শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই‘র ইন্তেকাল  » «   ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিয়ানীবাজারে পথচারী ও রোগীদের মধ্যে ইফতার উপহার  » «   ইস্টহ্যান্ডসের রামাদান ফুড প্যাক ডেলিভারী সম্পন্ন  » «   বিসিএ রেস্টুরেন্ট কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এনএইচএস এর ‘টকিং থেরাপিস’ সার্ভিস ক্যাম্পেইন করবে  » «   গ্রেটার বড়লেখা এসোশিয়েশন ইউকে নতুন প্রজন্মদের নিয়ে কাজ করবে  » «   স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের দোয়া ও ইফতার মাহফিল  » «   কানাডা যাত্রায়  ইমিগ্রেশন বিড়ম্বনা এড়াতে সচেতন হোন  » «   ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটন ক্যানসারে আক্রান্ত  » «   যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজাবাসীদের সাহায্যার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অনুদান  » «   বড়লেখায় পাহাড়ি রাস্তা সম্প্রসারণে বেরিয়ে এলো শিলাখণ্ড  » «   মাইল এন্ড পার্কে ট্রিস ফর সিটিস এর কমিউনিটি বৃক্ষরোপণ  » «   রয়েল টাইগার্স স্পোর্টস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন  » «   গোলাপগঞ্জ স্যোশাল এন্ড কালচারাল ট্রাস্ট ইউকে’র সাধারণ সভা ও নির্বাচন সম্পন্ন  » «   যুক্তরাজ্যবাসি  সাংবা‌দিক সাইদুল ইসলামের পিতা আব্দুল ওয়াহিদের ইন্তেকাল  » «   ইউকে বাংলা রিপোটার্স ইউনিটি‘র নতুন কার্যকরী কমিটির অভিষেক  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় কবি দেলোয়ার হোসেন মন্জুকে স্মরণ



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

 

বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে প্রিয় বন্ধুদের আবেগঘন স্মৃতিচারণ , স্বজনের মায়াভরা চোখের জল আর শুভাকাঙ্খীদের হৃদয় উদ্বেলিত গভীর শ্রদ্ধা ও প্রগাঢ় ভালবাসায় গত ২২শে নভেম্বর লন্ডনে স্মরণ করা হয় ‘’লোহার ভিতরে তুলোর গর্ত” তৈরীর কারিগর অকাল প্রয়াত কবি দেলোয়ার হোসেন মন্জুকে।

পূর্ব লন্ডনের কবি নজরুল সেন্টারে সাহিত্য সংগঠন গ্রন্থী আয়োজিত কবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় বন্ধুদের আনন্দ-বেদনার স্মৃতিচারণ, কবির কবিতা পাঠ এবং জীবন-দর্শন ও সাহিত্য কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন কবি, লেখক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, রাজনীতিবিদ ও অভ্যাগত সুধীজন।

অনুষ্ঠানে জন্মভূমিতে কবির শৈশব-কৈশরের স্মৃতি নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন কবিবন্ধু চলচ্চিত্রকার মকবুল চৌধুরী।

কবি টিএম আহমেদ কায়সারের সঞ্চালনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে গ্রন্থী পরিচালক কবি শামীম শাহান কবি মন্জুর সাথে সোনালী দিনের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, আধুনিক বাংলা সাহিত্যে মন্জুর আবির্ভাব আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ।তার সৃষ্টকর্ম, কবিতা রচনার অভিনব কৌশল নতুন প্রজন্মের কবিদের জন্য প্রথা ভাঙ্গার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, এক সাহসী প্রেরণার নাম।

কবিবন্ধু কবি টিএম আহমেদ কায়সার বলেন, স্বমহিমায় উদ্ভাসিত এক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম মন্জু।মন্জু একটি স্পর্ধার নাম। প্রথাগতভাবে কিছুটা বুদ্ধি খাটিয়ে, শুধুমাত্র শব্দের পাশে শব্দ বসিয়ে, বৈকারণের নিয়ম মেনে তিনি কবিতা রচনা করেননি। কবিতায় তার পদার্পণ বীরদর্পে। তিনি সাহস করে নিয়ম ভেঙ্গেছেন। একদিকে যেমন ব্যবহার করেছেন অভূতপূর্ব সব চিত্রকল্প অন্যদিকে প্রেম, মানবিকতা, জাগতিক সম্পর্ককে জাদুবাস্তবতার নিরিখে তুলে ধরেছেন দারুণ পারদর্শীতায়।তিনি আরো বলেন, সমকালীন অন্য কোন কবির সাথে কবি মন্জুর কোনভাবেই তুলনা চলেনা; তিনি অনন্য এবং নিজস্ব সৃষ্টিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।একমাত্র তার পক্ষেই ইস্পাতের গোলাপ ফোটানো সম্ভব।

কবির সাহিত্য কর্ম নিয়ে আলোচনায় কবি ও সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ বলেন, মেধা ও মননে কবি মন্জু এতটাই সৃষ্টিশীল ছিলেন যে খুব অল্প সময়ে একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর কবিতা একদিকে যেমন আধুনিক অন্যদিকে মাতৃভূমির জল ও মৃত্তিকার গন্ধমাখা দারুণ সুধাময়; যার আকর্ষণ মুগ্ধ পাঠককে বার বার কবিতালগ্ন করে তোলে। তিনি আরো বলেন, কবি মন্জুর কাব্যধারাকে একমাত্র সমকালীন আরেকজন কবির সাথে তুলনা করা যায়, তিনি হলেন কবির ঘনিষ্ঠ বন্ধু কবি মুজিব ইরম।

কবি মন্জুর কাব্যধারাকে কবি খালেদা এদিব চৌধুরী, কবি সিকদার আমিনুল হকের সাথে তুলনা করে কবি মজিবুল হক মনি বলেন, বয়সে এক দশকের ছোট হলেও কবি মন্জু কাব্য ঐশ্বর্য নির্মাণ কৌশলে নিজেকে যে পরিমাণ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তাতে নিজেকে সবসময় কনিষ্ঠ মনে হয়। কয়েক দশকের সাহিত্য চর্চায়ও তাকে অতিক্রম করা সম্ভব নয়।

কবি গোলাম কবির কবি মন্জুকে নিয়ে একটি স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শোনান। ‘কবি চলে যায়’ শিরোনামের কবিতাটিতে তিনি লিখেন, ‘কবিকে পাবোই কবিতায় তার কাব্য বুননে/
দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু সুপ্ত ঘুমে তার শ্বাসত পদাবলীতে/নিবিড় বন্ধন তার কবিতার তাকেই ফোটায় আমাদের সকলের পুষ্প কাননে।’

কবি মন্জুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু কবি ও ছড়াকার দিলু নাসের শোক বিহ্বল কণ্ঠে কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি পরিবেশন করেন । তিনি বলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরও জীবনের অদম্য উচ্ছ্বাস প্রকাশে মন্জুকে কোনদিন এতটুকু বিষন্ন হতে দেখেনি। জাদুবাস্তবতার অনির্বচনীয় চিত্রকল্প নির্মাণের এ শিল্পি টেলিফোন করে তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর দেন হাসতে হাসতে-“ কবি, ওরা বলে আমার নাকি ক্যান্সার হয়েছে”। তার কন্ঠে সেদিন এতটুকু উদ্বেগের লেশমাত্র অনুভব করিনি। মৃত্যু ছিল তার কাছে জীবনের মতই উদযাপনের এক বনার্ঢ্য উপলক্ষ্য।

দিলু নাসের বলেন, সতেরই নভেম্বর দুপুর বারোটায় মন্জুর সাথে সর্বশেষ কথা হয়। তার ঠিক তিন ঘন্টা পর খবর পেলাম মন্জু আর নেই। স্বনির্মিত ‘এলাচির জাহাজে’ চড়ে আমার বন্ধু পাড়ি জমিয়েছেন মহাকালের মহাযাত্রায়। তার এ অকাল প্রয়াণে আধুনিক বাংলা সাহিত্যর যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।

সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ কবি মন্জুকে অতি উঁচু মাপের মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, সন্ত্রাসী কর্তৃক পত্রিকা কার্যালয় আক্রমণের খবর পেয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাতেই বার্মিংহাম থেকে ছুটে এসেছিলেন মন্জু। আজ নিজেকে প্রশ্ন করে বার বার জানতে চাই- এরকম পরিস্থিতিতে আমি কি আসলে ছুটে যেতাম কিংবা যেতে পারতাম এতো দীর্ঘ পথ? প্রশ্নের উত্তরে আমি একবারও মন্জুর উদারতার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারি না।

সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী কবি মন্জুকে দূর থেকে দেখা কাছের মানুষ অভিহিত করে বলেন, শুধুমাত্র কবি হিসেবে নয় মানবিকতার বিবেচনায়ও তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কবির সাহিত্যকর্ম নিয়ে সাপ্তাহিক পত্রিকা একটি বিশেষ ক্রেড়পত্র প্রকাশ করবে বলে তিনি জানান।

রাজনীতিবিদ সৈয়দ এনাম কবি মন্জুকে বাংলা সাহিত্যর একজন একনিষ্ঠ সেবক আখ্যায়িত করে বলেন, কার্ডিফে বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিয়মিত সাহিত্য চর্চার যে ধারা কবি মন্জু চালু করেছিলেন তাতে লন্ডন থেকে অনেক দূরের শহরেও আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি আলো পৌঁছে গিয়েছিল।

রাজনীতিবিদ ও সামাজিক সংগঠক সৈয়দা নাজনিন সুলতানা শিখা কবি মন্জুকে বাঙালী জাতীয়তাবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর অভিহিত করে বলেন, কাব্য চর্চার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে এ কবি সদা সচেষ্ট ছিলেন। একজন মন্জুই বার্মিংহামের মত একটি নগরীর জন্য যথেষ্ট ছিলেন।

কবিকে নিয়ে ‘পিতা ও পু্ত্র সমীপেষু’ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা চলচ্চিত্রকার মকবুল চৌধুরী বলেন, শুধুমাত্র মেটাফোর তৈরীতে নয়, জীবন দর্শনেও কবি মন্জু স্বমহিমায় উদ্ভাসিত এক মহান স্বত্ত্বার নাম। তার প্রতিটি শব্দই যেন একেকটি মহাপ্রাণের ইশারা, যেন স্বদেশ ও প্রবাসের মহা সেতুবন্ধন, কবিতায় বৈশ্বিক চেতনা ফুটিয়ে তোলার এক সুদক্ষ কারিগর তিনি। বন্ধু হিসেবে এতটা প্রাণখোলা মানুষ এক জীবনে আর পাবো কিনা জানি না।জীবনের বেশ কিছু সময় এ মেধাবী কবির সান্নিধ্যে কাটাতে পেরে নিজেকে খুবই ধন্য মনে করি।

কবি মন্জুর ঘনিষ্ঠ সহচর চলচ্চিত্র নির্মাতা আন্দ্রে জুনায়েদ আবেগতাড়িত কন্ঠে কবির সাথে অতিবাহিত দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে বলেন, মানুষকে আপন করে নেয়ার এক অসাধারণ শক্তি ছিল কবি মন্জুর।তার কাছের মানুষগুলো জানেন কতটা নিরহংকার আর বন্ধুবৎসল ছিলেন এ শক্তিমান কবি।

কবি মন্জুর কবিতা নিয়ে রচিত ‘ আগ্নপাড়ার অগ্নিফুল: কবি দেলোয়ার হোসেন মন্জু’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন কবি ও সাংবাদিক সারওয়ার-ই আলম। তিনি বলেন, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের বেনারসীতে কবি মন্জু যে নৈপুন্যের সংযোগ ঘটিয়েছেন তার সে প্রকীর্তি নি:সন্দেহে দীপ্তি ছড়াবে যুগ যুগান্তর । তিনি বলেন, কবির মন্জুর কবিতা একেবারে ভিন্ন মেজাজের, ভিন্ন আঙ্গিকের। কবির চিত্রকল্পগুলো ঘাতে সহনীয় কিন্তু প্রত্যাঘাতে অপ্রতিরোধ্য, আলাপে মিশুক কিন্তু অবয়ব কাঠামোয় দুর্ভেধ্য। কবি প্রকৃতঅর্থেই স্বকৃত স্বত:ন্তর।

কবি ডেভিড লি মর্গান কবিকে নিবেদন করে স্বরচিত কবিতা, আবৃত্তিকার ইয়াসমীন পলিন কবি মন্জুকে নিবেদন করে সৈয়দ শামসুল হকের একটি কবিতা এবং কবি শাহীন মিতুলি কবি মন্জুর কবিতা থেকে আবৃত্তি করে শোনান।

কবির চাচাতো বোন রীনা চৌধুরী কান্না জড়িত কন্ঠে পারিবারিক পরিসরে কবির জনপ্রিয়তা কথা, প্রিয়জনের জন্য বুক ভরা ভালবাসার কথা তুলে ধরে বলেন, ভাইয়াকে হারানোর এ শোক আমার মনে হয় আমরা কোনদিন কাটিয়ে উঠতে পারবো না। তিনি মোবাইল ফোনে ধারণকৃত কবি মন্জুর বোনের কণ্ঠে কবির একটি কবিতা আবৃত্তি বাজিয়ে শোনান।

শোকসভায় অন্যানের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক শামসুল আলম লিটন, কবি ময়নুর রহমান বাবুল, কবি ও সাংবাদিক আনোয়ারুল ইসলাম অভি, সাংবাদিক কাদির মুরাদ প্রমুখ।

উল্লেখ্য বিলেত প্রবাসী কবি দেলোয়ার হোসেন মন্জু ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আটচল্লিশ বছর বয়সে গত বছর ১৭ নভেম্বর বার্মিংহামের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।

 


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন