­
­
মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
গাজায় গণহত্যা: ছয় জেলায় বাটা-কেএফসিতে হামলা-ভাঙচুর, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ  » «   গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে, সংকুচিত হয়ে পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা  » «   গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন : প্রতিবাদে সামিল বাংলাদেশ  » «   যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কারোপ: বাংলাদেশের জন্য সুযোগও সৃষ্টি হতে পারে  » «   ১০০ ডলারের টি-শার্টের শুল্ক ৪৯ ডলার!  » «   বাংলাদেশসহ ১৩ দেশের ওপর অস্থায়ী ভিসা নিষেধাজ্ঞা সৌদির  » «   ট্রাম্পের শুল্ক ধাক্কা কীভাবে সামলাবে বাংলাদেশ  » «   ইউনূস-মোদীর প্রথম বৈঠকে হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইল বাংলাদেশ  » «   বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭% শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের, পোশাক শিল্পে বড় ধাক্কা  » «   জাফলং ঘুরতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ গেলো কিশোরের  » «   ১৭ বছর পরে জাতীয় ঈদগাহের ঈদ জামাতে সরকারপ্রধান  » «   ঈদ আসে, গাজায় আনন্দ আসে না  » «   এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া  » «   মিয়ানমারে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরও হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী  » «   ঈদযাত্রা: শুক্র ও শনিবার ঢাকা ছেড়েছে ৪১ লাখ সিমধারী  » «  

ধুমপান ও একটি আনন্দময় জীবনের গল্প



ধুমপান থেকে   মানুষকে সচেতন করতে প্রতিটি  ব্রান্ডের সিগারেটের পকেটের গায়ে সর্তকীকরণ বার্তা  লেখা থাকে- ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অথবা ধুমপান বিষ পান। সিগারেট শুধু স্বাস্থ্যে জন্য  ক্ষতিকর  তা নয়। সিগারেট  আর্থিক ও পরিবেশের জন্য   ক্ষতির কারণও বটে। এই  ক্ষতি জানার পরও  আমরা অনেকেই ধুমপান করি।আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস যে, এমন  কাউকে পাওয়া যাবে না, যিনি ধুমপায়ী এবং তিনি জানেন না ধুমপান স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না।

বেঁচে থাকার প্রয়োজনে আমাদেরকে ধুমপান করতে হবে তা কিন্তু নয়।  প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, তাহলে মানুষজন কেন ধুমপান করে? আসলে ধুমপায়ী প্রতিটি মানুষের ইতিহাস প্রায় একই রকম। তারা শখের বসে ধুমপান করতে গিয়ে একসময় নেশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। ধুমপায়ীরা সময়ের ব্যবধানে  বুঝতে পারে- এই ধুমপানে তারা নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সাথে তাদের পরিবারের সদস্যরা,আপপাশের মানুষ, বন্ধু-স্বজনদেরও ক্ষতি করছে। পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে । অপ্রিয় বাস্তবতা হলো- ধুমপায়ী এসব  বুঝলেও বেশীরভাগ   এই নেশা ত্যাগ করতে পারেন না।

ফলত নেশা যা করার তাই করে। ধীরে ধীরে ধুমপায়ীর  শরীরে রোগ সহজে আশ্রয় নেয়। নিকোটিনের বিষ  নানা রোগবালাই নিয়ে  শরীরে আরামদায়ী  বসত গড়লেও   ধুমপায়ী নিজের অবচেতনে মৃত্যুর পথে দ্রুত হাটেন। বেশীরভাগের জীবনে নানা রোগ নিয়ে  মৃতের তালিকায় নাম লেখান। আর যারা বেঁচে থাকেন, তাদের রোগবালাইর ঝুঁকিময় জীবন নিয়ে, পরিবার পরিজনকেও চরম দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা, কষ্টের  মধ্যে রেখে বাকী জীবন পার করেন।

রাষ্ট্র, সমাজ এবং সংসার কেউই  আমাদের এই  অকাল মৃত্যু কামনা করে না। তাই ধুমপায়ীদের রক্ষায়  রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন চ্যারিটেবল সংস্থা, সামাজিক সংগঠনের  পক্ষ থেকে  জনগণকে সচেতন করতে অথবা এ থেকে নিরাময় করতে বিভিন্ন দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছেন ।

ধুমপান থেকে রক্ষার পাশাপাশি আমাদের আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ উপহার দিতে রাষ্ট্র ও সমাজ যে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যারা ধুমপায়ী, তাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা একান্ত জরুরী। এক্ষেত্রে ধুমপায়ী যদি নিজ থেকে  নিকোটিনের কুফলগুলো অনুধাবন না করেন বা করতে চেষ্টা না করেন তাহলে  সিংহভাগ ধুমপায়ীর ‘ ধুমপান না করার সাময়িক চেষ্টা ‘  ব্যর্থ হয়ে যায় ।

নিজের দেখা অনেক পরিচিতজন আছেন, যারা অসংখ্যবার ধুমপান ত্যাগের চেষ্টা করেও বিফল হয়েছেন।অনেক পণ ও বাজি ধরেছেন-কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সহজ সত্য হলো- ধুমপান এক ধরণের নেশা। নেশা থেকে উত্তোরণের সহজ, সমান্তরাল কোন পথ নেই। হুট করে যে কেউ চাইলেই নিকোটিনের অভ্যাস ছেড়ে দেয়া সহজ নয়। তবে ছেড়ে দেয়া যে যায় তার ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে।

আমি পেরেছি!

বিনয়ে বলতে পারি, আমি এর একটি ছোট উদাহরণ। এক সময় আমিও ধুমপায়ী ছিলাম। অধিকজনের মতো সখের বশীভূত হয়ে বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে সিগারেট এনে একদম- দুইদম মেরে এভাবেই একসময় ধুমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। এবং বলা যায় ধুমপানের  নেশায় পড়ে যাই।

ধুমপানের এই অভ্যাসটা  শুরু আমার কলেজ জীবন থেকে। এই ধুমপান যে আমার বা সমাজের কারো মঙ্গল বয়ে আনবে না তা  জেনেও আমি ধুমপান করেছি। অন্যান্যদের  মতো ঢং- তামাশা করে বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে একটান- দুটানে মধ্য দিয়ে আসক্তির পথে এগিয়ে যাই। এভাবে চলে অনেক বছর। এক পর্যায়ে আমি লক্ষ্য  করি ধুমপান আমার স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত করছে।আমাদের বয়সীদের ধুমপান  সবার সামনে  করার সাহস ছিলনা।  তাই লুকিয়ে লুকিয়ে অন্যদের পাশ থেকে দূরে গিয়ে, নিজের সময় নষ্ট করে তা সেবন করতে হয়েছে।

নিকোটিন সেবনের পরের কাজটি ছিল আরও ভয়ংকর কষ্টের। ধুমপান করার পর দুর্গন্ধজনিত কারণে সবার সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে মিলামেশা যাচ্ছে না। নিজের মুখে সবসময় দুর্গন্ধ থেকে যাচ্ছে। গায়ে থাকা কাপড়েও দুর্গন্ধ লেগে থাকছে। বাসায় বৌ-বাচ্চারা আমার এই কাজটি ভালো দৃষ্টিতে নিচ্ছেন না, প্রতিনয়ত এই অভ্যাস ত্যাগের চাপ থাকছে। এতকিছু থাকার ও বুঝার পরও আমি চালিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মধ্যে দু-এক বার ছাড়ার হালকা চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। আমার বিবেক প্রতিনিয়ত ভাবাচ্ছে তা ত্যাগের জন্য, কিন্তু আমি ত্যাগ করতে পরছি না।

একসময়  ত্যাগের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েও ভাবি- মানুষের অসাধ্য কিছু নাই যে পারে না, তাহলে আমি কেন পারছি না?  ভাবলাম এমনি এমনি ছাড়া যাবেনা, তার জন্য পরিকল্পনা ও প্রতিজ্ঞা প্রয়োজন।  আমার ভাবনায় আসল আমার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে যে সিগারেট কিনে খাচ্ছি তাতে আমার অপকার ছাড়া কোনো উপকার নেই। পাশাপাশি নির্বোদের মতো আমার কষ্টার্জিত টাকা ধুমপানের নামে পুড়িয়ে ফেলছি। আমার ভাবনায় পজিটিভ চিন্তা এলো-ভেবে দেখলাম, প্রতিদিন আমি অনর্থক সিগারেটের পিছনে যে টাকা ব্যয়ে করি তা দিয়ে বাংলাদেশের একটি পরিবার সুন্দরভাবে চলতে পারবে। দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রী যারা অর্থের অভাবে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের অনেককে আলোকিত করতে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা যাবে। এই চিন্তা থেকে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই -ধুমপান নামক এই কু- অভ্যাস ত্যাগের। আলহামদুলিল্লাহ ২০২১ সালের শুরুতে আমার ধুমপান ত্যাগের তিন বছর পূর্ণ হলো। এই  তিন বছর ধুমপান ত্যাগের মাধ্যমে সঞ্চিত অর্থ সমাজের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয়ে করে যাচ্ছি।

আমার বিশ্বাস নিজের সুস্বাস্থ্যের প্রতি চিন্তা এবং সুস্থ , সুন্দর জীবনের জন্য জেদ ও ভালোবাসা থাকলে সামান্য পরিকল্পনায় আপনিও পারেন এই কু- অভ্যাস ত্যাগ করতে।

আপনি প্রথমে ভাবুন- এই অভ্যাস আপনার জীবনে বিন্দু মাত্র কী উপকারে আসছে? যদি  উত্তর হয় ’না’  তাহলে, ভাবুন আপনার কষ্টার্জিত অর্থ কেন অনর্থক পুড়িয়ে ফেলছেন। ধুমপান শুরুর সময় থেকে আজকের এই দিন পর্যন্ত সময়গুলো গুণে হিসাব করে দেখুন-  প্রতিদিন এক প্যাকেট সিগারেট কিনতে গিয়ে বছরে আপনি অনর্থক কত টাকা নিজের জীবন ধ্বংসের পেছনে ব্যয় করেছেন।

কে কোন দেশে, কোন ব্রান্ডের সিগারেট সেবন করেন, তা  আমার জানা নেই। আমি যুক্তরাজ্যের লন্ডনবাসী হিসাবে   বলতে পারি-যারা লন্ডনে থাকেন, তারা সাধারণত বেনসন সেবন করেন। বর্তমানে লন্ডনে এক প্যাকেট ভেনসন সিগারেটে দাম এক পেন্স কম তের পাউন্ড  ( £12.99) । সেই হিসেবে আপনি বছরে নিকোটিনে  পুড়াচ্ছেন চার হাজার সাতশ একচল্লিশ পাউন্ড পয়ত্রিশ পেন্স (£4,741.35)।  যা বাংলাদেশের টাকার হিসেবে প্রায় পাঁচ লক্ষ।   একটু মানবিক দৃষ্টিকোণে চিন্তা করে দেখুন- প্রতিবছর  আপনি নিজের শারীরিক ক্ষতি করে যে টাকা ধুমপানের মাধ্যমে  পোড়াচ্ছেন তা দিয়ে বাংলাদেশের কতজন অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের  শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পারতেন। অথবা আপনার সমাজের আশপাশে থাকা দরিদ্রদের কতটুকু সাহায্য করতে পারতেন। বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন- ধুমপানের নামে বিষপান ত্যাগের   জন্য আপনার মনে  অদ্ভুদ ধরণের এক শক্তি চলে আসছে, যা আপনাকে ধুমপান ত্যাগে সহযোগিতা করছে!

 

এছাড়া মুসলিম ধর্মালম্বিদের মধ্যে  যারা রোজা রাখছেন তাদের জন্য এই রমজান মাস হতে পারে একটি সেরা সময়। রমজানের সিয়াম সাধনার কারণে  ১৫ থেকে ১৬ ঘন্টা কিছু খাবারের সুযোগ নেই সেখানে ধুমপান ত্যাগ করার জন্য আপনার ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ট।

মানুষের জীবনের চেয়ে প্রিয় আর কিছু নেই এবং মানুষ নিজেকেও সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে। সুন্দর জীবনের জন্য প্রয়োজন সুস্বাস্বাস্থ্য এবং রুচিশীল মন মানষিকতা। এইসবগুলো প্রতিটি মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। প্রার্থক শুধু উপলব্দির এবং এর সময়উপযোগী ব্যবহার। ধুমপায়ীদের  নিকোটিন বিষমুক্ত জীবন প্রত্যাশা করছি। শুভ কামনা।

লন্ডন । ১৬.০৪.২০২১

ছরওয়ার আহমদ

সাবেক ভিপি ১৯৯৫-৯৬ সাল , বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ, সিলেট । হেড অব পাবলিক  অ্যাফেয়ার্স ;৫২বাংলা ,সংগঠক, স্যোসাল একটিভিস্ট।

আরও পড়ুন:

চামচামির  রাজনীতি  এবং  ফেইসবুকে ভাড়া খাটা কর্মীরা

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন