ম্যানচেস্টারে হয়ে গেল বৈশাখি উৎসব এবং ঈদ আনন্দ। ১ জুলাই, রবিবার ম্যানচেস্টারের লংসাইটের রুশফোর্ড পার্কে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য এ আনন্দ উৎসবের। ২৯ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রৌদ্রজ্জল ছুটির দিন অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব। বলতে গেলে, মাত্র ৭ হাজার বাঙ্গালিদের আবাসন ম্যানচেস্টার হলেও নর্থ ওয়েষ্ট ইংল্যান্ডের সহস্র নারী–পুরুষ, শিশু–কিশোরদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ উৎসবে আয়োজনে ছিল পুরো বাঙালিয়ানা।
সকাল সাড়ে এগারোটায় এ উৎসবটি শুরু হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এর আগে ম্যানচেস্টার সিটি কাউন্সিলের স্কুল আর্ট এবং কালচার এর নির্বাহী সদস্য, লেবার পার্টির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা কাউন্সিলার লুৎফুর রহমান এ র্যালির উদ্বোধন করেন। র্যালিতে বাংলা সংস্কৃতির চিরচেনা বিভিন্ন ঐতিহ্য প্রদর্শিত হয়। র্যালি শেষে রোশফোর্ড পার্কের হলে উদ্বোধন করা হয় ‘চেতনার বৈশাখি উৎসব ও ঈদ আনন্দ’। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি আফজাল খান কাউন্সিলার লুৎফুর রহমানকে নিয়ে উদ্বোধন করেন এ উৎসবটি।
এমপি আফজাল খান বলেন, ‘ব্রিটেনের মাল্টিকালচারাল কমিউনিটিতে আবহমান বাঙ্গালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। চেতনা’র প্রতি বছরের আয়োজনকে তিনি ম্যানচেস্টারের অন্যান্য কমিউনিটির সাথে একটা যোগসূত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।‘ এর আগে কাউন্সিলার লুৎফুর রহমানের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এমপি বলেন, ‘আমি-ও চাই আগামী বছর এই মেলা ম্যানচেস্টারের ল্যান্ডমার্ক আলবার্ট স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হোক’। ম্যানচেস্টার সিটি কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনায় থাকা আলবার্ট স্কোয়ারের চেতনার বৈশাখি মেলার আগামী অনুষ্ঠান করার কাউন্সিলার লুৎফুর রহমানের প্রত্যাশাকে তিনি সাধুবাদ জানান। এবং দেশী–বিদেশী মানুষের উপস্থিতিতে দিনরাত কোলাহলময় থাকা আলবার্ট স্কোয়ায়ে আগামীর বৈশাখি মেলা যাতে চেতনা আয়োজন করতে পারে সেজন্যে তিনি সর্বাত্নক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
চেতনার সাধারন সম্পাদক ফারুক যোশীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগতিক বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ মাহমুদুর রহমান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ডেপুটি লর্ড মেয়র আবিদ চৌহান এবং সাবেক লর্ড মেয়র নাইমুল হাসান।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডাঃ নজরুল ইসলাম, নাসির খান সুয়েব, সুরাবুর রহমান, আব্দুল নাসের ওয়াহাব, মীর গোলাম মোস্তফা নাসির উদ্দিন, আব্দুল মুকিত প্রমূখ ।
উদ্বোধনের পর এলসিবি ম্যানচেষ্টারের নাজমা ইয়াসমীন ও চেতনার সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল হক ওয়েছের পরিচালনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংগঠনটির শিশু–কিশোরদের মনমতানো পরিবেশনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নর্থওয়েষ্ট ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নেয়া শিল্পীদের গাওয়া গানে মাতিয়ে রাখে প্রায় চার ঘন্টাব্যাপী চলমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সাবিনা ইয়াসমিন ও মরিয়ম ইসলামের সার্বিক পরিচালনায় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় পুরুষ ও মহিলাদের জন্য বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহি বিভিন্ন খেলাধুলা। এলসিবি ম্যানচ্যাষ্টারের কিশোর–কিশোরীরা ‘জাগো বাংলা’ নামের একটি পথনাটক প্রদর্শন করে খোলা মাঠে। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের অহংকার আর সম্ভাবনাকে তোলে ধরা হয় ‘জাগো বাংলা’র নাটকে।
নানা ধরনের স্টলে দিনব্যাপী মানুষের উপস্থিতিতে কোলাহলময় ছিল রুশফোর্ড পার্ক। লিভারপুল, ব্রাডফোর্ড, ওল্ডহ্যাম হাইড সহ বিভিন্ন শহর থেকে এসেছেন মানুষ এই উৎসবে। এমনকি সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা ব্লাকপুল এর বাঙালিরা এ উৎসবে এসেছিলেন একটা বিরাট বাসের যাত্রী হয়ে। বাচ্চারা খেলেছে বাউন্সি কাসল আর স্লাইডে ছেলেমেয়েদের নিয়ে আনন্দে মেতেছেন অভিভাবরাও। উৎসবে উপস্থিত ছিল অবাঙালি কমিউনিটিরও উল্লেখযোগ্য মানুষ।
খেলাধুলায় নারী–পুরুষ আর শিশু–কিশোরদের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে বিকেল পাঁচটা সময় শেষ হয় চেতনার ‘বৈশাখি উৎসব ও ঈদ আনন্দ‘।
সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন চেতনা আয়োজিত এ অনুষ্ঠান সফল করতে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী সেতু চৌধুরী,রুহুল আমিন চৌধুরী, জাভেদ ইকবাল মজুমদার, ফয়জুল হক জুয়েল, সাদি চৌধুরী, জাহান আলম, আজিজুল হক, আলমগীর চৌধুরী, সালেহা চৌধুরী, আমেনা ওয়েছ প্রমূখ।