­
­
রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
বাংলাদেশসহ ১৩ দেশের ওপর অস্থায়ী ভিসা নিষেধাজ্ঞা সৌদির  » «   ট্রাম্পের শুল্ক ধাক্কা কীভাবে সামলাবে বাংলাদেশ  » «   ইউনূস-মোদীর প্রথম বৈঠকে হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইল বাংলাদেশ  » «   বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭% শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের, পোশাক শিল্পে বড় ধাক্কা  » «   জাফলং ঘুরতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ গেলো কিশোরের  » «   ১৭ বছর পরে জাতীয় ঈদগাহের ঈদ জামাতে সরকারপ্রধান  » «   ঈদ আসে, গাজায় আনন্দ আসে না  » «   এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া  » «   মিয়ানমারে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরও হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী  » «   ঈদযাত্রা: শুক্র ও শনিবার ঢাকা ছেড়েছে ৪১ লাখ সিমধারী  » «   তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ‘ইতিবাচক’, মোংলায় আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চায় চীন  » «   মিয়ানমারে কেন এত বড় বিধ্বংসী ভূমিকম্প, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?  » «   বাংলাদেশে সাজাপ্রাপ্ত উগ্রবাদীদের মুক্তি নিরাপত্তার জন্য ‘মারাত্মক উদ্বেগের’: ভারত  » «   চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে ঈদ রবিবার  » «   এনসিপি: অম্ল-মধুর একমাস পার, ভোটের পথে প্রস্তুতি কতদূর?  » «  

চুরির তকমায় কলমাকান্দা হাসপাতালে রক্তাক্ত প্রতিবন্ধী নির্বাক কিশোর



হাবলা গোবলা (স্থানীয় ভাষা) ধরনের প্রতিবন্ধীর মতো রহমত আলী (১৫)। ছয় মাস বয়সে মা-বাবাকে হারানো পর নানির কাছে থেকেই বড় হয় সে। বিভিন্ন দোকনে পানি এনে দেওয়াসহ মানুষের হুট-ফরমায়েশ পালন করে দিন যায় তার। শখের মোবাইলের পেছনের অংশ মেরামতে রহমত যান সার্ভিসিংয়ের জন্য আলমগীরের (৩২) দোকানে। সেখানে আসার পর থেকে রহমতের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরেরদিন তার সন্ধান মেলে। শরীরে বিভিন্ন স্থানে নীলা ফোলা জখমসহ মাথায় ৭-৮টি সেলাই নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন রহমত। দুইদিন পর তার জ্ঞান ফিরলেও সে দেখতে পারে, কিন্তু মুখে কথা বলার চেষ্টা করেও পারছে না। যার কারণে এক অমানবিক ও হৃদয় বিদারক নির্যাতনের জবানবন্দী পুলিশকে দিতে পারেনি কিশোর ছেলেটি।

রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা মেলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় শয্যাশায়ী রহমত আলীর। তার সেবা করছেন বৃদ্ধ নানি মজেদা বেগম। চিকিৎসকের মতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে ভাল হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন। অর্থ ও লোকের অভাবে সেই ব্যবস্থা করতে পারছেন না তার নানি।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় কৈলাটি ইউনিয়নের বিষমপুর গ্রামের শাহাজাহানের ছেলে আলমগীর। পেশায় একজন মোবাইল মেকানিক। আলমগীরের একই ইউনিয়নের শ্যামপুর ব্রীজ সংলগ্ন মোবইল সার্ভিসিংয়ের দোকান রয়েছে। আর ভিকটিমের নানার বাড়ি একই ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের পাশাপাশি এলাকা নক্তিপাড়ায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩০ জুন (বুধবার) রাত ১০টার দিকে আলমগীর তার দোকানে শক্ত বা ধারালো বস্তু দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে সারা রাত দোকানে ফেলে রাখেন ভিকটিমকে। পরের দিন বৃহস্পতিবার উদ্ধার করে সন্ধ্যায় ভিকটিমকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দীর্ঘ এ সময়ে ভিকটিমের কোন সু-চিকিৎসার বন্দোবস্ত না করেই উল্টো রহমতের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দায়ের করেন আলমগীর। চুরির বিষয়ে রহমতের পাড়ার মানুষসহ জানেন না কিছুই। যদি চুরি করেই থাকে তাহলে আমাদেরকে জানালো না কেন। সারা রাত রক্তাক্ত জখম করে দোকানে ফেলে রেখে রহমতের ওপর অমানবিক ও লোমহর্ষক ঘটনার জন্ম দেয়ায় আলমগীরে প্রতি ক্ষিপ্ত ভিকটিমের পরিবারসহ পাড়ার গ্রামবাসীদের অনেকেই।

ভিকটিমের নানি মজেদা বেগম জানান, ছোট থাকতে মা মারা যাওয়ার পর দশের সাহায্য নিয়ে রহমতকে আমি বড় করেছি। এক প্রকার প্রতিবন্ধীর মতো সে। একটি শখের মোবাইল আছিল তার। সেটা নিচের পেছনের অংশ সারাতে কম্পিউটার দোকানে গিয়েছিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে। রাত ৯টা কি ১০টার দিকে রহমতকে কোপ মেরে রক্তাক্ত জখম করে আলমগীর। এতে সে অজ্ঞান হয়ে সারা রাত পড়ে থাকে কম্পিউটারের দোকানে। পরের দিন ফোনে জানালে পাড়ার প্রতিবেশিরা অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে। জ্ঞান না ফিরলে সন্ধ্যায় হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। ভিকটিমের প্রতিবেশি সম্পর্কে নানা ফজলুক হক পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছে।

এ বিষয়ে আলমগীরে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করে সংযোগ পাওয়া গেলে তিনি জানান, দোকানে আমার ভাই থাকতো বলে লাইন কেটে যায়। পুনরায় ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, রহমতকে আগে চিনতাম না। সে তিন কি.মি. দূর থেকে এসেছে। আমার ভাইয়ের সাথে দস্তাদস্তিতে মাথায় আঘাত পেয়ে থাকতে পারে। পরে ভাইয়ের নাম জানতে চাইলে শফিকুল বলে, এখন ঝামেলায় আছি পরে কথা বলেন সংযোগ কেটে দেন তিনি।

কলমাকান্দা হাসপাতালের আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) ডা. মো. আমজাদ হোসেন জানান, গত ১ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মৃত সরবত আলীর ছেলে রহমত আলী নামে এক কিশোর ছেলেকে হাসপাতালে জরুরী বিভাগে আনা হয়। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক কর্তৃক জখমের বিবরনীতে লেখা রয়েছে মাথায় গুরুতর জখমপ্রাপ্ত, বমিভাব ও মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে। মাথায় জখমপ্রাপ্ত রোগীর বমিভাব থাকলে তাকে আশঙ্কাজনক হিসেবে চিহ্নিত করি আমরা। এ অবস্থাতেই তাকে ভর্তি নেয়া হয়। এখনো বমিভাব থাকায় শঙ্কামুক্ত নন তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো প্রয়োজন।

দু’পক্ষের অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা সিধলী তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল জলিল জানান, আলমগীর পক্ষের অভিযোগ ভোর ৩টার দিকে দোকানের সাটার ভেঙে চোর সন্দেহে নিজেদের রক্ষার্থে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। এরআগে গত কয়েকদিন আগে আলমগীরের দোকানে চুরি হয়েছে। রহমতের সম্পর্কে নানা ফজলুল হকের অভিযোগ প্রাপ্তিতে হাসপাতালে গিয়ে মাথায় আঘাত প্রাপ্তের সত্যতা পেয়েছি। রহমত আরেকটু সুস্থ হলে ঘটনা জানতে তার কাছে আবার যাওয়া হবে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি হাবলা-গোবলা প্রকৃতির ও খুবই অসহায় রহমত আলীর পরিবার। দু’পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থার নেয়ার কথা জানা তিনি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন