বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক সৈয়দ জামিল আহমেদ। অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার পদের এই পদে সচিব মর্যাদা দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার চার মাসের মাথায় তিনি পদত্যাগ করলেন। তাকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয় তখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন আসিফ নজরুল। বর্তমানে এ মন্ত্যণালয়ের উপদেষ্টার পদে রয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্যেৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় জামিল আহমেদ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ সময় উপস্থিত দর্শক সারি থেকে কেউ কেউ জামিল আহমেদের পদত্যাগ ‘মানা হবে না’ বলে আওয়াজ তোলেন।
অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে জামিল আহমেদ পদত্যাগের কারণ হিসেবে শিল্পকলার কাজে ‘আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ’ এর অভিযোগ তুলেন।
অনুষ্ঠানে জামিল আহমেদ বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় বলেছিলাম, শিল্পকলার কাজে সচিবালয় থেকে যেন কোনো হস্তক্ষেপ না করে। আসিফ নজরুল সাহেব থাকার সময় করেননি। কিন্তু ইদানিং ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ হচ্ছে। আমি এখানে আর বিস্তারিত বললাম না।’’ এরপর নিজের পরিকল্পনা এবং তাতে সরকারের সহযোগিতা না পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি এই জন্য এটা সঠিক সময় মনে করি, আর মনে হয় ভবিষ্যতে কাজ করা সম্ভব হবে না এখানে। আমার পদত্যাগপত্র আপনাদের সামনে হস্তান্তর করছি আমাদের সচিবের কাছে।”এরপর প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে সেই পদত্যাগপত্র সচিবের কাছে হস্তান্তর করেন জামিল আহমেদ।
অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন বলেন, “আমরা এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিনি।” শিল্পকলা একাডেমির একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হয়। জামিল আহমেদ অনুষ্ঠানে শিল্পকলার সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।
এই বিষয়ে কথা বলতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক জামিল আহমেদকে গত ৯ সেপ্টেম্বর দুই বছরের জন্য শিল্পকলার মহাপরিচালক করে অন্তর্বর্তী সরকার।
দায়িত্ব পালনকালে শিল্পকলা একাডেমিতে নানা ঘটনা মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে। মব ভায়োলেন্সের হুমকির মুখে মঞ্চ নাটক চলাকালে মাঝপথে তিনি মঞ্চে উঠে নাটক বন্ধের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। বরেণ্য নাট্যজন মামুনুর রশীদকেও শিল্পকলার মঞ্চে কিছু দিন নাটক না করতে বলেছিলেন। যা নিয়ে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।
৩০ বছরের বেশি সময় ধরে জামিল আহমেদ শিক্ষকতা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সৈয়দ জামিল ১৯৭৮ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছরে তিনি ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার টেলিভিশন প্রডিউসারস ট্রেইনিংয়ে প্রথম হন। ১৯৮৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক থেকে থিয়েটার আর্টসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার নির্দেশনায় মঞ্চে এসেছে ২০টিরও বেশি নাটক।