ফুলের বাগান কার না ভালোলাগে ! পার্কে ফুলফোটা স্নিগ্ধ- মনোরম দৃশ্যগুলো মানুষের মনকে পুলকিত করে। ইউরোপে এদৃশ্য খুব স্বাভাবিক।
কিন্তু একরের পর একর জুড়ে আছে ফুল আর ফুল। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না সহজে। উপরে নীলাভ আকাশ আর নিচে মাটিতে ফুটে আছে লাল–নীল রঙের মিশ্রণের প্যারপল রঙের ফুল আর ফুল। এ যেন এক ফুলেরসমুদ্র। অদ্ভুদ রকমের সৌন্দর্য। চেখে না দেখলে যেন বিশ্বাস করা কঠিন।
লন্ডনের থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে এমনই একটি সৌন্দর্যে্যর জায়গায় পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন স্কুল হলিডে তে।
মন ভালো করা সৌন্দর্য্য আর সুন্দর্যে্যকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে গড়ে ওঠেছে সুগন্ধির উচ্চমুল্যের ব্যবসা তা-ও আন্দাজে দেখার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারবেন একই সময়ে।
অনিন্দ্য সুন্দর জায়গাটির নাম–দ্যা মেয়ফিল্ড লেভেন্ডার ফার্ম।
২৫ একর আয়তনের ল্যাভেন্ডার ফার্মটি ছারি শহরে অবস্থিত। সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে দূরত্ব ১৫ মাইল। ফার্মটিতে ব্রিটেনের সামার সময়ে পর্যটকদের থাকে উপচে পড়া ভীড় ।
ফুলের ফার্মটি সপ্তাহের সাত দিনই খোলা থাকে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত। অর্থাৎ জুন মাসের শেষ এর দিকে শুরু হয়ে আগস্ট মাস পর্যন্ত ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকে একরের পর একর ।
প্রবেশ মূল্য দুই পাউন্ড। ষোল বছরের কম বয়সীদের জন্য ফ্রি রাখা হয়েছে। আছে সুন্দর ফ্রি পাকিং ব্যবস্থা ।
ল্যাভেন্ডার ইউরোপের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফুলের নাম। মূলত রোমান্টিক ও স্নিগ্ধ সুভাষের কারণেই ল্যাভেন্ডার ফুলটি ব্রান্ড হিসাবেই রুচিশীল মানুষের কাছে প্রিয়।
এই ফুলকে নিয়ে গড়ে ওঠেছে বিশাল ফ্র্যাগনেন্স ইন্ড্রাষ্টি । তৈরী হচ্ছে দামী পারফিউম,প্রসাধনী, ভেষজ ঔষধ ও বিশাল টয়লেট্রিজ মার্কেটের অন্যতম প্রধান উপকরণ হিসাবেও এর জুড়ি নেই। এছাড়াও ব্রিটেনের মধু আহরণের সিংহভাগ মুধ সংগ্রহ করা হয় এই ল্যাভেন্ডার ফুল চাষ থেকে। বাণিজ্যিক মৌ চাষের মাধ্যমে।
বাণিজ্যিক কারণগুলোকে সামনে রেখে দ্যা মেয়ফিল্ড লেভেনডার এর পরিকল্পনাটি করেন ব্রানডেন মে। ১৯৯০ সালে।
তবে ল্যাভেন্ডার ফুল চাষের শুরুটা সুখকর ছিল না মোটেও। পঁচিশ একরের পার্কে অনভিজ্ঞ ফারমার রোপন করে ছিলেন ৭০ হাজার ল্যাভেন্ডাস। যার অনেকটা কাক এবং বুনো ইদুর নষ্ট করে দেয়। ফলে ল্যাভেন্ডার চাষে ফার্মটির মধ্যখানে ছিল অনেক চড়াই উৎরাই ও দূ:খগাঁথা।
ব্রানডেন ১৯৯০ ও ২০০০ সালে যখন ‘দ্যা ফাইন ডিভিশন অব উয়েলা ইউকে’ এর ডাইরেক্টর নির্বাচিত হোন তখন থেকে লেভেন্ডারকে একটি লাভজনক ব্রান্ড হিসাবে দাড় করাতে চেষ্টা করেও ব্যবসা সফল হতে পারেন নি। লেভেন্ডার তার পরও দমে থাকেন নি। তিনি নতুন ভাবে ফার্মকে গড়ে তু ১৯৯০ সালে।
ব্রানডেন ১৯৯০ ও ২০০০ সালে যখন দ্যা ফাইন ডিভিশন অব উয়েলা ইউকে এর ডাইরেক্টর নির্বাচিত হোন তখন থেকে লেভেন্ডারকে একটি লাভ জনক সুগন্ধি ব্রান্ড হিসাবে দার করাতে চেষ্টা করেও ব্যবসা সফল হতে পারেন নি। লেভেন্ডার তার পরও দমে থাকেননি। তিনি সেটাকে নতুন ভাবে ফার্মকে গড়ে তুলতে চান। কিন্তু বোর্ড অব উয়েলা তার প্রস্তাবটি নাকচ করে দেয়।
তে চান। কিন্তু বোর্ড অব উয়েলা তার প্রস্তাবটি নাকচ করে দেন।
মূলত ২০১০ সাল থেকেই ফার্মটিতে সাফল্য আসে। ব্রান্ডেন এবং লরাং প্রায় ১২ একর জায়গা নিয়ে শুরু করেন তার হার না মানা চ্যালেঞ্জ। পুরনো আবর্জনা পরিস্কার , নতুন ল্যাভেন্ডাস লাগানো, পরিচর্চায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন বর্তমানের এই অনিন্দ সুন্দর মে ফিল্ড ল্যাভেন্ডার ফার্মটি।
ফার্মের ভিতরেই খোলা আকাশের মাঝে আছে একটি ক্যাফে। সেখানে বসে দুপুরের বা হালকা খাবার খেয়ে খেয়ে উপভোগ করতে পারবেন সামনের নীলাভ ফুলেরসমুদ্র দৃশ্য। ফার্মে পিকনিক করে খাবার আয়োজন ও খাওয়া দাওয়া নিষিদ্ধ।
আছে একটি সুন্দর ল্যাভেন্ডার গার্ডেন এর দোকান। যেখান থেকে কিনতে পারবেন ল্যাভেন্ডার ফুলের চারা এবং ফুল।সুলভে কিনতে পারবেন ল্যাভেন্ডার ফুল থেকে তৈরী নানা প্রকারের সুগন্ধি সামগ্রিও।
বিশাল ফার্মে লেভেন্ডার এমন ভাবে লাগানো আছে যে, ডিজেবল স্কুটার এবং বাচ্চাদের পুশচেয়ার নিয়ে নির্ভিগ্নে ঢুকে দেখে আসতে পারবেন। ছোট শিশুসহ সব বয়সীদের জন্য আছে টয়লেট এর ব্যবস্থাও ভালো।
হাটা চলায় যাদের অসুবিধা আছে তাদের মন খারাপের কারণ নেই। মাত্র দুই পাউন্ডে পুরো ফার্মটি দেখার সুযোগ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। যথারীতি ষোল বছরের শিশুদের জন্য ফ্রি আছে ২০ মিনিটির এই ট্রাক্টর রাইড টিও।
ল্যাভেন্ডার গার্ডেনে দেখা মিলে নানা প্রজাতি ও রঙের পাখি। দিন দিন পর্যটক দেখে পাখিরাও মানুষ ঘনিষ্ট হয়ে গেছে। পর্যটকের আশপাশে নানা রঙের পাখি ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যটি দর্শনার্থীদের দেয় বাড়তি আনন্দ।
ফার্মের ভিতরে পা রাখতেই চমকে উঠতে হয়। মনে হয় ব্যাকগ্রাউন্ডে কারা সঙ্গীত এর সুর তুলে আছেন। একটু হাটতে লাগলে যেন আরও বিস্ময় কাজ করে- প্রায় শরীরের এদিক ওদিক ছুটতে ও বসতে দেখা যায় বড় বড় মৌমাছিদের। কোটি কোটি মৌমাছি ঘিরে আছে লেভেন্ডার ফুল। মধু সংগ্রহে। এই ল্যাভেন্ডার ফার্মের মৌচাষ থেকে উৎপাদিত হচ্ছে দামি মধু যা সরবরাহ হয়ে থাকে ইউরোপের অনেক দেশে। স্থানীয় ভাবেও এর কদর অনেক বেশী। লন্ডনবাসী গর্বেই একটু দাম দিয়ে কিনেন অর্গানিক এবং নিজ শহরের মধু বলেই।
ল্যাভেন্ডার গার্ডেনে যারাই আসেন মূলত ফুল ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতেই আসেন। এবং সেটাকে স্মৃতি পটে ধরে রাখার জন্য মুঠোফোন বা ক্যামেরায় ছবি তোলাও যেন বাধ্যতামূলক হয়ে যায় সবার কাছে। এই দূর্লভ মূহুর্তটি ছবিতে ধরে রাখার কাজটি অনেকের জন্য হতে পারে দারুন আনন্দেরও। কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ভিডিওগ্রাফি ও ফটো কম্পিটিশন নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। যেখানে অংশ নিয়ে জিতে নিতে পারেন দুইশত পাউন্ড।
এখানে অনেকে আসেন বিয়ে, এনগেজমেন্ট বা প্রিয়জনের সাথে বিশেষদিন বা মূহূর্তকে স্বরণীয় করে রাখতে। ফার্মে যদি প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার নিয়ে ঢুকে ছবি তোলতে চান তাহলে ফার্মের কার্যালয়ে আগে রেজিষ্টার হয়ে নিদৃষ্ট একটা ফি প্রদান করেই এই স্মৃতিযজ্ঞের কাজটি করতে হয়। চারদিকে তাকালে চোখে পড়ে ল্যাভেন্ডার ফুলের সমুদ্রে পালতোলা জাহাজের মতো ছোট ছোট ঘর। এগুলো মূলত পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেয়া হয়। অনেক ক্যাপল এখানটা ভাড়া করে তার প্রিয় মানুষটির সাথে কাটাতে আসেন। উপরে সূর্যের তাপ ধরে রাখার জন্য একটি ছাদ,চারপাশ খোলা,মুখোমুখি বসে ফুলের রাজ্যে বসে মনগহীনে ডুবে থাকার মতো অনিন্দ্য সুন্দর্য আসলে দ্বিতীয়টি হতে পারে কি না-অন্তত আমার কাছেই বিস্ময়ই! কোন ঘরই খালি নেই। প্রিয়জন নিয়ে ভরে আছে বিশুদ্ধতম ভালোবাসা ও রুচিশীল মানুষজন।
ব্রিটেনের সামার হলিডেতে পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মতো শিক্ষনীয় জায়গা বলেও এটির সুখ্যাতি আছে।
সবমিলিয়ে ফুলের রাজ্যে সারাদিন অপার মুগ্ধতা ও ভালোবাসায় কাটানোর মতো একটি জায়গা দ্যা মেয়ফিল্ড লেভেনডার।
আ নো য়া রু ল ই স লা ম অ ভি; কবি, সাংবাদিক, লন্ডন ।