মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই‘র ইন্তেকাল  » «   ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিয়ানীবাজারে পথচারী ও রোগীদের মধ্যে ইফতার উপহার  » «   ইস্টহ্যান্ডসের রামাদান ফুড প্যাক ডেলিভারী সম্পন্ন  » «   বিসিএ রেস্টুরেন্ট কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এনএইচএস এর ‘টকিং থেরাপিস’ সার্ভিস ক্যাম্পেইন করবে  » «   গ্রেটার বড়লেখা এসোশিয়েশন ইউকে নতুন প্রজন্মদের নিয়ে কাজ করবে  » «   স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের দোয়া ও ইফতার মাহফিল  » «   কানাডা যাত্রায়  ইমিগ্রেশন বিড়ম্বনা এড়াতে সচেতন হোন  » «   ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটন ক্যানসারে আক্রান্ত  » «   যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজাবাসীদের সাহায্যার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অনুদান  » «   বড়লেখায় পাহাড়ি রাস্তা সম্প্রসারণে বেরিয়ে এলো শিলাখণ্ড  » «   মাইল এন্ড পার্কে ট্রিস ফর সিটিস এর কমিউনিটি বৃক্ষরোপণ  » «   রয়েল টাইগার্স স্পোর্টস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন  » «   গোলাপগঞ্জ স্যোশাল এন্ড কালচারাল ট্রাস্ট ইউকে’র সাধারণ সভা ও নির্বাচন সম্পন্ন  » «   যুক্তরাজ্যবাসি  সাংবা‌দিক সাইদুল ইসলামের পিতা আব্দুল ওয়াহিদের ইন্তেকাল  » «   ইউকে বাংলা রিপোটার্স ইউনিটি‘র নতুন কার্যকরী কমিটির অভিষেক  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

বদলে যাচ্ছে গ্রামীন সংস্কৃতি



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বাবার বয়স ৮৬ বৎসর। অসুস্থ থাকেন বিধায় ইদানিং প্রায়ই বাবাকে দেখাশুনার জন্য গ্রামের বাড়ীতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। গ্রামে যাওয়া এবং থাকার সুবাদে গ্রামীন জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতির পরিবর্তনটি চোখে পড়ার মত। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বা পরবর্তী সমাজের যে সংস্কৃতি ছিল আজ তা পরিবর্তিত হচ্ছে, অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছেও। সমাজে সংস্কৃতির শত শত অনুষঙ্গ আছে। পাঠক একটু খেয়াল করলেই এগুলোর পরিবর্তন দেখতে পাবেন। সবকিছুরই পরিবর্তনে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই থাকে। তবে পরিবর্তনের সাথে সাথে যাতে আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকার জন্যই উপলদ্ধি থেকে আজকের এই লেখা।
সংস্কৃতি শব্দটির আভিধানিক অর্থ সংস্কার,উন্নয়ন,অনুশীলন ইত্যাদি। আবার সংস্কৃতির সুন্দর সমার্থক শব্দ হচ্ছে কৃষ্টি। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, মানুষের জীবনচর্চা ও চর্চার বৈচিত্র্যময় সমন্বিত রূপই হচ্ছে সংস্কৃতি। মোট কথা সংস্কৃতিকে এভাবে বলা যায়- যাপিত জীবনের প্রাকৃতিক বা সামাজিক পরিবেশ যা আমাদের চেতনাকে নাড়াদেয় বা এদুয়ের মধ্যে বাস করে আমরা যা করছি সেটাই আমাদের সংস্কৃতি। মানুষের জীবন যাপনের ধরণ, ঐতিহ্য, আচার-আচরণ, খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, নীতি-নৈতিকতা ভাষা এগুলো সংস্কৃতির প্রধান উপকরণ। মোট কথা একটি জাতির জাতিগত বেশিষ্ট্য হচ্ছে সংস্কৃতি।

একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। বাঙালি ভাত -মাছ খায়,লুঙ্গি -পাঞ্জাবি পরে,জারি- সারি ভাটিয়ালি গান শোনে এগুলো বাঙালি সংস্কৃতির উপাদান। এমন হাজারো হাজার উপাদান আছে, যেগুলো বাঙালিত্বের পরিচয় বহন করে। পৃথিবীর বুকে এমন জাতির সংখ্যা খুবই কম যারা সংস্কৃতির জন্য জীবন উৎসর্গ করছে। বাঙালি করেছে । ভাষা আমাদের সংস্কৃতির প্রধান অনুষঙ্গ। আধিবাত্যবাদীরা আমাদের এই সাংস্কৃতিক অধিকার হরণ করতে চেয়েছিল, বাঙালি তা মানেনি। মানেনি বলেই সালাম,বরকত,রফিক জব্বার ও সফিউর তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেপথ্যে সংস্কৃতির ভূমিকাও কম নয় ।

আমরা যে পরিবারে বাস করছি, সে পরিবারে সাধারণ কিছু কৃষ্টি কালচার থাকে যা ঐ পরিবারের সংস্কৃতি । এভাবে সমাজ অঞ্চল,রাষ্ট্রে,ধর্মে, কর্মে এবং জাতিভেদে সংস্কৃতির ভিন্নতা দেখা যায়। সংস্কৃতির বিবর্তন হচ্ছে বিশেষ করে গ্রামীন সংস্কৃতির । সংস্কৃতি হচ্ছে বহতা নদীর মতো । নদী যেমন গতিপথ বদলায়, সংস্কৃতিও তার গতিপথ বদলায়। আদি ও অকৃত্রিম সংস্কৃতি বলতে কিছু নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতির ও পরিবর্তন সাধিত হয়। পৃথিবীর সব জাতিগোষ্টীর সংস্কৃতিই সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। বাঙালির গ্রামীন সংস্কৃতিও সেই পরিবর্তনের বাইরে নয়। শত বছর আগের বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে আজকের বাঙালি সংস্কৃতির বহু অমিল খুঁজে পাওয়া যাবে। গ্রামীণ সংস্কৃতি গ্রামীণ মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস এবং আচার- আচরণ, জীবনযাপন প্রণালী, চিত্ত বিনোদনের উপায় প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে । আর এক দিনে গড়ে উঠেনি এই সংস্কৃতি । দীর্ঘ সময় ধরে একটু একটু করে এই সংস্কৃতির ধারণা গড়ে উঠেছে । তবে সেই সংস্কৃতি এখন নগর সংস্কৃতি দ্বারা বিপর্যস্ত। নগর সংস্কৃতির চাকচিক্যের কাছে ধীরে ধীরে পরাজয় ঘটেছে গ্রামীন সংস্কৃতির । এই সংস্কৃতির ধারক যেই মানুষগুলো, অর্থাৎ গ্রামীন জনগোষ্ঠীর কাছে নগর সংস্কৃতি গিয়ে হাজির হচ্ছে । ফলে তারা সহজেই ধারণ করতে পারছেন নগর সংস্কৃতি। এর পেছনে প্রযুক্তির একটা বড় অবদান আছে। কীভাবে গ্রামীন সংস্কৃতি পরিবর্তনের দিকে হাঁটছে, তার একটা তুলনামূলক আলোচনা করার চেষ্টা করব ।

প্রথমত, খাদ্য সংস্কৃতি দিয়ে শুরু করা যাক। যে কৃষক সকালের নাশতায় পান্তাভাত আর কাঁচামরিচ জঠরে ঢুকিয়ে ছুটে যেত তার প্রিয় কর্মস্থল আবাদ ভূমিতে । এখন কৃষক সমাজে তেমনটি আর দেখা যায় না । গ্রামীন তথা কৃষক সমাজে শীতকালের পিঠে- পায়েস থেকে আরম্ভ করে সব রকমের মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গঁ তালের রস বা খেজুরের পাটালি গুড় । আজকাল এ অকৃত্রিম খাদ্য সংস্কৃতির ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া নগর সংস্কৃতির ঢেউ গ্রামীন জীবনেও লাগতে শুরু করেছে । ফলে অতিথি আপ্যায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে বিস্কুট,কৃত্রিম দোকানের মিষ্টি, চানাচুর,নুডুলস,চা,হালিম,কাবাব ইত্যাদি। অথচ কী স্বকীয়তাই না ছিল আমাদের গ্রামীন সমাজের খাদ্য সংস্কৃতিতে।
ধান চাষ ও চাল উৎপাদন বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গঁ। বাঙালি ধনী-গরীব সবার প্রধান খাবার ছিল ভাত মাছ। ঘি মেশানো গরম ভাত খাওয়ার কদর ছিল প্রাচীন কালে। দুধে রান্না করা চালের কথাও জানা যায়। অতীতে শাক ও অন্যান্য ব্যঞ্চনসহ ভাত খাওয়ার নিয়ম প্রচলিত ছিল। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের মধ্যে শাক- সবজি তরকারিসহ ভাত খাওয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল। তরকারির মধ্যে ঝিঙা, করল্লা, কচু, কুমড়া, বেগুন, চিচিঙা ইত্যাদি খেত গ্রামীন মানুষেরা । বিয়েশাদি এবং অতিথি আপ্যায়নের সময় খাদ্যের তালিকা প্রসারিত হতো। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ছিল ভাত, গাওয়া ঘি,মাছের ঝোল, নালিয়া শাক, কচু শাক, কচুর লতি, ইত্যাদি। অতিথি আপ্যায়নে ভাতের সঙ্গে পরিবেশিত হতো দই, পায়েস, ক্ষীর এবং ছানার তৈরী মিষ্টান্ন। আহারের শেষে পরিবেশন করা হতো সুপারি ও মসলাযুক্ত পান।

শুটকি বাঙালির জনপ্রিয় খাবার । বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে টকদই ব্যবহারের প্রচলন তখন থেকেই ছিল। ফলের মধ্যে কলা, তাল , আম,লিচু কাঠাল, বেল, ভূবি (লটকন), নারিকেল ইত্যাদি বাঙালির প্রাচীন খাদ্য তালিকার অন্তর্ভূক্ত । আপেল , আঙুর, নাসপাতি, বেদানা ইত্যাদি আসতো বাহিরে থেকে তবে খুবই কম। গ্রামীন জনগোষ্ঠি এগুলো তেমন পাওয়ার সুযোগ ছিল না । চাল দিয়ে তৈরী হতো মুড়ি, চিড়া, খই নাডু এবং তৈলমুক্ত নানা প্রকারের পিঠা।
সময়ের ব্যবধানে বাঙালির খাদ্য তালিকায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। ভাত মাছ এখনো বাঙালির প্রধান খাবার বটে কিন্তু ধান উৎপাদনে এসেছে পরিবর্তন । এসেছে উফসী জাতের ধান। ঘি মেশানো ভাতের কথা এখন কেউ চিন্তাও করে না । ডাল ও মুরগির মাংস নিত্যকার খাবার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত । মুরগির মাংস ছাড়া এখন অতিথি আপ্যায়নের কথা চিন্তাই করা যায়না । কাঁকড়া খাওয়া, চিংড়ি খাওয়া, বকের মাংস খাওয়া বর্তমানে এক ধরনের বিলাসিতা । পাখি শিকার আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এখন বিয়ে-শাদিতে বিভিন্ন ধরণের পাখি, কবুতর, কোয়েল পাখি দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়।

অতিথি আপ্যায়নেও এসেছে পরিবর্তন। আগে বড় বড় অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত অতিথিদেরও আপ্যায়ন করা হতো মাটিতে চাটাই পেতে কলাপাতায় । এরপর এলো মাটির সানকি বা বাসন । এরপর এলো চিনামাটি, কাঁচ, ষ্টিলের থালা বাসন। অতিথিদের এখন চেয়ার- টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবারের পর আগের মতো মিষ্টান্ন চোখে পড়ে না। বহুজাতিক কোম্পানির বিভিন্ন পানীয় যেমন কোকাকোলা, ফান্টা, সেভেনআপ, পেপসি,ফ্রুটিকা ইত্যাদি খাবারের পর পরিবেশন করা হয়।

এবার শুরু করা যাক পোশাক পরিচ্ছদের সংস্কৃতি নিয়ে। যে কোনো সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে পোশাক। সেই পোশাকে মোটা দাগে চোখে পড়ে বাঙালি নারীর শাড়ী। পুরুষেরা ধুতি পরত। আর্থিক সচ্ছল হলে গায়ের উপর একখণ্ড কাপড়ের ব্যবহার ছিল।এটা পুরুষের ক্ষেত্রে ছিল উওরীয় এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ছিল ওড়না । ঐ ওড়না প্রয়োজনে ঘোমটার কাজ করত। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত এক কাপড়েই যথেষ্ঠ ছিল এবং এরা প্রয়োজনে এর আচঁল দিয়েই ঘোমটার কাজ চালাত। মেয়েদেরও ছিল লম্বা চুল । ঘাড়ের উপর খোপা করে বাঁধা কেউ কেউ পিছনে এলিয়ে দিত । সাধারণ লোকেরা জুতা ব্যবহার করত না । ধনীরা কাঠের পাদুকা ব্যবহার করত । বিবাহিত নারীরা কপালে কাজলের টিপ, সিঁথিতে ও কপালে সিঁদুর, দেহ ও মুখে চন্দনের গুড়া, চন্দন বাটা ও জাফরান ব্যবহার করত। এছাড়া হাতে দিত শঙ্খের সাদা বালা, কানে পড়তো কচি রীঠাফুলের দুল, চুলে দিত তেল । পুরুষেরা মাঠে আর মেয়েরা সংসারের কাজ সামলাত ।

এক সময় কৃষাণ বধূ/মেয়েদের পায়ে থাকত রূপার নুপুর বা খারু, কোমরে রুপার বিছা, হাতে রেশমি চুড়ি, হাতের একদম উপরে রুপার বাগ, গলায় পুতির মালা বা হাসুলি নাকে নথ ইত্যাদি। সঙ্গে ছোট করে পুরুষদের পোশাকের অন্যতম সঙ্গী হয়ে উঠা গামছার কথা না বললেই নয় । গা মোছা শব্দ কালক্রমে গামছা শব্দে পরিণত হয়েছে। মাঠে কাজ করার সময় ঘাম মোছা থেকে গোসলের পর গা মোছার একমাত্র অনুসঙ্গ ছিল এই গামছা। কর্মজীবী বিশেষ করে চাষীদের কাছে এর জনপ্রিয়তা ছিল অনস্বীকার্য । পরে গরমে ঘাম মোছার জন্য রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ঠেলাচালকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এই গামছা।

সময়ের ব্যবধানে বাঙালির পোশাক পরিচ্ছদও সাজসজ্জার সংস্কৃতির ও বহু পরিবর্তন ঘটেছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে লুঙ্গির পাশাপাশি প্যান্ট পরতে শুরু করল বাঙালি। অভিজাতরা পরতে শুরু করল প্যান্ট, স্যুট- টাই কর্মজীবী নারীদের অফিসে থেকে আসা যাওয়া দৌড় ঝাপ করে বাসে উঠা, শাড়িতে অনভ্যস্ততা, পোশাকের বৈচিত্র্যতা আসা, শাড়ির বাইরে অন্যান্য পোশাককে বাঙালি নারীকে মেনে নেয়া -এমন কিছু মিলিয়ে বলা চলে শাড়ি এখন অনেক উৎসবের পোশাক হয়ে যাচ্ছে।
আজকাল অনেক টিনেজ মেয়ে যারা শাড়িকে নিজেদের স্বাচ্ছন্দের পোশাক মনে করে না। নারীদের শাড়ির পরিবর্তে এল সেলোয়ার কামিজ , কাঠের খড়মের বদলে চামড়া ও প্লাস্টিকের জুতা । এখন গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত নারী/মেয়েরা শাড়ীর পরিবর্তে সেলোয়ার-কামিজ পরিধান করে। শতশত বছর ধরে বাঙালি মাথায় কোনো আবরণ দিত না । মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাবে এল টুপি, পাগড়ি । নারীরা পরতে শুরু করল বোরকা। ঠোঁটে দিল লিপস্টিক, নখে নেইল পলিশ । কচি তালপাতা ও রীঠাফুলের দুলের বদলে এলো সোনারূপাসহ এ্যামিটিশনের নানা গহনা । এখন মেহেদি গাছ থেকে মেহেদি পাতা সংগ্রহ করে কষ্ট করে বেঁটে হাতে লাগাতে হয় না । বিভিন্ন কোম্পানি সাজ , শাহাজাদী, স্মার্ট, লিজান, রাঙাবউ ইত্যাদি নাম দিয়ে বাজারে এসেছে নানা প্যাকেটজাত মেহেদি। এ কৃত্রিম সাজ দিয়েই মেয়েরা তাদের সাজসজ্জার কাজ করে।

সংস্কৃতির আরেক উপদান অলংকার। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা মানুষগুলো নিজেদের সাজিয়ে নেয়ার জন্য প্রকৃতির কাছেই দ্বারস্থ হতো। সময় সময় সে জায়গায় স্থান করে নিয়েছে নানা রকম পুঁতি । অলংকার বলতে শুধু সোনা আর দামী রতœ দিয়ে তৈরী কোনো গয়না বুঝায় না । বাঙালী নারীরা এখন ইমিটেশনের অলংকার থেকে শুরু করে প্লাষ্টিক , মাটির অলংকারও ব্যবহার করেন।
আধুনিক মহিলারা ভারী অলংকার পরার মধ্যে এখন আর স্মার্টনেস খুঁজে পায় না । তাই মাটির অলংকার আধুনিক নারীদের কাছে খুবই সমাদৃত। ১লা বৈশাখ, ১লা ফাল্গুন,বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবসসহ বিশেষ দিনগুলোতে মাটির অলংকারের কদর খুব বেশী। মাটির অলংকারের পর কাপড়ের অলংকারের ব্যবহারও বাড়ছে। সম্পূর্ণ কাপড়ের তৈরী এসব অলংকারে থাকে বাহারি এমব্রয়ডারী, নকশি কাথাঁর ফোড়সহ বিভিন্ন ধরনের স্টিচ।

কৃষক সমাজের চাষাবাদের যে হাতিয়ার সেই কৃষি যন্ত্রপাতিতেও এসেছে পরিবর্তন , আধুনিক যন্ত্রপাতির ভিড়ে চিরচেনা সেই লাঙ্গল, জোয়াল, কাঁচি, মই আর দেখা যায় না । প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে জীবন জীবিকা ও সংস্কৃতি আষ্টে পৃষ্টে বাঁধা। অথচ নানাবিধ কারণে তার ব্যত্যয় ঘটছে। ছয় এতুর পরিবর্তন ঘটেছে যেমন ধরাযাক আমাদের উল্লেখ যোগ্য এতু বর্ষার কথা । প্রকৃতি পরিবর্তনে আগের মত বর্ষা আর হয় না, হলেও রূপ নেয় সর্বগ্রাসী বন্যায় । অথচ নদী মাতৃক এই দেশে বর্ষার প্রভাব গ্রামীন তথা কৃষক সমাজকে ভিন্ন মাত্রা যোগ করত । পাল তোলা নৌকা, নাইওরির ছৈওয়ালা নৌকা, আষাঢ়ের খরস্রোতা নদী, আউশ ধানসহ চিত্র বিচিত্ররূপ পরিগ্রহ হতো ।

ধানের উফশী জাত প্রবর্তনের ফলে আমাদের স্থানীয় জাতের বিলুপ্তি ঘটতে চলেছে। তার উদাহরণ আমাদের স্থানীয় জাতের আউশ ধান। অথচ আষাঢ় এবং আউশ ধান ছিল স্বভাব কবির মানস পঠের মনোমুগ্ধকর ছবি। যৌবনবতী আষাঢ়ের পানি প্রবেশ করত ফসলি জমিতে । সাড়া পড়ে যেত আউশ ধান কাটার । কখনও কখনও অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরত। কৃষক বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথাল মাথায় ধান কাটতো আপন মনে। কৃষকের কণ্ঠে ভেসে উঠত পল্লীগীতি, মুর্শিদী, ভাটিয়ালী সহ আরও কত গানের সুর । জলজ পাখি পান কৌড়িসহ বিভিন্ন পাখির ডাক আর কৃষকের প্রাণখোলা গানের মূর্ছনা ছড়িয়ে যেত দিগন্ত জুড়ে।

খেলাধূলাতেও কম পরিবর্তন আসেনি। আমাদের প্রাচীন খেলার মধ্যে ছিল হাডুডু বা কাবাডি, দাঁড়িয়া বান্ধা, ষাড়ের লড়াই, বউচি, জব্বারের বলী খেলা, গোল্লাছুট, নৌকাবাইচ, এলাটিং বেলাটিং, ঘুড়ি ওড়ানো, কড়ি, মার্বেল, কুতকুত, লুডু, টোপাভাতি, কানা মাছি, লাঠিখেলা, নন্দাই,পুতুল খেলা, ফুল টোকা, ওপেন্টি, বাইস্কোপ, ডাংগুলি, এচিং বিচিং, লাটিম , ষোলঘুটি, ইত্যাদি। গ্রামগঞ্জ থেকে এখন এসব খেলা হারিয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও এসব খেলার প্রচলন থাকলেও নগরে এখন আর এসব খেলার প্রচলন নেই। এসবের বদলে ধীরে ধীরে প্রচলন ঘটতে শুরু করল ক্রিকেট, ফুটবল প্রভৃতি খেলা । শহরে এখন ঢুকে পড়ছে ভিডিওগেমস এবং কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ভিত্তিক নানা খেলা।

বিনোদনে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পরিবর্তন হচ্ছে গ্রামবাংলার দৃশ্যপট। অতীতে গ্রামবাংলার প্রতিটি বাড়ীতে বাড়ীতে ছিল আমোদ প্রমোদের কতই না আয়োজন। তখন বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ছিল পালাগান, যাত্রাগান, জারি সারি, পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী,মারফতি,ভাওয়াইয়া, বাউলগানের আসর। এখন সেই স্থান দখল করেছে থিয়েটার, সিনেমা, টেলিভিশন ইউটিউব সহ নানা ধরনের মোবাইল ভিত্তিক চ্যানেল , এসেছে ব্যাটারি চালিত নানা ধরনের খেলনা গাড়ি, প্লাস্টিকের পুতুল পশুপাখিসহ কত কি?

এখন আগেরমত আর কবিগানেরও খুব একটা প্রচলন নেই। পুঁথিপাঠ তেমন দেখা যায় না। বাঙালির উৎসব আনন্দেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। গ্রাম বাংলার আবহমান কাল ধরে নানারকম আনন্দ অনুষ্ঠান ও উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে বাংলার নতুন বছর। আর পহেলা বৈশাখও চৈত্র সংক্রান্তি মানেই মেলা। এই মেলাগুলো বসত সাধারণত বড় গাছতলায় গ্রামের একপ্রান্তে, নদীর ধারে। এই মেলাগুলো ছিল আমাদের লোক সংস্কৃতির নানা নিদর্শনের এক বিশাল সমাবেশ। হাতের তৈরী বিভিন্ন ধরনের আকর্ষনীয় দ্রব্য আর নানা খাবার ও নানা রকমের খেলার আয়োজন করা হত। মধ্যবিত্ত শ্রেণী গ্রাম ছেড়ে শহরে হাজির হলেও সেইসব মেলাকে ভুলে যায়নি । ফলে সেইসব মানুষের জন্য মেলা হাজির হয়েছে শহরে । তবে শহরে এসে মেলার মূল চরিত্রটি হারিয়ে গেছে অনেকটাই। এক সময় মেলায় যেমন মাটির তৈরী টেপা পুতুল স্থান পেত, সেখানে এখন জায়গা করে নিচ্ছে কম দামি প্লাষ্টিকের পুতুল, সিলভারের হাড়ি পাতিল থেকে শুরু করে ইলেকট্্রনিক জিনিষপত্র। তাই আজ আর সেখানে আপনি শখের হাড়ি,শোলার খেলনা, দারুশিল্প, পিতল শিল্প, শীতল পাটি গাজীর পট পবেন না। কালে ভদ্রে কিছু মেলাতে এসব এখন দেখা যায়।

বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ ছিল বাংলাদেশ । দূর্গাপূজা,মনসাপূজা স্বরস্বতীপূজা সহ নানা পূজা উৎসবের প্রচলন ছিল বাঙালিদের মধ্যে । মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিল ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, মহরম, আশুরা,খতনা প্রভৃতি উৎসব। আগের মত এসব উৎসব এখনো প্রচলিত , তবে উৎসবের ধরন গেছে পাল্টে। সময়ের সঙ্গে ঈদ সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। আগেকার ঈদসংস্কৃতি আর বর্তমান ঈদসংস্কৃতির মধ্যে ঢের তফাৎ । তখনকার ঈদ সংস্কৃতি বর্তমানের সঙ্গে মৌলিকভাবে ঠিক থাকলেও আনুসাঙ্গিক বহু কিছুর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও গ্রাম পর্যয়ে পৌঁছে গেছে থার্টি ফাষ্ট নাইট, ভ্যালেন্টাইন ডে, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী ইত্যাদি। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ যুগে দিবস গুলোতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি। আমাদের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে মাছ ধরার জন্য ছিল হরেক রকমের ফাঁদ । একেক মাছের স্বভাব চরিত্র আর আকারের উপর ভিত্তি করে তৈরী হতো সেসব ফাঁদ। গ্রামাঞ্চলে বর্ষাকালে বন্যার সময় লোকে মাছ ধরার ফাদ পেতে রাখত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের ফাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেগা, ডুবা ফাদঁ, দারকি, উন্টা, তেপাই, চাঁই, চান্দি বাইর, বানা, পলো চারো ডরি, ভাসাজাল, ঝাকিজাল, ধর্মজাল, ঠেলাজাল, কুচা, খাড়াজাল, আন্টা,কোকা ইত্যাদি । কিন্তু বর্তমানে ফাঁদ পেতে মাছ ধরার দিন ফুরিয়ে আসছে। খোলা জলাশয়ের স্থানও কমে আসছে। আমাদের মাছের একটা বড় অংশই এখন চাষের তাই এখন আর ফাঁদ পেতে মাছ ধরতে হয়না।
ঊাংলার গ্রামে লোকনাট্য, লোকসংগীত, লোককাহিনি, ছড়া, ধাঁধাঁ, প্রবাদ প্রবচন প্রভৃতি গদ্যে পদ্যে রচিত মৌখিক ধারার সাহিত্যেরও প্রচলন ছিল। লোক সাহিত্যের সব ধরণের উপাদান একত্র করলে এ সাহিত্য বিপুল আকার ধারন করবে । গ্রামে রূপকথার ড্রাগন নেই, আছে রাক্ষস খোক্ষস ও ভূত প্রেত্নী । কিন্তু আজ এসব বিদেশী কমিক্স আর সাইন্সফিকশনের চাপে প্রায় বিলীন। আমাদের শিশুরা এখন ডালিম কুমার আর তার পঙ্খীরাজ ঘোড়ার কথা জানে না, তারা বরং সুপারম্যান,সুপারহিরো আর স্পাইডার ম্যানের অভিযানের গল্প বলতে পরে।

অঞ্চল ভেদে বাংলদেশে প্রায় অর্ধশত প্রকার লোকসংগীতের প্রচলন ছিল। পুঁথি পাঠ , জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, মুশির্দী, মারফতি, বাউল,গম্ভীরা, কীর্তন, ঘাটু, ঝুমুর, বোলান, লেটো, গাজন,বারমাসি, ধামাইল, পটুয়া, সাপুড়ে , খেমটা প্রভূতি গান এখন আর সেভাবে শোনা যায় না। এর জন্য দায়ী প্রযুক্তি। প্রযুক্তির নানা সুবিধাই আমাদের লোকসংগীতের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংস্কৃতির উপরোক্ত অনুসঙ্গগুলি ছাড়াও অনেক অনুষঙ্গঁ আছে, যাহা পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে সংস্কৃতির এই যে পরিবর্তন আমাদের কী লাভ বা ক্ষতি?
লাভ ক্ষতি দুটোই যে হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গ্লোবালাইজেশনের কারণে আমাদের সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তনে আনন্দ যেমন আছে, বেদনাও কম নয়। আনন্দটা কী? আগেই লিখেছি, আমাদের সংস্কৃতি ছিল সেলাই ছাড়া কাপড় পরা। বাঙালিরা শাড়ি ও ধূতি পরতো । তারপর লুঙ্গির প্রচলন শুরু হলো। আমরা এখন শার্ট পেন্ট পরি। কিন্ত এগুলো তো বাঙালির পোশাক নয় তবু ও আমরা পরছি। আবার বাঙালি হাত দিয়ে ভাত খেত, এখনো খায়। তবে কোন কোন বাঙালি এখন কাটাচামচ ব্যবহার করে। বাঙালি ঢেঁকি দিয়ে ধান বানতো চালের গুড়ো করত, গরু দিয়ে ধান মাড়তো । কিন্তু এখন মেশিন দিয়ে সব করছে । আগে ঘর থেকে নারীর বের হওয়া বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে ছিল না । এখন অফিস আদালতে চাকরি করছে নারীরা, দেশ শাসন করছে নারী, এরকম বহু পরিবর্তন ঘটে গেছে বাঙালি সংস্কৃতির । তবে এগুলো ইতিবাচক পরিবর্তন, এই পরিবর্তনের ফলে বাঙালির জীবন যাপন উন্নত হচ্ছে। এই সংস্কৃতিক পরিবর্তন আমাদের আনন্দ দেয়।

কিন্তু সব পরিবর্তনে আনন্দিত হওয়ার কারন নেই। সংস্কৃতির এমন কিছু উপাদান আছে যে গুলোর পরিবর্তন ঘটলে জাতিগত সংকট সৃষ্টি হয়। যেমন বাঙালি ভাত-মাছ খায়। এখন যদি বার্গার পিৎজা খেয়ে ভাত মাছকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তবে তাতে ক্ষতির কারণ আছে। ক্ষতিটা কীভাবে? চালের তৈরী পিঠার কথাই ধরা যাক। পিঠা চাল থেকে এসেছে কারণ বাংলায় ধান হয়। ধান থেকে বাঙালি খই, মুড়ি, ভাত, চিড়া, চাল ভাজা এবং কত রকমের পিঠা বানাতো । এগুলো তৈরীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেল লাগত না। ফলে তৈলবিহীন খাবার খেলে শরীর স্বাস্থ্য ও ভাল থাকত। এগুলো বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি। বাইরের খাবার গুলোএর স্থান দখল করলে আমাদের সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে এবং সাথে সাথে অর্থনৈতিক সংকট ও তৈরী হবে। ধান উৎপাদন কারী কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। শুকনো খাবারের পরিবর্তে ব্যাপকভাবে তেলের ব্যবহারের ফলে শরীরে নানা রোগ বাঁলাই বাসা বাঁধবে।

বাঙালি তার নিজস্ব বিনোদন বাদ দিয়ে যখন বিদেশী চ্যানেল দেখে । তখন বিদেশী পণ্যের বিজ্ঞাপনটাও দেখে। যেই বিজ্ঞাপন দেখে বিদেশী পণ্যের প্রতি আসক্ত হয় ফলে দেশীয় পণ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জারি-সারি-ভাটিয়ালি গান বাদ দিয়ে যখন ব্যান্ড সংগীতে আসক্ত হয়, তখন চিরাচরিত সরল মনের ভাবুকতা উদাও হয়ে হৃদয়ে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। বাঙালির জারি-সারি-ভাটিয়ালি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুরগীতি,পল্লীগীতি, চিত্তকে প্রশান্তি দেয়, অপর পক্ষে পাশ্চাত্য প্রভাবিত ব্যান্ড সংগীত চিত্তকে অশান্ত করে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সামাজিকে,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যে অবস্থা তার ওপর দাঁড়িয়ে সংস্কৃতি তার রূপ বদলেছে সেই লোকনৃত্য, জারি-সারি, ভাওয়াইয়া, পালাগানের জায়গা দখল করেছে আধুনিক তথা পশ্চিমা তথা ভারতীয় সংস্কৃতি চর্চা। অতীতের কৃষি নির্ভর সংস্কৃতি বিলুপ্ত হতে থাকে এবং তথাকথিত আধুনিক যন্ত্রনির্ভর সংস্কৃতি চর্চা শুরু হয়। সমাজ কাঠামোতে পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে। যৌথ পরিবার প্রথা, সামাজিক বন্ধন ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। এবং একক পরিবার গড়ে উঠছে। স্নেহবোধ, আন্তরিকতা, দায়িত্ববোধ লোপ পাচ্ছে। আগে যেখানে গ্রামীন সংস্কৃতির রস আস্বাদন করে মানুষ আনন্দ উপভোগ করত আজ সেখানে জায়গা করে নিয়েছে টিভি সিরিয়াল! মোবাইল! ভার্চুয়াল দুনিয়া।

যেহেতু জীবন বহতা নদীর মতো বয়ে চলা এক নদী। এর বাঁকে- বাঁকে সৃষ্টি হয় কত আখ্যান । মন পবনের নাও ভাসিয়ে ফিরে যেতে চায় ফেলে আসা বাঁকের আখ্যানে। অবশ্য তাতে কিছু যায় আসে না । কারণ জীবন চলে জীবনের নিয়মে। আধুনিক যুগে আধুনিক জীবনযাত্রায় হয়তো পুরাতন ঐতিহ্য কিছু বিলুপ্ত হবে, আবার নতুন কিছু যুক্ত হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটছে, ঘটবে। এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের মূলধারার গতিপ্রবাহ বিনষ্ট করা, এটাকে পরিবর্তন বা বিচ্ছিন্ন করার কোন সুযোগ নেই। তাকে ধরে রাখতেই হবে। আমরা বাঙালি, আমাদের সংস্কৃতিই আমাদের ঐতিহ্য।
সাহিত্যিক মোতাহার হোসেন বলেছিলেন, ‘সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে বিচিত্র ভাবে বাঁচা।’ আমরা তাই সুন্দরভাবে বিচিত্রভাবে বাঁচতে চাই। সংস্কৃতি আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। আর গ্রামীন সংস্কৃতিই আবহমান বাংলার মূল চরিত্রের বাহক। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের চেয়ে নেতিবাচক পরিবর্তনের হার অধিক হলে তা জাতীয় পর্যায়ের বিপর্যয়। কিছু পরিবর্তকে স্বাগত জানানো যায়। কিন্তু সব পরিবর্তনকে মেনে নিলে জাতিগত সংকট যে তৈরী হবে,এতে কোন সন্দেহ নেই। সুতরাং কেবল শিল্পায়ন ও নগরায়নের স্বপ্নে বিভোর না থেকে সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি করে গ্রামীন সমাজের চলমান চরিত্র ও পরিবর্তনের স্বরূপ অনুসন্ধান ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা সাম্প্রতিক সময়ে রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। গ্রামীন সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে রক্ষার জন্য সবাইকে জোরালোভাবে এখনই এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক:  মো: কবির খান,প্রধান শিক্ষক, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়।

আরও পড়ুন:

নীতি- নৈতিকতা ও মূল্যবোধ : আমাদের জেগে ওঠার সময়


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক