বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
বিসিএর ১৭তম এওয়ার্ড : উদযাপিত হলো বাংলাদেশী কারি শিল্পের সাফল্য  » «   কবি ফয়জুল ইসলাম ফয়েজনূরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার আগ্রাসন’র মোড়ক উন্মোচন  » «   লন্ডনে চট্টগ্রামবাসীর ঐতিহ্যবাহী মেজবানী ও মিলন মেলা  » «   কাউন্সিল অব মস্ক টাওয়ার হ্যামলেটসের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো ১১তম মুসলিম চ্যারিটি রান, দেড়শত হাজার পাউন্ডের বেশি সংগ্রহ  » «   লন্ডনে পেশাজীবীদের সেমিনারে বক্তারা : দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশ পূনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে চায়  » «   মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এম সি এ) এর সদস্য সম্মেলন সম্পন্ন  » «   সাংবাদিক আব্দুল বাছিত রফির পিতা হাজী মো: আব্দুল হান্নান এর মৃত্যুতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দের শোক  » «   বাংলাদেশে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের সম্পদ সুরক্ষায় অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে  » «   ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটির উদ্যোগে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কর্মশালায় বিভিন্ন পেশার মানুষের অংশগ্রহণ  » «   হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের  বিরুদ্ধে নীতিহীন কর্মকান্ডের অভিযোগ  » «   সাংবাদিক ক্যারলকে গ্লোবাল জালালাবাদ ফ্রান্সের বিশেষ সম্মাননা প্রদান  » «   গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক জালালাবাদ উৎসব প্যারিস অনুষ্ঠিত  » «    সাকিব : নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতি  » «   লন্ডনে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী চাটগাঁয়ে মেজবান ৬ অক্টোবর রবিবার  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

প্রসঙ্গ বিয়ানীবাজার
পবিত্র-প্রমথ ও ইমদাদুর এখনও প্রাসঙ্গিক



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এই প্রসঙ্গে আমার লেখার কোন অভিপ্রায় ছিল না। খোঁচা খোঁচির নানান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বার্তার কারণে, লিখতে বাধ্য হলাম। আমি এটাও জানি অপ্রিয় সত্য অনেকের কাছে খারপ লাগে। নিজেকে দায়মুক্ত করতে পুরাতন জানা কথাটি আরো একবার জানানোর জন্যই লিখতে হলো। আমাদের উত্থান পতনের ইতিহাস নানান সময়ে গতিপথ বদলায়। নানান বাঁকে মোড় নেয়। সময়ের গতিপথের বাঁকে বাঁকে নানান ইতিহাস সৃষ্টি হয়। এই ইতিহাসের উজ্জ্বলিত অংশসমুহ বিবেকবান মানুষেরা লালন ও ধারণ করেন।

ইতিহাসকে চাপা দেয়া যায়না। মুছে ফেলাও যায়না। মিটমাটের ইতিহাসে স্থায়ীত্ব থাকেনা। ইতিহাস লাল নীলও হয়না। সময়ের প্রয়োজনে আপন মহিমায় ঝলমল করে জ্বলে ওঠে। এই উজ্জ্বলতা ছাইচাপা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায়না। ইতিহাসের জ্বলমল আলোকস্থম্ভ হয়ে পথ দেখায়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুপ্রাণিত করে। ইতিহাস সকল মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়না। ইতিহাস কাউকে কখনো ক্ষমা করেনি। বিবৃতির ইতিহাস ক্ষণস্থায়ী হয়। রং বদলায়। সত্য কখনো ছাঁইচাপা দিয়ে রাখা যায়না। সমাজের অনেকে যেমন ইতিহাস মানেননা। তেমনি ইতিহাসের প্রাসঙ্গিকতাও স্বীকার করেননা। গাঁয়ের জোরে বা মুখের জোরে অসত্যকেও অনেকে চাপিয়ে দিয়ে নিজের বাহাদুরি কায়েম রাখতে চান। সংখ্যায় খুবকম একদল মানুষ আছেন তাঁরা ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখেন। লালন পালনের পাশাপাশি গর্ববোধ করেন। সমাজের ভাল-মন্দ যে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা বিতর্ক হতে পারে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থায় আলোচনা সমালোচনা মানুষকে জাগ্রত করতে পারে। যে সমাজে আলোচনা সমালোচনা থাকেনা। এই সমাজ কতটা সভ্য উদার মানবিক এর মূল্যায়ন করা যায়না। যে আলোচনা সমালোচনা মানুষের কাজে আসেনা। মানুষকে শেখায় না। এমন অলোচনা সমালোচনা সমাজকে বিভ্রান্ত করতে পারে। যে কোন আলোচনা সমালোচনার শুরুর আগে তার সঠিক তথ্যাদি ও ইতিহাসটা জানতে হয়। ইতিহাস না জেনে ইতিহাসের মিটমাট করা বিষয় নিয়ে অতি উৎসাহী কথা সমাজে বিভাজন ছড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করা প্রয়োজন। যার যতোটুকু পাপ্য তাকে তাঁর সেটুকু বুঝিয়ে দেয়াও সমাজের নৈতিক কর্তব্য। পবিত্র-প্রমথ বিয়ানীবাজারে এখনও প্রাসঙ্গিক। তাঁদেরকে নিয়ে এখনও যেহেতু আলোচনা হয়। সেহেতু আগামী দিনের সমাজ বাস্তবতার কাছেও ‘পবিত্র-প্রমথ’ প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন।

 

ছবি: পবিত্র নাথ দাস

আমরা একসময় দেখতাম, সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ মহৎ কোন কাজের উদ্যোগ গ্রহন করলে, জাতির বিবেক শিক্ষক সমাজের দায়িত্ববানদের কাছে পরামর্শ চাইতেন। তাঁদের সহযোগীতা ও পরামর্শ নিয়েই জনস্বার্থের জন্য গৃহীত উদ্যোগের বাস্তবায়ন করতেন। এরই একটি বাস্তব উদাহরণ আজকের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ। বিয়ানীবাজারে একটি কলেজ নির্মাণের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা কালিন সতের সদস্যের কমিটির সবাই উদ্যোক্তা নন। দুই/তিনজন মানুষের “নিউক্লিয়াস” উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করতে কমিটির মাধ্যমে বলয় তৈরি করেন। বিয়ানীবাজারে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার “নিউক্লিয়াস” এর প্রথম দুই/তিনজন উদ্যোক্তা, সমাজহিতৈষী দানশীল পরিবারের সদস্য পবিত্র নাথ দাসের সাথে একান্তে সলাপরামর্শ করেন। তাঁরা তাঁকে বুঝান কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে আপনার সম্মতি চাই। কলেজ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়। এজন্য জমির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বাবু পবিত্র নাথ দাসের কাছ থেকে জমি প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েই, পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় কক্ষে কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, প্রধান শিক্ষক মরহুম হাছন আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কলেজ প্রতিষ্ঠার “নিউক্লিয়াস” কমিটির সতের সদস্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে স্বীকৃত। তাঁদের উদ্যোগ পরিকল্পনা মেধা শ্রম আর্থিক অনুদানের বদান্যতায় ১৯৬৮ সালের ১৫ আগষ্ট বিয়ানীবাজার কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রমথ নাথ দাস কলেজ প্রতিষ্ঠায় জমি দানের পাশাপাশি পারিবারিক স্মৃতি ভবন ও আসবাবপত্র নিঃশর্তে কলেজের শ্রেণী কক্ষ হিসেবে ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন। যাদের উদ্যোগে, যাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায়, যাদের দান অনুদানের সহযোগীতায় বিয়ানীবাজারে কলেজ প্রতিষ্টিত হয়। তাদেরকে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে, উদারমনে স্মরণ করার সময় এখনও কি অসেনি? নাকি তাঁদের অবদানের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে?

বিয়ানীবাজার কলেজ প্রতিষ্ঠার নিউক্লিয়াসের অগ্রযাত্রাকে গতিশীল ও কার্যকর করতে প্রমথ নাথ দাসের নামের পাশাপাশি অবৈতনিক প্রতিষ্ঠাতা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরহুম ইমদাদুর রহমানের নামটিও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মৃতির ক্যানভাসে স্থান পাওয়ার উপযুক্ত। জীবনজীবীকার তাগিদ থাকার পরও বেতনের চাকুরী ত্যাগ করে বিয়ানীবাজার কলেজের অবৈতনিক অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে ছিলেন ইমদাদুর রহমান। ‘ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল,/গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল।/ মুহূর্তে নিমেষ কাল, তুচ্ছ পরিমাণ,/ গড়ে যুগ যুগান্তর-অনন্ত মহান।’ কবিতার এই পংক্তিগুলো এখানে বড়ই প্রযোজ্য, বিয়ানীবাজার কলেজ প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সরকারী করণ হওয়ার আগ পর্যন্ত অনেক মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দান অনুদান অবদান যুগযুগান্তরে অনন্ত মহান করেছে। তেমনি বিয়ানীবাজার কলেজের পার্শ্ববর্তী গ্রামের অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন এলাকা, জেলা ও উপজেলা থেকে পড়তে আসা ছাত্রদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যাদের আর্থিক সামর্থ ছিলোনা। কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তরিক ও দরদী ছিলেন, তাঁরা হাঁস মুরগী ফল-ফসল গাভীর দুধ ডিম দু’হাতে দান করতে কৃপণতা করেননি। পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরহুম হাছন আলী চৌধুরী কলেজের ইংরেজী বিভাগের অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করতেন। প্রতিষ্ঠা কালিন সময় থেকে দীর্ঘদিন, পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের মাসিক টিফিন ফি আদায়ের টাকার একটি অংশ কলেজের শিক্ষকদের বেতনের জন্য প্রদান করতেন। তাঁদের দান অনুদান অবদানকে খাটো করে দেখা বা অস্বীকার করলে তাঁদের প্রতিও অবিচার করা হবে।

 

ছবি: প্রমথ নাথ দাস

শিক্ষাক্ষেত্র পিতা-পুত্র পবিত্র নাথ দাস ও প্রমথ নাথ দাসের অবদান সমান সমান। পিতাকে বাদ দিয়ে পুত্রের গলায় যশের মুকুট বেমানান। ‘পবিত্র প্রমথ’ একই বৃন্তের দুটি ফুল। একটি আরেকটির সমর্থক। আগামীতে যাকিছুর নামকরণ হয়না কেনো ‘পবিত্র-প্রমথ’ নাম করণে মাধুর্যতা থাকা প্রয়োজন। কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোর নাম করণের এখতিয়ার যদি থেকে থাকে, তবে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা ও অনুমোদন সাপেক্ষে কলেজ কর্তৃপক্ষ মানুষের অবেগ অনুভূতিকে ধারণ করতে প্রতিষ্ঠাতাদের পাশাপাশি স্থানীয় দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদদের নামে ভবনের নাম করণ যুক্তিসঙ্গত হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নৈতিক কাঠামোর বাাইরে গিয়ে, জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ করে অনেকের নামে অনেক কিছু করার প্রবণতার সংস্কৃতি আমাদের সমাজে বিরাজমান। সমাজের জন্য ভালো কাজ করলে সেই কাজ থেকে যায়। মানুষ তাঁকে মনে রাখে। জীবৎকালে মানুষ অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তাঁর মৃত্যুর পরও মানুষ তাঁকে মনে রাখেন। কারণ, ঐ প্রতিষ্ঠান মানুষের অনেক উপকারে আসে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা তৈরির সময় কারও কারও মনে একধরনের পরিমিতিবোধ কাজ করে। তাঁরা প্রিয়জনের নামে অনেক স্থাপনা তৈরি করেন। নিজের নামে করেন না। তবে সবার মধ্যে এই বোধ কাজ করে না। এ ক্ষেত্রে আমদের সমাজের এক ধ্রুব সত্যের নাম পবিত্র- প্রমথ নাথ দাস পরিবার। কালজয়ী কবি শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত উক্তির সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও সুর মিলিয়ে বলে ছিলেন ‘নামে কি আসে যায়’। বর্তমান সমাজ বাস্তবতার বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণে উক্তিটির যথার্থ অর্থের  উল্টোদিকে চলছে। অর্থাৎ আমরা নামের পিছনেই ছুটছি।

১৯৭৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রমথ নাথ দাস পরলোক গমন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর দুটি শোকসভার মধ্যে একটি পারিবারিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। অপরটি বিয়ানীবাজার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রমেন্দ্র কুমারের আহবানে সর্বমহলের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এর ২৮ বছর পর ২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি  বিয়ানীবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির উদ্যোগে উপজেলা সম্মেলন কক্ষে প্রমথ নাথ দাস ও সাংবাদিক আবদুল বাসিত স্মরণ সভায় অন্যতম উদ্যোগক্তাদের  আমিও একজন। এরই মধ্যে অরুণাভ পাল চৌধুরী মোহনের সম্পাদনায় ‘প্রমথ নাথ দাস স্মারকগ্রন্থ‘ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিয়ানীবাজার কলেজের কলাভবনে অনুষ্ঠিত শোকসভায় সর্বজন সম্মত হয়ে, কলেজ রোডটির নাম “প্রমথ নাথ দাস সড়ক” হিসেবে সভা থেকে ঘোষনা করা হয়। ‘বাবুর বাড়ির পথ‘ নামে পরিচিত সড়কের কলেজ সম্মুখ থেকে প্রধান সড়ক পর্যন্ত ‘নাপিত আঁটি’ একসময় বহুল প্রচারিত ছিলো। সেই অর্থে প্রমথ নাথ দাসের নামে সড়কের নাম করন নতুন নয়। আমরা মনস্থাত্বিকভাবে মেনে নিতে পারিনা বলেই ” প্রমথ বিপনি”  লিখিনা, মুখেও বলিনা। লিখি ও বলি হাইস্কুল মার্কেট। বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র প্রমথ নাথ দাসের নামে রাস্তায় নতুন ফলক লাগিয়ে উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগেই বোমা ফাঁটিয়েছেন। এখন নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। কলেজ রোডে, প্রমথ নাথ দাসের নামে ফলক লাগানোর মানে এই নয় যে, কলেজ ক্যাম্পাসে প্রমথ নাথ দাসের নামে কোন ভবনের নাম করণ করা যাবেন। এমন চিন্তা ভাবনা করা উচিত নয়। কলেজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। অনেকে মনে করেন, প্রমথ নাথ দাসের নামে কলেজে একটি ভবনের নাম করণ এখন সময়ের দাবী। কলেজ কর্তৃপক্ষ উপজেলার মানুষের সকল অবেগ অনুভূতি ধারণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছ থেকে গণপ্রত্যাশা পুরণে  উদ্যোগ নিতে পারেন।

ছবি: অধ্যক্ষ  ইমদাদুর রহমান

বিরোধীতার জন্য বিরোধীতার সংস্কৃতি রাজনীতিতে থাকতে পারে। প্রতিষ্ঠান নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। প্রমথ নাথ দাসের নামে কলেজের একটি ভবনের নাম করনের জন্য সমাজিক মাধ্যমে দাবীর পাশাপাশি বিরোধীতাও চলছে। যারা নাম করনের দাবী করছেন। তাঁদের অনেকে হয়তো এই কলেজের শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষার্থী হিসেবে এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ভূমিদাতার সম্পর্কে তাঁরা কতোটা জানেন? যদি জানা থাকতো, অবশ্যই প্রমথ নাথ দাসের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকীতে স্মরণ সভার আয়োজন করতেন। শিক্ষার্থী হিসেবে ভূমিদাতা প্রতিষ্ঠাতার প্রতি আন্তরিক ভালবাসা বা দায়বদ্ধতা থেকে বিয়ানীবাজারবাসীকে দায়মুক্ত করার উদ্যোগ নিতেন। কলেজের শিক্ষার্থীদের বাহিরে, উপজেলার নাগরিক হিসেবে অনেকেই নানান যুক্তিতে সড়ক ও কলেজের ভবনের নাম করণ নিয়ে অহেতুক তর্কে বিতর্কে জড়িয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে তর্ক বিতর্ক থেকে মানুষ নানান ভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এমন বিভ্রান্তি ছড়ানোর সঠিক হবেনা। যাতে করে মানুষের হৃদয়ের ভালোবাসায় সিক্ত ‘পবিত্র-প্রমথ’ প্রাইভেট কোম্পানিতে পরিণত না হন।

প্রমথ নাথ দাসের নামের পাশাপাশি কলেজের নিউক্লিয়াস সদস্যদের নাম খোদাই করা না থাকলে তাঁদের প্রতিও অবিচার করা হবে। আজকের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠায় যারা প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা হিসেবে ঐতিহাসিক দায়িত্বটা পালন করে ছিলেন তাদের নাম আমরা কতোজনে জানি। সেইসব মহান ব্যক্তিরা কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন বলেই, আজ কলেজটি তার পূর্ণতা পেয়েছে। নতুবা বর্তমান সময়ে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও জমি সমস্যার সমাধান করা সরকারের পক্ষেও ক্ষেত্র বিশেষ অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের উন্নয়নে আমাদের এলাকার সংসদ সদস্য ও সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আমাদের পূর্বপুরষদের দূরদর্শী ভবিষ্যৎ চিন্তার ফসল বিয়ানীবাজার কলেজ। এই কলেজের ৫০ বছরের ইতিহাস আছে। আসুন নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমরা দায়িত্বশীল হই। মানুষের পাপ্য মর্যাদাকে সম্মান জানাই। নিজেরাও সম্মানিত হওয়ার এখনই সময়।

লেখক: সাংবাদিক ও সমাজ অনুশীলক।

 


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন