আজকের গল্প একজন স্বপ্নবাজ তরুণের, যিনি ক্ষমতার মোহে নয় কিংবা জনপ্রতিনিধি না হয়েও নিজের জায়গা থেকে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জোয়ার নিয়ে এসেছেন। যার হাত ধরে হাসি ফুটেছে অগণিত মানুষের, যার ভাবনায় স্বদেশ প্রেমই ঈমানের অন্যতম অঙ্গ।
একজন তরুণ যাকে মানবতার ফেরিওয়ালা বললেই সবচেয়ে যুতসই নামে ডাকা হয়, একজন রাজনৈতিক কর্মী যার ধ্যান জ্ঞান রাজনীতিকে মানুষের সেবার করার পরম ব্রত হিসেবেই নিয়েছেন। অনেক কিশোর তরুণের আদর্শ হিসেবে পরিচিত সমাজ পরিবর্তনের আলোকবর্তিকা সৈয়দ মেহেদী রাসেল এর স্বপ্ন ও সমাজকে নিয়ে ভাবনার রূপগল্প শুনতেই ১৭ই নভেম্বর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে কিছু প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি হই আমরা।
সবুজ শ্যামলে ঘেরা মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ইটাউরী গ্রামে একজন সৎ সাদা মনের মানুষ যাকে ধনী গরীব সবাই ভালবাসতেন সদ্য প্রয়াত সৈয়দ মাসুফ আহমেদ টুনু ও মমতাময়ী মা রোকসানা চৌধুরীর কোল আলো করে এই পৃথিবীতে আসেন। পারিবারিক শিক্ষা ও নিজের উদার মন মানসিকতা নিয়ে ইটাউরী গ্রামে বেড়ে ওঠা সৈয়দ মেহেদী রাসেল যখনই সুযোগ পেয়েছেন তখনই তার গ্রাম ও আশে পাশের মানুষের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তনে সবার হাসিমুখ দেখতে গড়ে তোলেন সৈয়দ মেহেদী রাসেল ফাউন্ডেশন।
মানবিক এই তরুণ মানব সেবার সর্বোচ্চ ব্রত নিয়ে মানবকল্যাণে মরণোত্তর চুক্ষু দান করেন। ২৫ এর অধিক বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেই ক্ষান্ত হননি কেবল, গড়ে তুলেছেন নিজ এলাকায় প্রথম সেচ্ছায় রক্তদান সংস্থা। খেলা থেকে শুরু করে সামাজিক সকল কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি সমাজের তরুণদের সামাজিক ইতিবাচক কাজে নিয়োজিত রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা চোখে পড়ার মত।
উনার সমাজ সেবার কার্যক্রম শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, কানাডায় বাংলাদেশ কমিউনিটিতেও নিজের সহজাত বৈশিষ্ট্যকে সমুন্নত রেখে কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে। বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব মন্ট্রিয়ল এর অন্যতম কার্যনির্বাহী সদস্য ছাড়াও প্রতিষ্ঠা করেছেন কানাডা থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষায় অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকা “বঙ্গবাণী”। বঙ্গবাণী পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক দায়িত্ব পালনের পূর্বেও কানাডার বেশ কয়েকটি পত্রিকার দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কানাডা ক্যুইবেকে শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এর দায়িত্বে রয়েছেন।
হঠাৎ করেই বিশ্বজুড়ে এলো মহামারী করোনা, বাংলাদেশেও করোনা তার কদর্যরূপ নিয়ে হাজির হলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। চাকুরি নেই, খাবার নেই। বিশেষ করে দিনমজুর, যারা দিনে আনে দিনে খায় তাদের অবস্থা একেবারেই করুণ। অসহায় বাংলাদেশে সরকারের পাশাপাশি বাতিঘর হিসেবে অনেকেই ব্যক্তিগত সহায়তা নিয়ে হাজির হলেন। সেই সময়ে আলোকবর্তিকা হয়ে যারা পাশে দাড়িয়েছিলেন তাদের একজন সৈয়দ মেহেদী রাসেল। যিনি নিজস্ব অর্থ ব্যয়ে তিন শতাধিক পরিবারকে দুই মাসের খাদ্যদ্রব্যের সহযোগীতা করেছেন। মসজিদ, মাদ্রাসা. স্কুল যেখানেই অর্থিক কিংবা অন্য যেকোন সহায়তা লাগুক সবার আগে যিনি এসে পাশে দাড়ান তিনি এলাকাবাসীর স্নেহভাজন সৈয়দ মেহেদী রাসেল। কেউ মারাত্মক কোন অসুখে আক্রান্ত হলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সবার আগে ঠিকই দাড়িয়ে যান মানবতাকে ধ্যান জ্ঞান করা এই তরুণ।
আমাদের সাথে আলাপে উঠে আসে তার স্বপ্ন, সমাজ-দেশ এবং আশে পাশের মানুষকে নিয়ে ভাবনার কথা।
স্বপ্ন ও অনুগত ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আগাগোড়া একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়, আমার স্বপ্ন তাই আকাশ সমান। আমি প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখি, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্লান্তিহীন কাজ করে যেতে চাই। আমি স্বপ্ন দেখি দারিদ্র্যহীনতার, ক্ষুধামুক্ত সমাজের, সকলের সুস্বাস্থ্য, সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন, শান্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা সহ সকলের সাম্যবস্থান। আমি বিশ্বাস করি সমাজের এই রুগ্ন চেহারা একদিন বদলাবেই। সব মানুষের হাসিমুখ আমরা দেখবোই।
আমার বাবা বলতেন “মানুষকে ভালবাসতে পারায় ক্ষতি নেই বরং নিজের হৃদয় বিশুদ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়।” এই আমোঘ সত্যের গভীরতা ও সৌন্দর্য্য যারা অর্জন করতে পারে কেবল তারাই অনুভব করতে পারবে। যদি আমরা কাজ করি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে, মানুষকে ভালবেসে তাদের পাশে দাড়াই তবে অবশ্যই আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবো।
মানুষের পাশে কিভাবে দাড়াতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে যত ভাবে সম্ভব, যেভাবে সম্ভব আমি মানুষের পাশে দাড়াতে চাই। অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বন্ধু হয়ে তাদের একজন হতে চাই। এক সময় ব্যাক্তিগতভাবে অনেককে সাহায্য করলেও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে সবাইকে নিয়ে আরো বড় আকারে সবার কাছে পৌছানোর জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হয় এমন কার্যক্রমের প্রেক্ষাপট থেকেই প্রতিষ্ঠা করেছি “সৈয়দ মেহেদী রাসেল ফাউন্ডেশন”। এই ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে আমরা ইতিমধ্যে অনেকগুলো কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে অন্যতম হল:
দরিদ্র্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা সহ প্রতি বছর একশত জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাবৃত্তি চালু।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে ত্রাণ, জরুরী চিকিৎসা সেবা সহ বিভিন্ন রকম সেবা প্রদান।
প্রতিবছর পবিত্র রমযান মাসে দুই শতাধিক দরিদ্র্য পরিবারের খাদ্যদ্রব্য এবং ঈদে বিশেষ উপহার সামগ্রী প্রদান।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ সহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ প্রদান।
“বাসগৃহ নির্মাণ ও আশ্রয়ণ” প্রকল্প এর আওতায় ঢেউটিন ও নগদ অর্থ বিতরণ।
“সকলের জন্য বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি” প্রকল্প এর আওতায় বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
দরিদ্র্য ও দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের আর্থিক সহায়তা।
ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রণোদনা ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান।
করোনা মহামারীতে তিন শতাধিক পরিবারকে খাদ্য সহায়তা।
এতিম শিশুদের শিক্ষা ও খাদ্য সহায়তা।
দরিদ্র্য ও বিধবা মহিলাদের স্বাবলম্বী করবার লক্ষ্যে সেলাই মেশিন প্রদান।
সবুজ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর ফলজ, বনজ ও ঔষুধি বৃক্ষরোপণ।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি আর্ত মানবতার সেবার জন্য শুধু টাকা নয় একটি মানবিক মনও প্রয়োজন, প্রয়োজন উদারতা, সাহস এবং মমত্ববোধ। মানুষকে ভালবাসতে পারার উদারতা যদি থাকে তবেই সম্ভব সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা। আমি চাই তরুণরা সম্পৃক্ত হোক সমাজ বদলে দেবার অগ্রযাত্রার মিছিলে। আমি বিশ্বাস করি তারুণ্যই পারে এই সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে।
আগামী দিনগুলোতে সামাজিক পরিবর্তনের এই দৃঢ় অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমি সকলের সহযোগীতা চাই।