­
­
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
রাখাইনের জন্য করিডর বাংলাদেশের জন্য কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?  » «   ইউরোপ ৪ দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন!  » «   ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি  » «   বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার  » «   নতুন এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ  » «   ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে উড়ল প্রথম কার্গো ফ্লাইট  » «   রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার  » «   শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানান মোদি  » «   ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ কবিতার কবি দাউদ হায়দার আর নেই  » «   গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি আটক  » «   ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কোন দিকে মোড় নিতে পারে?  » «   পাকিস্তানের আছে ১৫০টি পরমাণু বোমা, ভারতের কত?  » «   কাশ্মীর নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের লড়াইয়ের কারণ কী?  » «   আট মাসে দেশে ২৬টি রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্ম, উদ্দেশ্য কী?  » «   ঢাকায় হামজার অভিষেকে ছাড়া হবে ১৮ হাজার টিকিট  » «  

আমার নজরুল



কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণদিবসে তাঁকে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় অর্থহীন বিলাপ আর তাঁর প্রতি কপট শ্রদ্ধানিবেদনের মাতলামি শেষ হওয়ার পর আমি নজরুল নিয়ে ভাবতে বসেছি। কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে আমার কিছু ভাবনা আর অনুভূতি অতি সংক্ষিপ্ত আকারে পেশ করছি।

কাজী নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে সর্বগ্রাসী রবীন্দ্রবলয়ের ভেতরে বাস করেও তা ছিন্ন করে বেরিয়ে এসে নতুন সূর্যের উদয় ঘটানো। তাঁর জীবন দুঃখকষ্টের অনলপ্রবাহের ভেতর দিয়ে কেটেছে। তবু, তাঁকে কখনো দুঃখকষ্ট বা অভাবের কাছে নতজানু হয়ে উল্লসিত জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে দেখা যায় নি। ঠিক সংসারী ছিলেন না, কিন্তু প্রেমিক ছিলেন।— এই প্রেম এবং অভাব সর্বগ্রাসী, সর্বনাশী। কিন্তু কোনোকিছুই তাঁর প্রতিভা গ্রাস কিংবা নাশ করতে পারে নি। ধুমকেতু হয়েই তিনি এসেছিলেন, ধুমকেতুর মতোই আলোর ঝলকানির স্থায়ী স্মৃতি রেখে জীবনের অন্তরালে চলে গেছেন।

তিনি বাঙলাদেশের জাতীয় কবি।

যদি প্রশ্ন করি— জাতীয় কবি কী? জবাব মিলবে না জানি, মিলবে শুধু গালিগালাজ তাও জানি!

তাঁকে ‘মুসলমানের কবি’ বলে বলে একদল পশু রবীন্দ্রনাথের প্রতিপক্ষ হিশেবে দাঁড় করিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটেছে। এই সুযোগে রবীন্দ্র-মোল্লারাও রবীন্দ্রনাথকে ‘হিন্দুদের কবি’ হিশেবে দাঁড় করিয়ে নজরুলের প্রতিপক্ষ বানিয়েছে (তাদের অধিকাংশই জানে না যে, রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন না!)। অথবা, হিশেবটা ঠিক উল্টোভাবেও করে দেখা যেতে পারে। অথচ, নজরুল ছিলেন, সব দিক থেকেই, রবীন্দ্রনাথের সন্তানসম।

মূল প্রসঙ্গে আসি।— বাঙালির ঘরে ঘরে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, রবীন্দ্রনাথ যেভাবে বসবাস করেন প্রতিদিনের স্মরণে-উচ্চারণে; নজরুল ঠিক সেভাবে ঠাঁই পান নি— একথা তো মিথ্যে নয়।
কারণটি কী? এর জবাব বহু মাত্রায় খুঁজতে হবে, নিরপেক্ষভাবে বুঝতে হবে। একটা বড় কারণ অবশ্যই ‘মার্কেটিং ম্যানেজারের অভাব’। মানবসমাজে সবকিছুই বাজারজাত করতে হয়, তা করতে গেলে বহু কসরতের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। রবীন্দ্রনাথ যেভাবে মার্কেটিংয়ের আনুকূল্য পেয়েছেন, বহু আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক কারণে নজরুল তা পান নি। নজরুলের সৃষ্টি মার্কেটে মার খাওয়ার—প্রধান কারণ না হলেও— এটি একটি বড় কারণ।

সে যাই হোক, নজরুলকে আমি ভালোবাসি। তাঁকে মনে পড়লেই অনেক বাঙালির মতো আবেগপ্রবণ হয়ে আমিও কয়েক ফোঁটা অশ্রু তাঁর স্মৃতির দিকে নিবেদন করি। একজন অধম বাঙালির এ ছাড়া দেবার কিছুই নেই।

কয়েক ফোঁটা অশ্রু নিন কাজী নজরুল ইসলাম।

দুই.
‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?’

সুদূর শৈশবে পড়া। তখন ছন্দের দোলা ছাড়া অন্যকিছু বুঝি নি। এখন যতবার পড়ি বা শুনি— বুকের ভেতর ছলাৎ করে ওঠে এক অন্য বোধ আর আবেগের ঢেউ।

তাই তো! আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
মূর্খ হলেও কিছু কিছু তো পড়েছি, পড়া হয়, পড়তে হয়। জীবন সম্পর্কে—বিশেষত বাঙালিজীবন সম্পর্কে—এতো বড় সারকথা কে আর লিখেছে?—যেখানে প্রতিটি ভোরের জন্য যুদ্ধ করতে হয়। শুধু সারকথাই নয়, মনে হয় ‘চূড়ান্ত সারকথা’ লিখেছেন নজরুল।
যে-সমাজের মানুষ দিনরাত ঘুমিয়ে থাকে, সে-সমাজের কবিকেই লিখতে হয় ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?’ এবং তা লিখে গেছেন একজন কাজী নজরুল ইসলাম।
জীবন সম্পর্কে চূড়ান্ত সারকথা—আমার মনে হয়—বলে গেছেন আরেকজন বাঙালি মহারথী, তিনি লালন সাঁই, বলেছেন— ‘সময় গেলে সাধন হবে না’!

লালন এবং নজরুলের এই দুটি বাক্য, আমার কাছে অমূল্য জীবনপ্রদীপ। কিন্তু নজরুলের বাক্যের মতো লালনে আবেগের স্পন্দনটা এতো জোরালো নয়!

জয়তু নজরুল। তুমি চিরঞ্জীব।

খালেদ রাজ্জাক : কবি, শিক্ষক। 
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন