কীভাবে মারা গেলেন ৩ আফগান ক্রিকেটার: পাকিস্তানে খেলবে না আফগানিস্তান
- আপডেট সময় : ১০:৫৭:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
- / 157
ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাব বহু বছর ধরেই পড়ছে ক্রিকেট অঙ্গনে। সম্প্রতি এশিয়া কাপ ঘিরেও হয়েছে নানা বিতর্ক। এবার সেই উত্তাপ ছড়াল আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কেও। উর্গুন জেলায় সীমান্ত সংঘাতে ৩ আফগান ক্রিকেটারের মৃত্যুর ঘটনায় পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেছে আফগানিস্তান।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) গত মাসে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে এই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ঘোষণা দিয়েছিল। রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে ম্যাচগুলো হওয়ার কথা ছিল আগামী ১৭ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত। আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই সিরিজটির আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
তবে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানায়, উর্গুনে পাকিস্তানের হামলায় কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছিলেন তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটার। তারা পাক্তিকা প্রদেশের রাজধানী শারানায় একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাড়ি ফিরছিলেন।
এসিবি জানায়, এই হামলা আফগানিস্তানের ক্রিকেট পরিবার, ক্রীড়াবিদ এবং দেশের সার্বিক ক্রীড়া অঙ্গনের জন্য বড় এক আঘাত। প্রাণ হারানো তিন ক্রিকেটারের ছবি প্রকাশ করে বোর্ড জানায়, পাক্তিকায় ‘শহীদ হওয়া ক্রিকেটারদের প্রতি’ তারা সংহতি জানাচ্ছে।
‘পাকিস্তানি শাসকদের কাপুরুষোচিত এই হামলায়’ গভীর শোক ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আফগান ক্রিকেট বোর্ড।
এই ঘটনাকে ‘মর্মান্তিক’ উল্লেখ করে এসিবি জানায়, নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ও তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে তারা পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় বেশ কিছুদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কূটনৈতিক সম্পর্কও ক্রমশ অবনতি হচ্ছে।
গত মাসে এশিয়া কাপের আগে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছিল শারজাহতে, যেখানে তৃতীয় দল ছিল স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাত। পাকিস্তানের মাটিতে আফগানিস্তানের এই প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার কথা ছিল। প্রাথমিক পর্বে দুই দলের দেখা হওয়ার কথা ছিল দু’বার— ১৭ নভেম্বর উদ্বোধনী ম্যাচে ও ২৩ নভেম্বর।
আফগানিস্তান সরে যাওয়ায় এখন টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
২০২৩ সালের এশিয়া কাপ ও চলতি বছরের শুরুতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের মাঠে খেলেছিল আফগানিস্তান। তবে সেসব টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের মুখোমুখি হতে হয়নি।
তিন ক্রিকেটারের মৃত্যু কিভাবে ঘটেছে
আফগান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) দাবি, পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে অন্তত ৩ আফগান ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন।
এক শোকবার্তায় এসিবি জানায়, তারা পাকতিকার উর্গুন থেকে শারানা এলাকায় এক প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন। হামলায় মোট আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন ক্রিকেটার কাবির, সিবগতুল্লাহ ও হারুন।
এসিবি বলেছে, “উর্গুনে ফিরে আসার পর একটি জমায়েতে তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।”
এ ঘটনাকে পাকিস্তানি শাসকদের পরিচালিত ‘কাপুরুষোচিত আক্রমণ’ বলে উল্লেখ করেছে আফগান ক্রিকেট বোর্ড, যদিও হামলা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
এনডিটিভি জানিয়েছে, নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এসিবি শুক্রবার রাতে এক্সে পোস্ট করে বলেছে, “পাকিস্তানি শাসকদের কাপুরুষোচিত হামলায় আজ সন্ধ্যায় পাকতিকা প্রদেশের উর্গুন জেলার সাহসী ক্রিকেটারদের শহীদ হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।”
ক্রিকেটারদের শোক
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক হামলাগুলোর নিন্দা জানিয়েছেন আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক রাশিদ খান। সেই সঙ্গে এসিবির ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
রাশিদ খান এক্স পোস্টে লিখেছেন, “পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলাগুলোয় আফগানিস্তানে বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানিতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। এই ট্র্যাজেডিতে নারী, শিশু এবং সেই তরুণ ক্রিকেটারদের জীবন গেছে, যারা বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্বের স্বপ্ন দেখত।”
তিনি আরও লিখেছেন, “বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বর্বরোচিত। এ ধরনের অন্যায় ও অবৈধ কর্মকাণ্ড মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং এগুলো উপেক্ষা করা উচিত নয়।
“নিরীহ মানুষের প্রাণহানির প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা থেকে বিরত থাকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসিবি, আমি তাকে স্বাগত জানাই। এই কঠিন সময়ে আমি আমাদের জনগণের পাশে আছি; আমাদের জাতীয় মর্যাদা সবকিছুর ঊর্ধ্বে।”
আফগান দলের আরেক তারকা মোহাম্মদ নবী বলেছেন, “এই ঘটনা শুধু পাকতিকা নয়, পুরো আফগান ক্রিকেট পরিবারের জন্য এবং পুরো জাতির জন্য এক শোকাবহ অধ্যায়।”
পেসার ফজলহাক ফারুকি ফেসবুকে লিখেছেন, “নিপীড়কদের হাতে নির্দোষ বেসামরিক নাগরিক ও আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটারদের এ হত্যাকাণ্ড এক জঘন্য ও ক্ষমাহীন অপরাধ।”
সীমান্ত সংঘাত
আফগান সংবাদমাধ্যমের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে শুক্রবার একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এ ঘটনায় ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে কাবুল।
তোলোনিউজের সূত্রে বলা হয়েছে, হামলায় উর্গুন ও বারমাল জেলার আবাসিক এলাকা নিশানা করা হয়, যেখানে বহু বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন।
এনডিটিভির খবরে আরও বলা হয়, সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতির মধ্যেই এই প্রাণঘাতী হামলা ঘটে।
এর আগে পাকিস্তান দোহা আলোচনার পর্যন্ত অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল। কাবুল সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানায় এবং আলোচনার শেষ পর্যন্ত অস্ত্রবিরতির সময় নির্ধারণ করা হয়। দুই পক্ষের মধ্যে শনিবার আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।



















