­
­
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সুইডেনে অতর্কিত বন্দুক হামলায় নিহত ৩  » «   ইতালিতে বর্ণাঢ্য বৈশাখী উৎসব বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের  » «   ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানিতে চমক: চীনের ঘাটতি পূরণ করছে বাংলাদেশ  » «   কানাডায় লিবারেলদের জয়, কী কারণ  » «   রাখাইনের জন্য করিডর বাংলাদেশের জন্য কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?  » «   ইউরোপ ৪ দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন!  » «   ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি  » «   বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার  » «   নতুন এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ  » «   ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে উড়ল প্রথম কার্গো ফ্লাইট  » «   রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার  » «   শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানান মোদি  » «   ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ কবিতার কবি দাউদ হায়দার আর নেই  » «   গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি আটক  » «   ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কোন দিকে মোড় নিতে পারে?  » «  

প্রবাসী: যাদের কোন দেশ নেই ! নেই অধিকার!



 

বাঙালিদের নিয়ে একটি  অনুপ্রেরনাদায়ী কথা   আমি শতবার বলতে ভালোবাসি –   হারার জন্য জন্মায়নি বাঙালি।

আমরা হেরে যাই। বার বার হেরে যাই।কিন্ত- শেষ পর্যন্ত আমরা বাঙালিরা- হারতে হারতে জিতি ।এই হারতে হারতে জিতার মধ্যে  একটি মৌলিক আনন্দ আছে।

আছে তিক্ত অভিজ্ঞতালব্ধ  সময় থেকে বের করে আনা সূর্যমুখি আলোর গল্প । আছে -অসম্ভব মুগ্ধতার অনুভূতিও।

দেড় কোটির-ও বেশী প্রবাসীদের বলতে গেলে  এখন কোন দেশ নেই। প্রবাসে  তো শিকড়হীন।

সহজ কথায় বললে,  আমাদের গায়ের কাপড়ের সাথে আরেকটি নামও জড়িয়ে গেছে এখন, তা হলো -পরবাসী। মাতৃভূমি বাংলাদেশে পরিবার এবং কিছু আপনজন বাদে সকলের কাছে- আমরা এখন বিদেশী। অর্থাৎ প্রবাসী।

দেশে ইদানিং প্রবাসীদের বলা হয়- বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছেন। আর  তিক্ত অভিজ্ঞতায় বুকচাপা কষ্ট নিয়ে  হিলিয়াম বেলুন শুকা  কণ্ঠে  প্রবাসীরা যখন মাতৃভূমে  অল্পদিন থেকে  আবার  আপনজনদের  সুখের জন্য – প্রবাসে আসেন। তখন, আমরা প্রবাসীরাও আজকাল  অপকটে বলি-  ভাই ,এবার কতদিনের হলিডে-তে ছিলেন?

বলতে গেলে প্রবাসীদের কিছু-ই নেই। আমরা হয়তো আবেগে খেয়াল করিনি- যেদিন আমাদের পাসপোর্টে  প্রবাসীর সীল পড়েছে, সেদিন থেকেই আমাদের সবকিছু নাই হয়ে গেছে।

বলতে পারেন, দিন-রাত  খাটুনির মধ্যে কয়দিন মাতৃভূমির কথা মনে পড়েনি, প্রবাসীর? হলফ করে বলতে পারি, বাবা-মা। স্ত্রী- সন্তান। প্রিয়জন-পরিজনদের কথা মনে হয়নি- এমন  খুব কম দিন আছে প্রবাসীদের।

গর্বে ক’জন প্রবাসীর মন ও বুক ভরেনি, যখন শুনেন- নিজ দেশের ভালোকাজ, সাফল্য, সম্ভাবনার সংবাদ ?

প্রিয়স্বদেশ কি জানে- একজন প্রবাসী প্রতিদিন মা- মাটি-মাতৃভূমির জন্য কীভাবে আকুল- বেকুল থাকে। তাদের জন্য  কতটা মন কাদে?

মধ্যপ্রাচ্য সহ প্রাচ্যের দেশগুলোতে কী অবর্ণনীয় কষ্টে   টাকা সঞ্চয় করে দেশে টাকা পাঠায় তারা।

কতজন প্রবাসী  ঋণ না করে দেশে বাবা -মা কে দেখতে যায় বা ফিরে আসতে পারে ঋণ হীন?

দেশে যাবার সময়ে তাদের লাগেজে -প্রবাসীর নিজের সুখের জন্য কি কোন বিশেষ কিছু নিয়ে যায়?

প্রবাসী হওয়া মানেই শুধু দিয়ে-ই যাওয়া। হোক টাকা পয়সা। জমি,বাড়ি, গাড়ি, বৈভব…।

দেশে  অনেকের হয়তো  জানা থাকলেও অনুভবে নেই যে, প্রবাসীরা  ঋণের  বোঝা নিয়ে দেশে আসে।

তবে   আমরা প্রবাসীরা  জানি দেশে যেতে আমাদের   বিলিয়ে দিতে হয় অনেক কিছু। নো-ভিসা রিক্যুয়ার্ড বা পাসপোর্টের কোন সমস্যা থাকলে বিদেশে বাংলাদেশী প্রায় প্রতিটি  দূতাবাসে প্রবাসীদের  গিয়ে  হজম করে হয়  অবহেলা ও বঞ্চনা।

বিমানে ও বিমানবন্দরে  প্রবাসী যাত্রীদের সাথে কিছু কর্মকর্তারা যে ব্যবহার করেন, আমার বিশ্বাস- বাসায় তাদের কাজের সাহায্যকারীদের সাথেও একম ব্যবহার করেন না।কারণ এরকম ব্যবহার করলে পরদিন সে আর কাজে আসবে না!

দেশে গিয়ে একজন প্রবাসী যখন বাজারে যায়-তখন দোকানীও মনে করে একটু বাড়িয়ে দাম নেয়া তার অলিখিত অধিকার।

আপনার ( প্রবাসীর) প্রিয় খেলার মাঠের টুর্ণামেন্টে চাঁদা না দিয়ে খেলা দেখতে যাওয়া মানে – কিপটেমির অপবাদ নিয়ে মাথা নিচু করে বাড়ি ফেরা।

প্রবাস থেকে গিয়ে পাড়ার ক্লাবে কিছু দেননি তো আপনি  চরম অকৃতজ্ঞ,অসামাজিক  একজন।

পাড়ায় ধর্মীয় সভায় আপনি চাঁদা দেননি, তো- আপনি  প্রবাসের  নষ্ট  সংস্কৃতিতে বখে যাওয়া একজন অমানুষ।

আত্নীয়-বন্ধুদের জন্য বিদেশী গিফট  না নিয়ে দেশে আসলে  আপনি- পুরোনো দিন, সময় ও অবস্থা ভুলে যাওয়া একজন  চরম অহংকারী।

প্রবাসীর বাড়ি আসা মানে- বাড়ির নতুন ঘর তৈরীর পরিকল্পনা, পুরোনো ঘরে রঙ দেয়া,  রিপিয়ারিং, পাড়ার চাঁদাবাজি, বিয়ে- শাদি ইত্যাদি খরচ বহন করা।

এই তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলেও এগুলো থেকে একজন প্রবাসী কী বের হতে পারেন?

দেশে প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিকভাবে প্রবাসীদের  নিগৃহিত, শোষিত ও বঞ্চিতের ঘটনা বাড়ছে দিন দিন।

দূতাবাস,বাংলাদেশ বিমান, বিমানবন্দর , সরকারী আমলা-কামলা থেকে শুরু করে পাড়ার মোদি দোকানে-  যারা এই কাজটি করেন, করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন-  নতুন বছরে আরও দীর্ঘ হোক  প্রবাসীদের লুটে-পুটে -চেটে খাওয়ার তাদের পরিকল্পনা।

তবুও আমাদের ঘাম-গন্ধমাখা  রেমিটেন্সে লাল- সবুজ পতাকা হাসুক। আমরা প্রবাসীরা মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। ভালোবাসবো লাল-সবুজের  মা-মাটি ও মানুষ।

পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা সকল প্রবাসীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

আ নো য়া রু ল  ই স লা ম  অ ভি : কবি, সাংবাদিক 

লন্ডন,  পহেলা জানুয়ারী দুই হাজার বাইশ। লন্ডন,যুক্তরাজ্য।

 

আরও পড়ুন-

ব্রিটেনে করোনা সময় : ‘… আমাদের কেউ নেই’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন