­
­
বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশ ক্রেজি আইডিয়ার দেশ  » «   প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি  » «   নাসার সাথে চুক্তি, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা জোটে যুক্ত হলো বাংলাদেশ  » «   সারা দেশে সরকারি ফার্মেসি চালু করছে সরকার  » «   ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ থেকে বাটা-কেএফসি ভাংচুর : ৪ মামলা, গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান  » «   গাজায় গণহত্যা: ছয় জেলায় বাটা-কেএফসিতে হামলা-ভাঙচুর, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ  » «   গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে, সংকুচিত হয়ে পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা  » «   গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন : প্রতিবাদে সামিল বাংলাদেশ  » «   যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কারোপ: বাংলাদেশের জন্য সুযোগও সৃষ্টি হতে পারে  » «   ১০০ ডলারের টি-শার্টের শুল্ক ৪৯ ডলার!  » «   বাংলাদেশসহ ১৩ দেশের ওপর অস্থায়ী ভিসা নিষেধাজ্ঞা সৌদির  » «   ট্রাম্পের শুল্ক ধাক্কা কীভাবে সামলাবে বাংলাদেশ  » «   ইউনূস-মোদীর প্রথম বৈঠকে হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইল বাংলাদেশ  » «   বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭% শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের, পোশাক শিল্পে বড় ধাক্কা  » «   জাফলং ঘুরতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ গেলো কিশোরের  » «  

ম্যানচেস্টার সিটি : ইউরোপিয়ান ফুটবলের নতুন রাজা



দুনিয়ার সবচাইতে কম্পেটেটিভ ফুটবল লিগ নি:সন্দেহে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ।সেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পেপ গার্দিওয়ালার উপরে একটি শিরোপার চাপ প্রথম থেকেই ক্রমশ বাড়ছিল  আর সেই শিরোপাটি হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন লীগ শিরোপা।

কারণ ইতিপূর্বে বার্সেলোনাকে ট্রেবল জিতানোর পর অনেকেই মনে করেছিলেন এবং মনে করতেন গার্দিওয়ালা চ্যাম্পিয়ন লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন লিওনেল মেসির কারণে এবং এই কারণটিও আস্তে আস্তে সত্যের কাছাকাছি চলে এসেছিল কারণ ইতিপূর্বে তিনি রায়ার্ন মিউনিখ এবং ম্যানচেস্টার সিটি কে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন লিগ জিততে পারেননি বাকি সবকিছুই জিতেছেন।

বিশেষ করে ম্যানচেস্টার সিটিকে নিয়ে পেপ যেভাবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে একপ্রকার আধিপত্য দেখিয়ে রাজত্ব করছেন এবং যেভাবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে পাচঁ -ছয় ঘোড়ার শিরোপা দৌড় থেকে এক ঘোড়ার শিরোপা দৌড়ে পরিণত করেছেন; সেটা এই সময়ের ফুটবলে শুধু অবিশ্বাস্য নয় ;খুবই রোমাঞ্চকর এবং ভীতি জাগানিয়া।

চিন্তা করে দেখুন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ এর ফায়সালা হচ্ছে শেষ ম্যাচে গিয়ে কিংবা ৮০ এবং ৯০ এর উপরে পয়েন্ট নিয়ে ;এমনটি অতীতে খুব একটা দেখা যায়নি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে বলা হয়- সবচাইতে প্রতিযোগিতামূলক। কারণ এখানে যে কেউ ,যে কাউকে ধাম করে- ধরে দেয় ।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড -আর্সেনাল  -লিভারপুল- চেলসি – টটেনহ্যাম সহ অসংখ্য ক্লাব  কোন টাকা খরচ করতে কম করেনি। কিন্তু পেপ গার্দিওয়ালা যখন সিটিকে চ্যাম্পিয়ন হবার দৌড়ে নিয়ে আসেন;সেখানে প্রথমেই ফোকাস করেন ডিফেন্সের উপর।তারপর মিডফিল্ড এবং শেষ পর্যন্ত এসে ফরোয়ার্ডের উপর ফোকাস করেছেন।

আপনি চিন্তা করে দেখুন, পেপ কি পরিমাণ এক্সপেরিমেন্ট করেন চ্যাম্পিয়ন লিগের মতো ম্যাচেও ।

স্ট্রাইকারবিহীন একাদশ নিয়ে পর্যন্ত নেমে পড়েন অনেক ম্যাচে। স্যার অ্যালেক্স  ফার্গুশনের একটি চমৎকার উক্তি রয়েছে ।সেটি হচ্ছে –‘ফরওয়ার্ড আপনাকে ম্যাচ জিতায় কিন্তু ডিফেন্স আপনাকে চ্যাম্পিয়ন করে’।

পেপ গার্দিওয়ালা ঠিক এই সূত্রেই গড়ে তুলেছেন ম্যানচেস্টার সিটি ।যারা শুধু ম্যাচে জিতে না- টুর্নামেন্টও জিতে। লীগ কাপ- এফএ কাপ জিতে এবং দর্শকদের মনও জিতে।

পেপ বার্সেলোনার টিকিটাকা ফুটবল  নিয়ে এসেছেন ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডের মত হাই প্রেসিং লীগে টিকিটাকার সাফল্য পেপকে নিয়ে এসেছে অনন্য উচ্চতায়। ইতিহাসের সেরা কোচদের তালিকায় যাওয়ার পথে একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল চ্যাম্পিয়ন লিগ শিরোপা ।

এবার ইন্টার মিলনকে হারিয়ে যেন জানান দিলেন ইম্পসিবল ইজ নাথিং।এভরিথিং ইজ পসিবল। ম্যানচেস্টার সিটির এই উর্ধ্বযাত্রা শুরু হয়েছিল আগুয়েরা মোমেন্ট দিয়ে। সেই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ, যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রায় চ্যাম্পিয়ন এবং চ্যাম্পিয়ন  ট্রফি হেলিকপ্টারে তুলে নিয়ে যাওয়ার পথে আবারো ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটির কাছে । কারণ শেষ দুই মিনিটে দুই গোল দিয়ে একই পাড়ার বড় ভাই ইউনাটেড এর নিশ্চিত শিরোপা কেড়ে এনেছিল- সিটি আগুয়েরার কল্যাণে।

এরপর থেকে  সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে ইংলিশ ফুটবলে ‘আগুয়েরা মোমেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

যেন ম্যানচেস্টার সিটির ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের উর্ধ্ব যাত্রা চলছিলই কিন্তু ওই যে আভিজাত্যের  একটি ব্যাপার আছে; সেই আভিজাত্যের দৌড়ে বারংবার এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে পড়তে হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটিকে।আভিজাত্য আর ঐতিহ্যযের  দৌড়ে সিটি হোঁচট খাচ্ছিলো বারংবার ।

এজন্য আরব ধনকুবের শেখ মনসুর পাখির চোখ করেছিলেন চ্যাম্পিয়ন লিগের শিরোপার উপর।

একইভাবে এই সময়ে অন্যতম সেরা কোচদের তালিকায় পেপ নিজেকে নিয়ে আসলেও চ্যাম্পিয়ন লীগ শিরোপার অভাব- হাহাকার -আফসোস থেকে যাচ্ছিল ; কোচদের সেরা হবার মুকুট ও উঠি উঠি করে ও পেপের মাথায় উঠছিলনা।

ইন্টার মিলানকে হারিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি যেন একই সাথে চক্র পূরণ করে দিল দল হিসাবে সিটি এবং কোচ হিসাবে পেপ গার্দিওয়ালার।

ইংলিশ ফুটবলের ১৯৯৯ সালে অ্যালাক্স ফার্গুসেনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ট্রেবল জিতেছিল ।

এবার ম্যানচেস্টারের অন্য পাড়ার ছোট ভাই ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ট্রেবল জয়ের মাধ্যমে জানান দিল শুধু ইংলিশ ফুটবলে নয় ইউরোপিয়ান ফুটবলে রাজ করতে এসেছে ম্যানচেস্টার সিটি।

পাড়ার ছোট ভাই হতে এখন মহানগরের বিগ বসের আসনে পেপ এবং তাহার হাতে গড়া ম্যানচেস্টার সিটি আজ নিজের আলোয় আলোকিত হয়ে বিচ্ছুরন ঘটাচ্ছে পুরো ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ।

ইউরোপিয়ান ফুটবলের নতুন রাজা হিসাবে ম্যানচেস্টার সিটি এখন চক্র পূরণ শেষ করে আধিপত্য বিস্তারে মনোযোগী কারণ তাদের আছে একজন সুপার ট্যাক্টিসিয়ান এবং হাইলি এক্সপেরিমেন্টাল কোচ পেপ গার্দিওয়াল।

ফুজেল আহমদ: লেখক, ক্রীড়া বিশ্লেষক

টরেন্টো,কানাডা। ১৬জুন ২০২৩

আরও পড়ুন-

দুই প্রেসিডেন্টের কথার লড়াই ও ক্রীড়াঙ্গণের থলের বিড়াল

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন