মেফেয়ার ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে । প্রায় ২৫ হাজার পাউন্ড ব্যয়ে আয়োজিত এই মেজাবানী খাবারের অনুষ্ঠানে ১০০০ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
১৩ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম সমিতি ইউকের উদ্যোগে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বার্ষিক মেজবান আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সমিতির চেয়ারম্যান মোঃ নাজিম উদ্দিন, ট্রেজারার আব্দুল মান্নান ও উপদেষ্টা আলমগীর খান।
এতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম সমিতি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত চট্টগ্রামবাসীর হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান ধারণ করে। কারণ এটি শুধুমাত্র দেশের বাইরে প্রাচীনতম সমিতিগুলির মধ্যে একটি নয় বরং যুক্তরাজ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রামবাসীর জন্য নিবেদিত প্রথম সংগঠন । বছরের পর বছর ধরে, চট্টগ্রাম সমিতি ইউকে কমিউনিটির সদস্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন, তাদের অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে ঐক্যের মনোভাবকে উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
লিখিত বক্তব্যে মেজবান কী- তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, সময়ের কালক্রমে এই মেজবান যুক্তরাজ্যে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে হয়ে উঠেছে বহুল প্রত্যাশিত একটি ঐতিহ্যবাহী আয়োজন । চট্টগ্রামে “মেজবান” বলতে বোঝায় একটি ঐতিহ্যবাহী সাম্প্রদায়িক ভোজ অনুষ্ঠান বা একটি বৃহৎ জমায়েত যেখানে মানুষ একত্রিত হয়ে খাবার শেয়ার করে নেয় (বিশেষ করে মেজবানী গোশত)। মেজবানের এই আয়োজনগুলো চট্টগ্রামের সংস্কৃতিতে তাৎপর্যপূর্ণ এবং প্রায়শই বিবাহ, ধর্মীয় উৎসব এবং সম্প্রদায়ের সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতায় আয়োজন করা হয়।
“মেজবান” শব্দটির অর্থ ‘যিনি আতিথেয়তা প্রদান করেন” । চট্টগ্রামের সংস্কৃতির পরিপ্রেক্ষিতে, এটি একটি ভোজের উদার আয়োজনকে বোঝায় যেখানে অতিথিদের আপ্যায়িত করা হয় বিভিন্ন ধরনের খাবার দিয়ে (বিশেষ করে মেজবানী গোশত), যা কি-না আয়োজকের উষ্ণতা এবং আতিথেয়তার প্রতিফলন ঘটায়।
চট্টগ্রামের মেজবান আয়োজনের পেছনের ইতিহাস এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐতিহ্যের গভীরে নিহিত। এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা চলে আসছে প্রজন্মের পর পজন্ম ধরে এবং চট্রগ্রামবাসীর মধ্যে সম্পর্কের সেতু বন্ধন তৈরি করতে ও তা দৃঢ় করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি মেজবানের আয়োজনে খাবারের মূল আকর্ষনই হচ্ছে প্রচুর গ্রেভি দিয়ে বিশেষভাবে রান্নাকরা গরুর মাংসের ভিন্নস্বাদের কারী (যা মেজবানী গোশত নামে পরিচিত)।
অতিথিরা সাধারণত একসাথে বসে এবং খাবারটি উপভোগ করে যার মধ্য দিয়ে একতা এবং ঐক্যের মনোভাব প্রকাশ পায়।
মেজবানের এই আয়োজনগুলো কেবল খাবারের পরিবেশন আর উপভোগ করা নয়, এর সাথে একাত্ব হয়েছে চট্রগ্রামবাসীদের সামাজিক বন্ধন, ঐতিহ্য, তাদের সামাজিকতা, একে অন্যের সাথে নিজেদের গল্পগুলি শেয়ার করা এবং প্রিয়জনের সাথে জীবনের আনন্দ উদযাপনের বিষয়টিও। এটি একটি লালিত ঐতিহ্য যা লোকেদের কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং চট্টগ্রামের সম্প্রদায়ের মধ্যে একত্রিত হওয়ার অনুভূতিকে শক্তিশালী করে।
সামগ্রিকভাবে, চট্টগ্রামে মেজবান আয়োজনের পেছনে একটি দীর্ঘ এবং সাংস্কৃতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে, যা এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ রন্ধনসম্পর্কীয় এবং সামাজিক ঐতিহ্যের একটি পরিচায়ক যা চট্টগ্রামের সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে আছে। এই ঐতিহ্য যেমন চট্টগ্রামবাসীর কাছে সমাদৃত ঠিক তেমনি সমাদৃত বিশ্বজুড়ে ছড়িয় থাকা অন্যান্য সকল চট্টগ্রামবাসীর কাছেও।
এবার চট্টগ্রাম সমিতি ইউকে এই মেজবান আয়োজনের সাথে যুক্ত করেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যাতে নতুন প্রজন্ম উপলদ্ধি করতে পারে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে। আর এই আয়োজনে থাকছে মনোরম ঐতিহ্যবাহী খাবারে ভরা, প্রাণবন্ত চিটাগোনিয়ান সঙ্গীত, মনোমুগ্ধকর অন্যান্য পরিবেশনা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম সমিতি ইউকের সভাপতি, নাজিম উদ্দিন বলেন, “বার্ষিক মেজবান যুক্তরাজ্যে চট্টগ্রামবাসীর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অবস্থানের একটি প্রমাণ। এটি এমন একটি দিন যখন আমরা আমাদের ঐতিহ্য উদযাপন করি, আমাদের কমিউনিটির সাথে সামাজিক সংযোগকে আরো দৃঢ় করি এবং একই সাথে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমাদের এই ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হই । আমরা এই বিশেষ অনুষ্ঠানে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য সকল প্রবাসী চট্টগ্রামবাসী এবং তাদের বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাই।” ( বিজ্ঞপ্তি)