ফাল্গুনের প্রথম দিনে উত্তরায় বসন্ত উৎসব করতে পারেনি ‘জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ’। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং মহানগর পুলিশ থেকে যথাযথ নিয়মে অনুমতি নেওয়ার পরও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুরাগ থানার মুখপাত্র পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির বাধার মুখে আয়োজকরা সেখানে উৎস করতে পারেননি।
প্রতি বছরের মতোই এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলা এবং পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের পাশাপাশি উত্তরায় উন্মুক্ত মঞ্চে এই আয়োজনটি করার কথা ছিল। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকালে চারুকলা ও বাহাদুর শাহ পার্কের উৎসব ঠিকঠাকমত হলেও বাতিল করতে হয়েছে উত্তরার আয়োজনটি।
জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ-এর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, “আমরা নিয়ম মেনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আবেদন করেছি, তারা আমাদের অনুমতিও দিয়েছে। আমরা বরাদ্দকৃত ভেন্যুর জন্য ভাড়ার টাকাও পরিশোধ করেছি। পুলিশ থেকেও অনুমতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার কারণে আজকে সেখানে অনুষ্ঠান করতে পারিনি।
মূলত ইমন রহমান ফরহাদ নামের একজনের নেতৃত্বে এই বাধা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে ইমনকে ফোন করা হলে নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুরাগ থানার মুখপাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে উত্তরার ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন উত্তরার উন্মুক্ত মঞ্চটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। তিনি বলেন, “এই উৎসব আয়োজনে উত্তরায় উনাদের যে প্রতিনিধি, তিনি আওয়ামী লীগের দোসর।’যাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলা হচ্ছে তার নাম চাইলে ইমন বলেন, “উনার নামটা জানি না।”
বাধা দেওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে ইমন দাবি করেন, আয়োজকেরা মঞ্চটির সঠিক নাম ব্যানারে ব্যবহার করছে না। তার ভাষ্য, “আমরা ৫ অগাস্টের পর এই মঞ্চটিকে ‘মীর মুগ্ধ মঞ্চ’ নাম দিয়েছি। কিন্তু বসন্ত উৎসবের লোকজন সব জায়গায় এটিকে উন্মুক্ত মঞ্চ বলে পরিচয় দিচ্ছে। সাত মাস ধরে আমরাই মঞ্চটির রক্ষণাবেক্ষণ করছি।”
সিটি করপোরেশন থেকে মঞ্চটির নাম কি ‘মীর মুগ্ধ মঞ্চ করা হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা সিটি করপোরেশনে বলেছি। একজন কর্মকর্তা এসে জায়গাটা দেখে গেছেন। এটা করা হবে।”
সিটি করপোরেশন থেকে বসন্ত উৎসব কমিটিকে যে অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণি সংলগ্ন উন্মুক্ত মঞ্চ বসন্ত উৎসবের জন্য বরাদ্দ দেয়া হলো’। আপনি মঞ্চটির কোন দায়িত্বে আছেন জানতে চাইলে ইমন বলেন, “আমি না, আমরা এখন মঞ্চটির রক্ষণাবেক্ষণ করছি।”
জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান ইমন।
এ বিষয়ে জানতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি। জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানতে পারিনি। বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখব।”
আয়োজকরা জানিয়েছেন, তারা রাতেও বাধাদানকারীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। আয়োজকদের মধ্যে একজনকে আওয়ামী লীগের দোসর বলার পর তাকে আয়োজনের সংশ্লিষ্টতা থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও শেষপর্যন্ত উৎসবটি করা সম্ভব হয়নি।