­
­
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
রাখাইনের জন্য করিডর বাংলাদেশের জন্য কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?  » «   ইউরোপ ৪ দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন!  » «   ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি  » «   বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার  » «   নতুন এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ  » «   ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে উড়ল প্রথম কার্গো ফ্লাইট  » «   রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার  » «   শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানান মোদি  » «   ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ কবিতার কবি দাউদ হায়দার আর নেই  » «   গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি আটক  » «   ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কোন দিকে মোড় নিতে পারে?  » «   পাকিস্তানের আছে ১৫০টি পরমাণু বোমা, ভারতের কত?  » «   কাশ্মীর নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের লড়াইয়ের কারণ কী?  » «   আট মাসে দেশে ২৬টি রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্ম, উদ্দেশ্য কী?  » «   ঢাকায় হামজার অভিষেকে ছাড়া হবে ১৮ হাজার টিকিট  » «  

বিতর্ক আছে তবুও নির্দেশনার বাইরে যাবার পথ নেই



এশিয়ান কমিউনিটির বিরুদ্ধে আঙ্গুল তোলা হচ্ছে যদিও, কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের একটা বিরাট অংশ আছে, যারা মনে করে এ ভাইরাস নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে। অর্থাৎ ধর্মীয় ধোয়া তোলা কিংবা গোয়ার মানসিকতা শুধু অভিবাসীদের একটা ক্ষুদ্র অংশ পোষণ করে না, এটা একটা ভিন্ন বর্ণ-শ্রেণির মানুষের মাঝেও বদ্ধমূল।

২২ আগস্ট ব্রিটেনের হেলথ সেক্রেটারি ঘোষণা করলেন, গ্রেটার ম্যানচাস্টের ওল্ডহ্যাম শহর যে কোন সময় লকডাউনের মধ্যে চলে আসতে পারে। এবং তিনি সময়ও বেঁধে দেন। সহসাই হয়ত লকডাউন শুরু হবে। কিন্তু কেন ? ব্রিটেনে লকডাউন উঠে গেছে গত মাসেই। মৃত্যুও কমেছে । ২১ আগস্ট ব্রিটেনে করোনায় সর্ব নিম্ন মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে তা ছিল মাত্র ২ জন। ব্রিটেনের জন্য ভালো সংবাদ যে, মৃত্যুর হার প্রতিদিনই গড়ে বিশ জনের নিচে থাকছে। এবং সংক্রমণও প্রায়ই হাজার ছুঁইছে না। যেখানে লক্ষাধিক টেস্ট করা যাচ্ছে প্রতিদিন।

তারপরও বিশেষ সতর্কতা আছে দেশটাতে। আর সেজন্যই যেখানে ইনফেকশন বেড়েছে, সেখানেই লকডাউন দেয়া হয়েছে। কদিন আগে দেশটার লেস্টার, রছেনডেল, উইগান, ডারেনে সাময়িক লকডাউন ছিল, এখন তোলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু ওল্ডহ্যামে লকডাউনের ঘোষণা আসলো কেন, এ নিয়ে বিভিন্নভাবে কথাবার্তা উঠেছে। স্থানীয় মানুষ এ লকডাউনের ঘোষণা শোনে খুশি হতে পারে নি। এমনকি লোকাল প্রশাসন এরকম কতাবার্তার পক্ষে নয়। কাউন্সিল লিডার এর বিপক্ষে অবস্থান নেন।

যেদিন ওল্ডহ্যাম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিলো, সেদিন থেকে এখন করোনা আক্রান্তের হার নিম্নমুখী, তবুও কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউনের পক্ষে কথাবার্তা বলেছে। আগস্টের মধ্য সপ্তাহে ওল্ডহ্যামে সংক্রমণ হার ছিল প্রতি লাখে ৮৩.১, এর পূর্ববর্তী সপ্তাহে এই হার ছিলো ১০৭.৫। এ পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায় সংক্রমণের মাত্রা কমেছে।

স্থানীয়ভাবে নেয়া পদক্ষেপগুলোর কারণে ইতিমধ্যে সংক্রমণ কমতেও শুরু করছে । ১৫ আগস্টে যেখানে নতুন সংক্রমিতের মোট সংখ্যা ১৯৭, সেখানে আগের সপ্তাহে ছিলো ২৫৫। অর্থাৎ এখন ক্রমশ নিম্নমূখী । কিন্তু তবুও সরকার এরকম কথাবার্তা বলে জনসাধারণকে কিছুটা ভীতির মাঝেই ফেলে দিচ্ছে।

নর্থওয়েস্ট ইংল্যান্ডের এই শহরটাতে এশিয়ান একটা বিশাল জনগোষ্ঠির আবাস। এর মাঝে বাংলাদেশি কমিউনিটির লোক বিশ সহস্রাধিক। এই বারাটাকে ব্রিটেনের অন্যতম প্রধান সুবিধাবঞ্চিত কাউন্সিল হিসেবেও ধরা হয়। আর সে হিসেবে এ শহরে লকডাউনের ফলে সীমিত আকারে চলমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাক, এটা স্থানীয় প্রশাসন চায় না। যদিও শেষপর্যন্ত লকডাউন দেয়া হয় নি।

এশিয়ান কমিউনিটির একটা বদ্ধমূল ধারণা আছে, কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছে করেই এসব করছে। বার্মিংহাম, লেস্টার,, বার্নলি প্রভৃতি শহরগুলোতে এশিয়ান কমিউনিটির একটা বড় অংশ বাস করে । এর পক্ষে কিছুটা হলেও যুক্তি থেকে যায়। কারন গত ঈদুল আযহার ভোর শুরু হবার মাত্র দুঘন্টা আগে বিশেষ রেস্টিকশন দেয়া হয় নর্থ ওয়েস্ট ইংল্যান্ডের এশিয়ান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। এবং কোন বড় জমায়েত থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। যদিও ঈদের দিনের নামাজের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো, তা-ও সরকারি নির্দেশনা মেনেই। এমনকি বাংলাদেশী ব্যস্থাপনায় চলা মসজিদগুলোতে যে শৃংখলা রাখা হয়েছিলো, তা আমাকে রীতিমত বিস্মিত করেছে। সপ্তাহ দিন আগে থেকে ঐদের জামাতে অংশ নেয়ার জন্য অনলাইনে নিজস্ব জায়গা বুক করতে হয়েছে। নিজস্ব জায়নামাজ, এমনকি জুতা নিজের আয়ত্তে রাখার জন্য নিজস্ব ক্যারিয়ার ব্যাগ নিয়ে যাবার জন্য বলা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের সেনিটাইজার নিয়ে নির্ধারিত দূরত্বে দাঁড়িয়ে থেকে মানুষের সেবা করা সবকিছুই করা হয়েছে সরকারের নির্দেশনা মেনেই।

অথচ সারা ব্রিটেনে লকডাউন তোলে নেবার পর সপ্তাহান্তের রৌদ্রোজ্জ্বল দিনগুলোতে মানুষের যে কোলাহল সমুদ্র সৈকতগুলোতে ছিল, তা রীতিমত ছিল ভয়ংকর। হাজারো-লাখো মানুষ জমেছে, সরকার খুব একটা কিছু করতেই পারে নি। যদিও বড় ধরনের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞাতো আছেই। কিন্তু তারপরও ঘরোয়া পার্টিতে মিলিত হচ্ছে মানুষ। বাসার পেছনে গার্ডেন পার্টির উপরও নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তারপরও প্রতি সপ্তাহেই শত শত পার্টি হচ্ছে, কেউ রিপোর্ট করলে পুলিশ পার্টি ভেঙ্গে দিচ্ছে। এখন জরিমানা করা হচ্ছে।

এশিয়ান কমিউনিটির বিরুদ্ধে আঙ্গুল তোলা হচ্ছে যদিও, কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের একটা বিরাট অংশ আছে, যারা মনে করে এ ভাইরাস নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে। অর্থাৎ ধর্মীয় ধোয়া তোলা কিংবা গোয়ার মানসিকতা শুধু অভিবাসীদের একটা ক্ষুদ্র অংশ পোষণ করে না, এটা একটা ভিন্ন বর্ণ-শ্রেণির মানুষের মাঝেও বদ্ধমূল।

সুতরাং এশিয়ানদের উপর দোষ চাপানোর কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া মাঝে মাঝে মনে হয়, সরকারও হিমশিম খাচ্ছে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে। কারণ একদিকে পাব-রেস্টুরেন্ট খোলা, এবং খাবারপ্রিয় মানুষদের রেস্টুরেন্টমুখী করতে গিয়ে সরকারই অনুপ্রাণিত করছে। কারণ প্রায় সব ভালো রেস্টুরেন্টগুলোতে চলছে এখন ৫০ শতাংশ মূল্যছাড়। অর্থাৎ মূল দামের ৫০ শতাংশ সরকার ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি দিচ্ছে এ মাস পর্যন্ত। আর সেজন্য রেস্টুরেন্টগুলোর বাইরের লম্বা লাইনে সাদা-কালো-ব্রাউন মানুষের ভীড় উপচিয়ে পড়ছে। এ মাস পর্যন্ত যা চলবে।

আলোচনা-সমালোচনা থাকতেই পারে। তবুও বলতে হবে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে লকডাউন কিংবা প্রতিবন্ধকতার যে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার, তা ব্রিটেনের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপই। এমনকি ইউরোপের কোন কোন দেশে ভ্রমণ করা লোকজনদের উপর কোয়ারেন্টাইনের নতুন খড়গ আরোপ করায় স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের সমালোচনায় পড়েছে ব্রিটিশ সরকার।

করোনার টিকা আসেনি এখনও। অর্থাৎ ঝুঁকির মুখেই আছে সারা পৃথিবী। ব্রিটেনে এ বছর আড়াই মিলিয়ন চাকুরিহীন মানুষের ধকল সামলাতে হবে। অর্থনৈতিক মন্দার দিকে এগুচ্ছে দেশটি। আর সেজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা তাদের কাছেও নেই। অক্সফোর্ডের ভ্যকসিন আসবে হয়ত এ বছরেই। আর এ সময়কালে বরিস জনসনের সরকার শত সমালোচনা সহ্য করেও বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতি সামনে রেখেও জনগণকে আশা দিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি পারিবারিক প্রণোদনার মধ্য দিয়ে মানুষ বাঁচাতে নিচ্ছে সময়ে সময়ে ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ। এ উদ্যোগ কখনো হচ্ছে হঠকারিতা, কখনো কালিমালিপ্ত হচ্ছে- বর্ণ কিংবা সম্প্রদায় থেকে কোন কোন সময় আঙ্গুলও উঠেছে।

কিন্তু শেষ কথাটি হলো জনগণ বাঁচাতে, অর্থনৈতিক প্রবাহ চালু রাখতে এ ছাড়াও সরকারের এই মুহূর্তে কোন বিকল্প নেই। এশিয়ান বলি, অভিবাসী বলি বিতর্কিত হলেও প্রত্যেকটা নির্দেশনাই জাতির টিকে থাকার জন্য। সুতরাং মেনে নিতেই হবে। আবারও ঘুরে দাঁড়াতে হবে ব্রিটেনকে, আর সেজন্য নির্দেশনা এড়িয়ে চলার কোন পথ নেই।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন